ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পাকিস্তানের জেনারেলদের চটানোর ফল

ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদন্ড

Daily Inqilab দ্য ইকোনোমিস্ট

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

৩১ জানুয়ারী পাকিস্তানের একটি আদালত দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার দোষী সাব্যস্ত করে, তাকে তার মেয়াদে প্রাপ্ত উপহারগুলি বেআইনিভাবে বিক্রি করার দায়ে ১৪ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। কিন্তু এই রায়ের উপসংহারটি হঠাৎ এসেছে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল বিশৃঙ্খল। শনিবার আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বদলে দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করেন। সোমবার রাত নাগাদ আসামীর বিদ্বেষপ‚র্ণ আপত্তি দেখিয়ে তারা মামলা গুটিয়ে ফেলে। এরপর, মঙ্গলবার সকালে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

ইমরান খানকে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদ‚তের কাছ থেকে ইসলামাবাদে সরকারের কাছে পাঠানো একটি গোপনীয় ক‚টনৈতিক সংবাদের বিষয়বস্তু প্রকাশ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং দেশটির প্রশাসনিক গোপনীয়তা আইনের অধীনে দশ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। তাড়াহুড়োর রায়টি পাকিস্তানের জেনারেলদের (যারা কার্যত সরকার পরিচালনা করেন) পক্ষ থেকে ভোটারদের প্রতি এই বার্তাকে শক্তিশালী করে, ‘৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনে খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কে ভোট দেয়ার প্রয়াস করবেন না।’

ইমরান খান পাকিস্তানের জেনারেলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে, তারা আমেরিকানদের সাথে মিলিত হয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এটি জেনারেলদের ক্ষুব্ধ করেছে। ফলে, পাকিস্তানিরা যাতে তাকে ক্ষমতায় ফেরাতে প্রলুব্ধ না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ফায়দা হতে পারে খানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং আরেকজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের, যিনি সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যিনি ব্যাপক জনসমর্থন ধরে রেখেছেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে তার অপসারণকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা তৈরি এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সহায়তায় একটি চক্রান্ত বলে দাবি করেছিলেন। তত্ত¡টিকে সমর্থন করার জন্য তিনি ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদ‚তের একটি বার্তা উদ্ধৃত করেন। আদালত তাকে সেই তথ্য অপব্যবহার এবং অপপ্রচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং একই সাজা পেয়েছেন।

খানের আইনজীবী আদালতের রায়কে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। আদতে, এই রায়ের উদ্দেশ্য হল আগামী সপ্তাহের নির্বাচনের আগে খান ও পিটিআইয়ের যে সামান্য রাজনৈতিক সুযোগ ছিল, তা দ‚র করা। আগস্টে পৃথক দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের সাজা পাওয়ার পর খানকে ইতিমধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পিটিআইয়ের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দলের সমাবেশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রচার মাধ্যমগুলি পিটিআইয়ের কার্যকলাপ বা তার নেতার ভাগ্য নিয়ে সংবাদের ওপর একটি অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে।

সবচেয়ে ক্ষতিকরভাবে, সুপ্রিম কোর্ট পিটিআই এর নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নিয়েছে, যা ছিল একটি ক্রিকেট ব্যাট এবং খানের বিখ্যাত ক্রীড়া অতীতের প্রতি একটি সম্মান। কম সাক্ষরতার মাত্রা এবং ব্যালট পেপারের ভিড়ের প্রেক্ষিতে, এই প্রতীকগুলি ভোটারদের দলীয় প্রার্থীদের সনাক্ত করতে সহায়তা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ। পিটিআই প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ বিকল্প প্রতীকগুলির মধ্যে রয়েছে বাটি, জুতা এবং চিমটার জোড়া যা স্থানীয় সংস্কৃতিতে অপমানজনক বলে বিবেচিত হয়।

ইমরান খান এবং তার দলের প্রতি পাকিস্তানের জেনারেলদের ক্ষোভ নিয়ে শরীফ চতুর্থ মেয়াদের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। গত বছর তিনি সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন এবং লন্ডনে চার বছর নির্বাসনের পর পাকিস্তানে ফিরে আসেন। তারপর থেকে তিনি একটি সংযত গতিবিধি অবলম্বন কুেরছেন, তার শাসনামলের অর্থনৈতিক সাফল্যের উপর জোর দিয়েছেন এবং সেনাবাহিনীকে সমালোচনা এড়িয়ে গেছেন, যার জন্য তিনি কুখ্যাত ছিলেন। শনিবার উন্মোচিত একটি নির্বাচনী ইশতেহারে তার পাকিস্তান মুসলিম লীগ ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুদ্রাস্ফীতিকে একক অঙ্কে (ডিসেম্বরে এটি ৩০শতাংশে দাঁড়িয়েছে) নামিয়ে আনার এবং বিদ্যুতের ঊর্ধ্বগতি হ্রাস করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।

পাকিস্তানে একটি অর্থনৈতিক পরিবর্তনের চরম প্রয়োজন। তবে, শরীফ যে তা দিতে সক্ষম হবেন তা স্পষ্ট নয়। যদিও তিনি আপাতত একজন নমনীয় ব্যক্তিত্ব, কিন্তু কার্যালয়ে দ্রæত তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের আধিপত্যপ‚র্ণ উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হতে পারেন, যিনি অগাস্ট মাস থেকে একটি নির্বাচিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দেশ শাসন করছেন।

রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুহেল ওয়ারাইখ বলেছেন, ‹রাষ্ট্র ও অর্থনীতির এতটা গভীর সঙ্কট রয়েছে, আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে জেনারেল এবং নওয়াজ শরীফ সহাবস্থান করতে পারবেন। হতাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হল, যে উভয় পক্ষ তাই করবে, যা তারা সবসময় করে এসেছে। এবং বরাবরের মতোই পরাজয় ঘটবে পাকিস্তানি ভোটারদের।’


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে ভিসা দেওয়ার দাবি হেফাজতের নায়েবে আমিরের
ইসরাইলকে স্বীকৃতি নয়, ফিলিস্তিনকে সহায়তা দেবে মালয়েশিয়া
কারাগারেই বসেই কোরআনের হাফেজ হলেন ১৩ হাজার কারাবন্দি
রাসূল (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারতে নতুন নির্দেশনা
ইসরাইল গাজায় মানবিক সাহায্য অবরোধের আইন লংঘন করেনি : যুক্তরাষ্ট্র
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান