নিতুর বিয়ে
০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
মতি মিয়া সারাদিন অফিস শেষে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরতেই নিয়মমতো দুজন মানুষ ছুটে আসছে। এক. স্ত্রী রোজিনা দুই. তার মা সালেহা বেগম। দিন যতো গড়াচ্ছে বিষয়টি ততোই ভয়ংকর রুপ নিচ্ছে। আগে দুজন আগপাছ করে আসলেও ইদানিং আসছে একসাথে। দাবানল ধেয়ে আসার মতো। একজন ক্রুজ মিসাইল হলে অন্যজন ব্যালাস্টিক মিসাইল। এই শহরে তার অন্যকোন বাড়ি থাকলে তিনি সেখানে গিয়ে উঠতে পারতেন। সেটা যেহেতু নেই এজন্য দ্বিতীয় পরিকল্পনা বাড়ির সামনে সুরক্ষিত বাঙ্কার খনন। কলিং বেল টিপবেন, একসাথে ছুটে আসবে মানুষ রুপি দুটি অগ্নি গোলা। মতি মিয়া টুপ করে বাঙ্কারের ভেতর ঢুকে পড়বেন। বিস্ফোরক শব্দের ইতি টেনে তারা স্ব স্ব অবস্থানে ফেরত গেলেই তিনি ঘরে ঢুকবেন। এটা সময় সাপেক্ষ, ব্যায়বহুল হবার কারণে নিতান্ত সহজ সরল মতি মিয়াকে প্রতিদিন নির্মম এক গৃহযুদ্ধের মারপ্যাঁচ ঘিরে ধরছে। ঘরে ঢুকতেই মা ছুটে এসে বলবেন, প্রায়ই তো পেপারে আসছে ছেলের হাতে মা খুন। এগুলো কেন হয়! তোর বউয়ের মতো দজ্জাল মহিলার কারণে।
সাথে সাথে রোজিনা চিতকার করে উঠবে, ‘কী আমি দজ্জাল মহিলা! -শুধু দজ্জাল না ডাইনি, রাক্ষসী, পেতœী, মানুষ খেকো...
-তোমার মা কে সামলাও? আমার প্রতিশোধ কিন্তু বিপর্যয় ঢেকে আনবে।
অধিকাংশ দিন ঘটনা গুলো সামাল দেয় রিয়াজ। মতি মিয়ার বড় ছেলে হিসাবে আপাতত তার ঘাড়ের ওপর এ গুরু দায়িত্ব চেপে বসেছে। তারচেয়ে বড় বিষয়, সামনে তার বিয়ে। নিতুর সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা সম্পর্ক বিয়ের মাধ্যমে পূর্নতা পাবে। পারিবারিক অবস্থা স্থিতিশীল না হলে মেয়ে পক্ষ এ বিয়েতে আপত্তি তুলবে। দেখাদেখি পর্বে নিতুর বাবার এক প্রশ্নে প্রায় প্যাচ লেগে গিয়েছিল।
-ছেলে কী করে?
-এডমিন।
-কোম্পানি না সরকারি প্রতিষ্ঠান?
-একটা ফেসবুক গ্রুপের।
শুনেই নিতুর বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই রকম একটা ছেলের সাথে দেব মেয়ের বিয়ে! হতেই পারে না।
নিতুর বাবার মুখ সিটকানো দেখে মতি মিয়া কেওক্রাডংয়ের মতো স্থির থাকলেও রিয়াজের মা রোজিনা বেগম জ্বলে ওঠেন, ‘ইস হতেই পারে না! ছুঁচোর মতো মুখ করে যেভাবে বলছেন তাতে মনে হচ্ছে দুনিয়াতে একটাই মাত্র মেয়ে আছে......
-কী বললেন?
-ছুঁচো বলেছি। গায়ে বিশ্রী কটু গন্ধ।
-আমি ছুঁচো?
-পুরোপুরি নিশ্চিত হতে গায়ের গন্ধ শুকে দেখতে হবে।
নিতুর বাবা মাঝারি ধরনের একটা লাফ দিয়ে তার সাথী দের নিয়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বেরিয়ে যান।
ঘটনার পর যা করার নিতুই করেছিল। অর্ধেক ঘুমির বড়ি খেয়ে মুখে ফেনা তুলে চিতকার। তারপর চোখ বন্ধ করে নিথর। বাবা হয়রান পেরেশান হয়ে নিতুকে ক্লিনিকে নিয়ে যান। মুহুর্তে ডাক্তার, নার্স ছুটে আসে।
-কী হয়েছে?
-বিয়ে হবার কথা ছিল।
-বিয়ে তো ভালো কথা। তা এ মেয়ের মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে কেন?
নিতুর বাবা মিনমিন করে বলেন, আমি বিয়ে ভেঙে দিয়েছি বলে.....
ডাক্তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুইসাইড কেস! বেচে আছে না মরে গেছে কে জানে? দ্রুত ভেতরে নাও। ওয়াস করতে হবে।
নিতু কে ভেতরে নেওয়া হয়। কাচের ঘরে একগাদা মেশিন। ডাক্তার সাহেব একটু ঝুকে নিতুর গলার ভেতর পাইপ ঢোকানোর সময় নিতু ফিসফিস করে বলে, আপনি কী পাগল হয়েছেন?
ইলেক্ট্রিক সর্টে মানুষ যেমন ছিটকে যায় ডাক্তার সাহেব তেমনি ছিটকে যান। পাশে থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পাইপে জড়িয়ে ফ্লোরে আছড়ে পড়েন। সিলিন্ডার পড়ার বিকট শব্দ, সেটা তার গায়ে পড়লে নির্ঘাত মারা পড়তেন এসব ভাবনায় আসেনা। তিনি কেবলই ভাবেন, বিষ খেয়ে মরা মানুষ ভুতপ্রেত হয়। তার সামনে একটা পেতœী মেয়ে। মরে গিয়ে কথা বলে! ভুত পেতœী নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ভাল না। কোন রকম দাঁড়িয়ে পড়িমরি করে বেরিয়ে যান। ভেতরে থাকা দুজন নার্স ডাক্তার সাহেবের চলে যাওয়া পথের দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ডাক্তার চলে যাওয়াতে চিকিৎসার দায়িত্ব পড়েছে তাদের ঘাড়ে। আর যাই হোক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া মানুষ ফেলে চলে যাওয়া অমানবিক।
তারা নিতুর দিকে চোখ ঘুরাতেই দেখে দেখে, মেয়েটা উঠে বসেছে। এবার নার্স দ্বয়ের মুখ শুকিয়ে আসে। বিষ খেয়ে মুখে ফেনা তোলা অচেতন রুগী উঠে বসেছে! দৌড়ে বেরিয়ে যাবার আগেই কথা বলে নিতু, আপনারা ভয় পাবেন না। আত্মহত্যা মহা অন্যায়। সে কাজ আমি করতে যাবো কেন? তাছাড়া সামনে আমার বিয়ে। আমি রিয়াজ কে চাই।
প্রবীণ নার্স তো তো করে বলেন, আপনার নাম কী শাবনুর?
-না, আমার নাম নিতু। আপনারা আমার একটা উপকার করুন প্লিজ।
-বলুন, কী উপকার?
-আমার বাবাকে গিয়ে বলবেন মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে। সে রিয়াজ কে দেখতে চায়।
নিতুর পরিচ্ছন্ন কথায় নার্স দুজনের ভয় দূর হয়।
বাইরে অপেক্ষমাণ উদ্বিগ্ন বাবা-মা। নিতুর ভাই ফরিদ ও আছে, অবশ্য ফরিদের মুখে শোকতাপের কোন চিহ্ন নেই। নিতু মরে যাক না বেচে থাকুক তাতে তার কিচ্ছু যায় আসেনা টাইপ ভাব। এর ভেতর একজন নার্স এসে বলে, রিয়াজ কে?
রিয়াজ শুনেই নিতুর বাবার মেজাজ গরম হয়, রিয়াজ দিয়ে কী হবে?
নার্স আবার বলে, রিয়াজ কে?
-রিয়াজ হলো এডমিন। ফেসবুক গ্রুপের এডমিন।
-যে মিন ই হোক তাকে দরকার। অনেক চেষ্টার পর মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে। সে রিয়াজ রিয়াজ করে কাঁদছে। এখন কান্নাকাটি করলে তাকে বাচানোই মুশকিল।
রিয়াজ ও তার পরিবারের লোকদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে রিয়াজ ও তার বাবা-মা। ক্লিনিকেই ঠিক হয় বিয়ের দিন তারিখ।
বাড়ি ফেরার পর থেকে নিতুর খুশির সীমা নেই। অবশ্য তার ভাই ফরিদের মেজাজ খারাপ। প্রতিদিন বাবার হম্বিতম্বি সহ্য করতে হচ্ছে। বিয়ের বিরাট আয়োজন। ঘানি টানতে হচ্ছে ফরিদের। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এদিক ওদিক ছুটতে হচ্ছে। শরৎ, হেমন্ত না বর্ষা বোঝা যাচ্ছে না। দুদিন পরপর বৃষ্টি। বৃষ্টির ধরনও বর্ষা কালের মত। বৃষ্টি হলে গরম কমছে, থামলে হু হু করে বাড়ছে। রাস্তা ঘাটের অবস্থা জগাখিচুড়ি। আজ মিতুর বিয়ে। কয়েকদিন হলো নিতু সারাক্ষণ গুনগুন করে। যদিও তার গানের গলা খুব একটা ভালো নয়। চিৎকার করে গাইলে শেয়ালের উৎপাত বেড়ে যেতে পারে। ফরিদ কড়া মেজাজে ধমকায়, তুই আর কখনো বিড়বিড় করবি না।
-কেন?
-অসহ্য লাগে। তোর গান শুনে গরম বৃষ্টি উপেক্ষা করে শেয়াল, বিড়াল হাজির হয়ে যেতে পারে।
নিতু মুখে হাসি নিয়ে সুর করে বলে, আজ আমার বিয়ে। আহা এই সময়ে বৃষ্টি, বৃষ্টিরে তোর নাম কী?
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক