২৪’-এর গণঅভ্যুত্থান: প্রসঙ্গ নজরুলীয় চেতনা
২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ এএম
আমাদের জাতীয় চেতনা জুড়ে আছেন একজন কবি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালি জাতির জীবনে বিপ্লব ও দ্রোহের কবি তিনি। নীতি ও আদর্শে এবং বিদ্রোহ ও বিপ্লবে তিনি যেমন অটল হিমালয়, স্বপ্নচারণেও তেমনি তিনি গগণচুম্বী। ব্রিটিশ দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে মুুক্তির গান শোনাতেই যেন কাজী নজরুল ইসলামের আগমণ ঘটেছিল এই উপমহাদেশে। তাই তো তাঁর সাহিত্য-চেতনা জুড়ে বারবার ধ্বনিত হয়েছে ভারতের স্বাধীনতার মন্ত্র। তাঁর সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকায় রাজনৈতিক নেতা না হয়েও পৃথিবীর ইতিহাসে কবি হিসেবে তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা:আমরা জানি সোজা কথা- পূর্ণ স্বাধীন করব দেশ,এই দুলালুম বিজয় নিশান, মরতে আছি মরব শেষ। [বিদ্রোহীর বাণী]শুধু স্বাধীনতাই নয়, তাঁর সাহত্যি-সাধনার মূল চেতনাই ছিল মানবিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব। ধর্ম ও জাতিগত সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-বিবাদ, শোষণ-বঞ্চনা, ভ-ামী ও সকল প্রকার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল খড়গহস্ত - যেথায় মিথ্যা ভ-ামী ভাই করব সেথায় বিদ্রোহ,ধামা-ধরা! জামা-ধরা! মরণভীতু চুপ রহো। [বিদ্রোহীর বাণী] জগতের সকল মজলুমের কণ্ঠস্বর যেন তিনি। সকলের ব্যথা বাজে তাঁর বিশাল বক্ষে। তাই বুঝি তাঁর অভিমান -বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার গভীর অভিমান।তোমার ধরার দুঃখ কেনআমায় নিত্য কাঁদায় হেন?বিশৃঙ্খল সৃষ্টি তোমার, তাই তো কাঁদে আমার প্রাণ!বিদ্রোহ মোর থামবে কিসে? ভূবন ভরা দুঃখ শোক, আমার কাছে শান্তি চায়লুটিয়ে পড়ে আমার গায়শান্ত হব, আগে তারা সর্বদুঃখ-মুক্ত হোক! [চিরবিদ্রোহী]পৃথিবীর যেখানেই অন্যায় অবিচার, শোষণ ও নির্যাতন, সেখানেই প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে নজরুল যেন অপরিহার্য এক কাব্যসাধক- আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতুএই ¯্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু। [ধূমকেতু]
২০২৪ সালে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের অন্যায়, অবিচার আর দুঃশাসনের বিপরীতে ছাত্রজনতার যে অভ্যুত্থান হলো, সেখানেও নজরুল হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী প্রেরণার উৎস। ধর্ম-বর্ণ, মত-পথ ও ব্যবসা-পেশা ব্যতিরেকে সকল প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে নজরুলের কবিতা ও গান। ভার্চুয়াল মাধ্যমে, পোস্টারে, প্লা-কার্ডে, দেয়াল লিখনে ও গ্রাফিতিতে নজরুলের প্রতিবাদী ও প্রতিরোধী বাণীগুলো যেন ইট-পাথরকেও জাগিয়ে তোলে। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ। সর্বাত্মক আন্দোলনের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী সরকারের। জনতার আক্রোশের মুখে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সপরিবারে ও সদলবলে পালিয়ে যায় স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সূচিত হয় নজিরবিহীন এক গণঅভ্যুত্থানের।সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবরসমূহ বিশ্লেষণ করলে ‘২৪এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট হিসেবে যে চিত্র উঠে আসে তার সংক্ষেপ হলো:১। দীর্ঘ পনের বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশের মানুষের উপরে সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছিল।২। ভোট ডাকাতি, গণতন্ত্র হত্যা, ভিন্ন মতের লোকদের উপরে দমন পীড়ন, জেল জুলুম, জুডিশিয়াল কিলিং ও উন্নয়নের নামে দখল, অর্থ লোপাট ও শোষণ, অর্থ পাচার, ব্যাংক ডাকাতি ইত্যাদি যেন হয়ে উঠেছিল নিত্যনৈমিত্তক ব্যপার।৩। আওয়ামীলীগের এহেন লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কেউ টু-শব্দটি করলেই তাকে সাজানো হতো রাজাকার, জঙ্গী, জামায়াতী, স্বাধীনতা বিরোধী ইত্যাদি। তার স্থান হতো জেলে। নয়তো গুম করে বছরের পর বছর ধরে তাকে রাখা হতো ‘আয়না-ঘর’ নামে এক অভিনব গোপন টর্চার সেলে। সেখানে দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করা হতো এবং এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখা হতো আয়না-ঘরের পাশে কোন এক গণকবরে। সে অপকর্ম সফলভাবে সম্পন্ন করতো ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠন থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা।৪। কোটার নামে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের লোকদেরকে নিয়োগ দেয়া হতো সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন চাকরিতে। সাধারণ কাউকে চাকরি পেতে হলে আওয়ামীলীগ নেতাদের দিতে হতো লাখ লাখ টাকা ঘুষ। প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী নেতাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল সারাদেশব্যপী বিশাল এক ঘুষ বাণিজ্য সিন্ডিকেট। ফলে সারা বাংলাদেশে হাজার হাজার মেধাবী ছেলেমেয়ে বেকার হতে থাকে, আর ফুলে ফেঁপে বড় হতে থাকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা, ঘুষখোর আর চাঁদাবাজরা। এক কথায় চাকরিতে সাধারণ মানুষের অধিকার বলে কিছুই যেন ছিল না।৫। মেডিকেল, ইঞ্জনিয়িারিংসহ সকল বিশ^বিদ্যালয় ও অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষায় কোটার বাণিজ্য হতো রমরমা। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অপকর্ম করত এই দুর্বৃত্তরা। শুধুমাত্র আওয়ামী পরিবারের ছেলেমেয়ে এবং তাদের সুপারিশকৃত শিক্ষার্থীদেরকেই বেছে বেছে দেয়া হতো সেগুলোতে ভর্তির সুযোগ। আর সুপারিশের নামে ঘুষ বাণিজ্যে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতো আওয়ামী গডফাদাররা। ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ছিল না বললেই চলে। এমনই দুর্বিসহ এক সময়ে রুখে দাঁড়ায় বঞ্চিত ও ক্ষিপ্ত ছাত্রজনতা। প্রথমে শুরু হয় কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারপরে কোটা-বিরোধী সে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার বিরোধী আন্দোলনে। সে আন্দোলনে ১৪৪ ধারা জারিসহ নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ এবং আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগের ‘হেলমেট’ বাহিনী। এই গুলি চালানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় র্যাবের হেলিকপ্টারও। জুলাই থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত মায়ের কোলে ও ঘরে থাকা আড়াই বছরের শিশুসহ প্রায় ১৭০০ ছাত্রজনতা নিহত হয় এবং আহত হয় প্রায় লক্ষাধিক। এই সংখ্যা হয়তো আরও বেশী হতে পারে। আহতদের মধ্যে কেউ চোখ হারায়, কেউ হাত হারায় আবার কেউ পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে সারা জীবনের তরে। এমনকি ছাত্রীরাও বাদ যায়নি এই হতাহতের তালিকা থেকে। সে গণজাগরণ অবশেষে রূপ নেয় নজিরবিহীন এক গণবিস্ফোরণে। এই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার বিপ্লবী চেতনাকে শাণিত করে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান। মিছিলে সমাবেশে আবৃিত্ত করা হয় তাঁর কবিতা, গাওয়া হয় তাঁর বিপ্লবী গান। তাঁর কবিতা ও গানে ছাত্রছাত্রীরা যেমন প্রেরণা লাভ করে, তেমনি পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ, এমনকি নারীরাও উৎসাহিত হয় এই আন্দোলনে যোগ দিতে। ঘটনা বিশ্লেষেণ করলে এবং দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি ও সোস্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, এই গণঅভ্যুত্থানে নজরুলীয় চেতনা জুড়ে আছে অনেকখানি।‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রছাত্রীরাই ছিল মূল চালিকাশক্তি। কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীরাও স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে আত্মোৎসর্গ করে সেই আন্দোলনে। দেশজুড়ে তাদের জাগরণ আর আত্মোৎসর্গের পেছনে আমরা খুঁজে পাই নজরুলের চেতনা-
বল বীর / বল উন্নত মম শির!শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
দেয়ালে দেয়ালে চোখে পড়ে নজরুলের কলমে দেয়াল লিখন-মোদের চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল বক্ষে ভরা বাক্,কন্ঠে মোদের কুন্ঠাবিহীন নিত্য কালের ডাক।আমরা তাজা খুনে লাল ক’রেছি সরস্বতীর শ্বেত কমল।আমরা ছাত্রদল ॥ [ছাত্রদলের গান]
খবরে প্রকাশ- সরকার বিরোধী ‘২৪-এর আন্দোলনে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের উপরেও চালিয়েছে সীমাহীন নির্যাতন। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে তাদেরকে রাজপথে মেরে রক্তাক্ত করেছে। শ্লীলতাহানী করেছে। গুম করেছে। হত্যা করেছে। তখন নারী-পুরুষ ভেদে আন্দোলনকারীরা প্রেরণা খুঁজেছে নজরুলে। দেয়ালে দেয়ালে দৃশ্যমান তাদের সে প্রেরণার আঁচড়-জাগো নারী, জাগো বহ্নি-শিখা।জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা ॥ [গান: জাগো নারী ]
দেয়াল লিখনে আরও চোখে পড়ে-
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদকে জনসম্মুখে একেবারে সামনে থেকে বুকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ঢাকায় পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে ইয়ামিন নামের এক ছাত্রকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। খবরে প্রকাশ - সে ছেলেটি অর্ধমৃত অবস্থায় জ্ঞান হারাবার পূর্বে ‘মা মা’ বলে পানি পান করতে চায়। তখন পুলিশ তাকে পানি দেবার পরিবর্তে বুট পরা পায়ে তার মুখে একের পর এক লাথি মেরে তার মুখ থেকে রক্ত বের করে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে সাঁজোয়া যান থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাকে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করে পুলিশ। তাকে হত্যার সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। আবার আশুলিয়া থানার সামনে ছাত্রদেরকে গুলি করে হত্যা করে বস্তার মত করে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভ্যানে তোলে পুলিশ। পরে সে ভ্যানে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়। এমন পাশবিকতা এবং মানবিক বিপর্যয়ে আন্দোলনকারীরা ভাষা খুঁজে পান নজরুলে-
গাহি সাম্যের গান-মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান। [মানুষ]নতুন পথের যাত্রাপথিক চালাও অভিযান,উচ্চ কণ্ঠে উচ্চারো আজ মানুষ মহীয়ান। [অভিযান]ছাত্র-যুবাদের সম্মিলিত জাগরণে আমরা শুনতে পাই নজরুলের গান-দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হে,লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত?কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ,এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার! [কা-াারী হুঁশিয়ার]
এই আন্দোলন দমাতে হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে আটক করে জেলে পুরে রাখে স্বৈরাচারী সরকার। কিন্তু সে জেল জুলুমেও অকুতভয় বিপ্লবীরা। তাই তো শিকল পরেও শিকল ভাঙার গানে অভ্যুত্থানকারীদের প্রেরণায় আমরা পাই নজরুলকে-এই শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল-পরা ছল, এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের আন্দোলনে সব সময়ই উৎসাহ ও প্রেরণা যুগিয়েছেন স্বাধীনতাকামী ও নিপীড়ন বিরোধী বুদ্ধিজীবীগণ। তারা তাদের সামাজি যোগাযোগ মাধ্যমে, পত্র-পত্রিকার পাতায় ও বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখির মধ্য দিয়ে এবং বক্তৃতায় অনবরত আন্দোলনকারীদেরকে প্রেরণা যুগিয়েছেন নজরুলের ভাষায়-আমি জানি জানি ঐ ভূয়ো ঈশ্বর দিয়ে যা হয়নি হবে তাও!তাই বিপ্লব আনি, বিদ্রোহ করি, নেচে নেচে দিই গোঁফে তাও! তোর নিযুত নরকে ফুঁ দিয়ে নিবাই, মৃত্যুর মুখে থুথু দি!আর যে যত রাগে রে তারে তত কাল্-আগুনের কাতুকুতু দি।
কচি শিশু-রসনায় ধানি-লঙ্কার পোড়া ঝাল,আর বদ্ধ কারায় গন্ধক ধোঁয়া, এসিড, পটাশ, মোনছাল; [ধূমকেতু]
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদেরকে হত্যা, গুম ও জেল জুলমের মাধ্যমে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে দাবিয়ে রেখেছিল আধিপত্যবাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তি। কিন্তু একেবারে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের আত্মবলিদানের কাছে তাদের বিদায়ের ঘন্টাধ্বনি শুনতে পান দেশবাসী। তখন বুদ্ধিজীবীরাও তাদের আশার প্রতিফলনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেন এবং সমস্ত অগ্নিবীরকে উৎসাহিত করতে কণ্ঠে তুলে নেন নজরুলের বাণী-
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়।
এই আন্দোলন পর্যালোচনা করলে এবং গণঅভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে- ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল ছিলেন চেতনার বাতিঘর। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে, ‘৪৭ এর দেশভাগে, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও নজরুল একইভাবে প্রাসঙ্গিক ও অপরিহার্য ছিলেন।
মহা বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত,
এক সময় নজরুলের লেখাকে স্থানিক ও ক্ষণস্থায়ী বলে অবজ্ঞা করেছিলেন কেউ কেউ। ইংরেজ কবি ও সাংবাদিক রুডিয়ার্ড কিপলিং এর সাথে তুলনা করে তারা নজরুলের লেখাকে ‘সাময়িক কোলাহলপূর্ণ’ বলে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা বুঝতে পারেননি যে- নজরুলের লেখা হয়ে উঠবে সারা জীবনের জন্য ‘সাময়িক’। অর্থাৎ একশ’ বছর পরে এসেও নজরুল আজকে যেমন সদ্য ও সাময়িক, তেমনি আজ থেকে হাজার হাজার বছর পরেও যদি কোন নিপীড়িত মানুষ তাঁর কবিতা পড়ে, কোন প্রতিবাদী মানুষ যদি শোনে তাঁর গান, মনে হবে -“এ লেখা বোধ হয় আমাদের জন্যই লেখা। এখনই লেখা।” এ থেকে বুঝা যায় যে- সায়িকতাকে ছাপিয়ে শাশ্বত হয়ে বেঁচে আছে নজরুলের লেখা। নজরুল যে শাশ্বত লেখক হবার মন্ত্র জানতেন- সে কথা আবারও প্রমাণতি হলো বাংলাদেশের ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নজরুলীয় চেতনার স্ফুরণ দেখে এবং বিপ্লবীদের কাছে নজরুলের চেতনা-সারথি হবার ইতিহাস দেখে।
লেখক: এ কে আজাদ, কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার
‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ