১৯৬ ত্রাণকর্মী হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনিদের জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে : গুতেরেস

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘শুধুই মৃত্যু ও ধ্বংস’ নিয়ে এসেছে। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার ছয় মাস পর শুক্রবার একটি বক্তৃতায় জাতিসংঘের প্রধান বলেছিলেন, ‘কোনো কিছুই ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তিকে সমর্থন করতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাক্ষুণœ হয়েছে।’ গুতেরেস বলেন, ‘১০ দিন আগে রাফাহ ক্রসিং পরিদর্শনের সময়, আমি প্রবীণ মানবতাবাদীদের সাথে দেখা করেছি, যারা আমাকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে গাজার এমন সঙ্কট এবং দুর্ভোগ তারা কখনও দেখেননি।’ ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন সাহায্যের দরজা বন্ধ করা হয়, তখন অনাহারের দরজা খুলে যায়। অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা -১০ লাখেরও বেশি মানুষ-বিপর্যয়করক্ষুধার মুখোমুখি। গাজার শিশুরা আজ খাদ্য ও পানির অভাবে মারা যাচ্ছে।’ গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন মোট ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী। এই ত্রাণকর্মীদের নিহতের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সম্প্রতি গাজার দেইর আল বালাহতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) গাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে নিহত হন ৭ জন ত্রাণকর্মী। এই ত্রাণকর্মীদের মধ্যে একজন অস্ট্রেলিয়া, তিন জন ব্রিটেন, একজন যুক্তরাষ্ট্রের, একজন পোল্যান্ডের এবং একজন ফিলিস্তিনের নাগরিক। ইসরাইল প্রথমে এ ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় এবং দুই জন সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে। শুক্রবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এ সংক্রান্ত বিবৃতি জারির কয়েক ঘণ্টা পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘ইসরাইলের সরকার তাদের ভুল স্বীকার করেছে। এটা ইতিবাচক, তবে কে ভুল করেছে— তা মূল ব্যাপার নয়। মূল ব্যাপারটি হলো (ইসরাইলি বাহিনীর) রণকৌশল এবং পদ্ধতি— যে কারণে এ ধরনের ঘটনা গাজায় প্রতিদিন বার বার ঘটছে।’ ‘গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী। আমরা প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। আমরা জানতে চাই— কেন তাদের হত্যা করা হয়েছে।’ গত ৭ অক্টোবর গাজার ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলের ভূখ-ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় ১ হাজার হামাস যোদ্ধা। তারপর সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে, পাশপাশি জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সেই অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৫ হাজার। সেই সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর বোমায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে গত কয়েক মাস ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে; কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে না। এদিকে গাজা উপত্যকায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে ত্রাণ সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে উপত্যকায় বসবাসরত ২২ লাখ ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছেন। খাবারের অভাবে মানুষের মৃত্যুও শুরু হয়েছে সেখানে।


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রথম যৌথ দলিল অনুমোদন করবে ইসলামী দেশগুলো
ভারতকে জবাব দিতে ইমরান খানের মুক্তি চায় পিটিআই
গাজায় ইহুদি হামলায় শহীদ আরো ৭১
শিয়ায় সেরার তালিকায় ইরানের ৮৫ বিশ্ববিদ্যালয়
আরও
X
  

আরও পড়ুন

‘গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে’ বাংলাদেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া

‘গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে’ বাংলাদেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া

শ্রীপুরে এসএসসি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক দুই

শ্রীপুরে এসএসসি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক দুই

কুয়াকাটায় পর্যটককে মারধর করে ৪০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে যুবদল সভাপতিসহ গ্রেফতার -৩

কুয়াকাটায় পর্যটককে মারধর করে ৪০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে যুবদল সভাপতিসহ গ্রেফতার -৩

সাভারে মেট্রো রেলের ডিপোতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

সাভারে মেট্রো রেলের ডিপোতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

পঞ্চগড়ে হাফেজা ছাত্রীদের সংবর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠান

পঞ্চগড়ে হাফেজা ছাত্রীদের সংবর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠান

ওরসে অনৈতিক-অসামাজিকতা বন্ধে সিলেট পুলিশ প্রশাসনে স্মারকলিপি

ওরসে অনৈতিক-অসামাজিকতা বন্ধে সিলেট পুলিশ প্রশাসনে স্মারকলিপি

ফরিদপুরে পদ্মার বিশ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি

ফরিদপুরে পদ্মার বিশ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে: আসিফ নজরুল

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে: আসিফ নজরুল

ঈদুল আজহায় যে শর্তে ১০ দিনের ছুটি, জানালেন প্রেসসচিব

ঈদুল আজহায় যে শর্তে ১০ দিনের ছুটি, জানালেন প্রেসসচিব

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন খালেদা জিয়া

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন খালেদা জিয়া

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা একাডেমিক শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা একাডেমিক শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

সাকিব-তামিমকে চেনেন নেইমার!

সাকিব-তামিমকে চেনেন নেইমার!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুট্টা চাষে চাষীদের সাফল্য ১৪০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুট্টা চাষে চাষীদের সাফল্য ১৪০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

একইদিনে চারদেশে হামলা ইহুদীদের

একইদিনে চারদেশে হামলা ইহুদীদের

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু

বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানের সম্পদ জব্দের নির্দেশ, ৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানের সম্পদ জব্দের নির্দেশ, ৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি