স্বপ্নবাজ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
আহমদ সবসময় ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে।ভবিষ্যতে সে কী হবে?কী করবে? এসব ভাবতে ভাবতে একসময় আহমদ ঘুমিয়ে পড়ে। স্বপ্নে দেখতে পেল,সে কোটিপতি হয়ে গেছে।তার মনের আশা,টাকা-পয়সা হলে গরিব অসহায় মানুষদের সেবা করবে।তার একটিই লক্ষ্য দেশের দারিদ্রতা দূর করবে।
আহমদ স্বপ্নের মধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালের বিছনায় পড়ে থাকা রুগ্ন রোগীদের চিকিৎসার জন্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে থাকে এবং বিভিন্ন এলাকায় গরিব অসহায় মানুষদেরও অর্থ দান করে।বেকার লোকদের জন্যে বিভিন্ন ধরনের কাজ শেখার উদ্দেশ্যে কর্মশালা’ নামে একটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে।কাজ শেখার শেষে ঐসব লোকদের বিদেশে কাজ করার ব্যবস্থা করে দিবে। আর যারা উচ্চ শিক্ষিত বেকার,তাদের কাজ হবে বিভিন্ন জিনিস বা বিষয় নিয়ে গবেষণা করা।তারা এমন কিছু আবিষ্কার করবে,যা দেখে বিশ্ববাসী কল্পনাও করতে পারবে না।
একপর্যায় দেশের আয় বেড়ে যেতে থাকে। তাদের গবেষণার ফলে,দূর হয়েগেল দেশের দারিদ্রতা! কেউ কাউকে দান করার মতো কোনো লোকও খুঁজে পাচ্ছে না।
স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে সে আবার স্বপ্ন দেখতে থাকে।এবার আহমদের ইচ্ছে হলো,বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর ধনী হবে। জুয়া খেলা ছাড়া বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর ধনী হওয়া সম্ভব নয়। এসব ভাবার পর আহমদ বিভিন্ন জুয়া খেলা নিয়ে গবেষণা করতে থাকে। অবশেষে আহমদ বিদেশে জুয়া খেলতে চলে গেল।বস্তা ভর্তি ডলার জিতে যায়। আহমদ বিমান দিয়ে বিদেশ থেকে আসার পথে বিমানটি সাগরে পড়ে,ডুবে গেলে আহমদ স্বপ্ন থেকে ফিরে এসে দেখে, দুনিয়াতে সে বেঁচে আছে কি না? হাতে চিমটি কেটে দেখল হ্যাঁ, বেঁচে আছে। জুয়া খেলা মহাপাপ তা সে জানত না।
আহমদ ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে রোডের নিকট দোকানের দিকে এলো, দেখতে পেল,মাত্র এক লাখ টাকায় কোরিয়ায় যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি। মোবাইল নম্বর উঠিয়ে কল দিয়ে এবং বিস্তারিত জানল। অতঃপর কোরিয়ান ভাষা শেখার জন্যে সোনারং গ্রামে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলো। শিক্ষকের নাম সুমন। তিনি খুব রসিক।তিনি গায়কও বটে।তার বয়স হবে পঁয়ত্রিশ কী চল্লিশ, এখন পর্যন্ত বিয়ে করেন নি। কোরিয়ায় দশ বছর ছিলেন।এখন স্বদেশে এসে, কোরিয়ান ভাষা শেখানোর জন্যে কোচিং সেন্টার দিয়েছেন। তার মাথায় তেমন চুল নেই,নারীদের খুব ঘৃণা করেন!ছাত্রগণ সুমন স্যারের বন্ধুর মতো হয়ে গেলেন,সবধরনের কথা-বার্তা শেয়ার করেন।আহমদ এসবের প্রতি কান না দিয়ে ধুমছে পড়ছে।তিন দিনের মধ্যে রিডিং শিখে ফেলেছে। আহমদ মোবাইলে কোরিয়ান ভাষা শেখার জন্যে,ভিডিও ডাউনলোট করে সবসময় ভিডিও থেকে শিখতে থাকে। এমনকি টয়লেটে গেলেও!
কোরিয়ার সার্কুলার ছেড়েছে। নির্দিষ্ট দিনে ঢাকায় যাচ্ছে,ঢাকার বিভাগের যে কোনো ব্রাঞ্চ ব্যাংকের পে-অর্ডার করার জন্যে। তারা সবাই ফকিরাপুল ব্যাংকেরদিকে এলো,অনেক সিরিয়াল। অনেকেই আবার অন্য ব্যাংকে চলে গেল। অন্যান্য ব্যাংকে একই অবস্থা! অতি কষ্টে পে-অর্ডার করে। পরের দিন রেজিস্ট্রেশন করল। চারদিন পর রেজাল্ট দিল, সুমন স্যারের ছাত্রদের মধ্যে চারজন লটারি পেয়েছে, সে পায় নেই।সুমন স্যারের অজান্তে দুজন ছাত্র ঢাকার একবড় স্যারের সাথে কন্টাক্ট করেছে।লটারি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে,তিন লাখ টাকা দিতে হবে।পাশ করে দিবে,আরও পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে।এসব কথা শুনে সুমন স্যারে গালাগালি করলেন!কেননা,ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।আর আহমদ রেজাল্ট চেক না করেই শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতেছে,লটারি পেয়েছে,পরীক্ষাও পাশ করেছে।অবশেষে ভিসা বের হলো।বিমানের টিকেটও সংগ্রহ করল।আহমদ মাইক্রোবাসে চড়ে বিমান বন্দরে যাচ্ছে।মাইক্রোবাসটি সেখানে আসতেই এক্সিডেন্ট হলো।
আহমদ স্বপ্ন থেকে ফিরে এসে দেখে,আহমদ আহত হয়েছে কি না?নিজের শরীরের দিকে চেয়ে দেখল,নাহ্!কিছু হয়নি।
অতঃপর আহমদ রেজাল্ট চেক করল,কপালে আর সুখ সইল না।পরবর্তীতে আবার ধরল। রেজাল্টের পূর্বে আবার স্বপ্ন দেখতে লাগল। লটারি পেয়েছে,পরীক্ষায় পাশও করেছে। এবার কোরিয়ায় চলে গেল।কোরিয়া থেকে এসে,এক মডেল কন্যা বিয়ে করল।মডেল কন্যা ড্যান্স ছাড়া কিছুই বুঝে না।সবসময় নেচে নেচে কথা বলে।গভীর রাত্রেও ঘুম থেকে উঠে নাচে। মডেল কন্যা, আহমদের ডিস্টার্ব হয়ে দাঁড়াল, আহমদ অতি দুঃখে আত্মহত্যা করল! মডেল কন্যা খুশিতে নাচতে থাকে!আহমদ স্বপ্ন থেকে ফিরে এসে দেখল,আহমদ বেঁচে আছে কিনা?হাতে চিমটি কেটে দেখল, হ্যাঁ, এবারও সে বেঁচে আছে। রেজাল্ট চেক করল, এবারও হলো না।
পাঁচ বছর পর একই অবস্থা!আহমদ লটারি পেল না।মার্কেটের দিকে আহমদের সাথে,সুমন স্যারের দেখা।সুমন স্যারের সাথে এক মেয়েকে দেখে বলল-
:আপনার মেয়ে নাকি?
সুমন স্যার রাগান্বিত হয়ে বললেন-
:আমার মেয়ে হবে ক্যারে? আমার বউ!
:আপনে না,মেয়েদের খুব ঘৃণা করেন! বিয়া করলেন কেন স্যার?
:শেষ বয়সে ঠিক থাকতে পারলাম না,তাই বিয়েটা করে ফেললাম।
:ফেলার দরকার নাই,আপনার বউটা আমাকে দিয়ে দিন।আমার পছন্দ হয়েছে।
:হারামজাতা কী বলিস!
এ বলে সুমন স্যার,আহমদকে দৌঁড়ানি দিতে থাকে,হাতে একটা লাঠি নিয়ে।আহমদ দৌঁড় দিতে দিতে মনে মনে বলছে-
:বুড়া বয়সে এত সুন্দর মাইয়া বিয়ে করল আর আমি বিয়ে করব কবে?সুমন স্যারের বউটা আমার হতো।গোপনে নম্বরটা সংগ্রহ করতে লাগবে।
আহমদ এক নিরিবিলি স্থানে বসল আবার স্বপ্নে ডুব দিল।সুমন স্যারের বউয়ের সাথে আহমদ সম্পর্ক করতে চেষ্টা করতে লাগল।অবশেষে সম্পর্ক হলো।আহমদের সাথে সুমন স্যারের নিজের বউকে দেখে মাথা গরম হয়ে যায়! সুমন স্যার একটা বাঁশ এনে আহমদের মাথায় বাড়ি মারলেন! আহমদ স্বপ্ন থেকে ফিরে এসে,হাত দিয়ে দেখল মাথা কিছু হয়েছে কি না? আহমদ নিজেই নিজেকে বলল-
:নাহ্! মাথা কিছু হয়নি। আসলে টাকাই সব। টাকা থাকলে সুমন স্যারের বউর মতো কত বউ পাব! কিন্তু টাকা পাব কোথায়?
তারপর আহমদ অনলাইনে জুয়া খেলার খোঁজ পেল। অনলাইনে জুয়া খেলতে থাকে, খেলতে খেলতে আহমদ ফতুর!বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে টাকা ধার করে,আবার খেলল।
একপর্যায় আহমদ স্বপ্ন দেখে যে,অনলাইনে জুয়া খেলে অনেক টাকার মালিক হয়েছে।তারপর একসুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করল।ভালোই সুখে দিন কাটাচ্ছিল।একপর্যায় জুয়া খেলায় হারতে হারতে টাকা-পয়সা সব শেষ হয়ে যায়,এমনকি জায়গা-সম্পত্তিও!আহমদের বউ,আহমদের একবন্ধুর সাথে ভেগে যায়।আহমদের মাথা নষ্ট!এভাবেই আহমদের স্বপ্নে স্বপ্নে রাত কেটে যায়।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম