সরকারী ক্যাডার’রা এখন ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’, ‘টার্গেট কিলিং’য়ে মেতে আছে:রিজভী
১৮ জুন ২০২৩, ০২:১২ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ০২:১২ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারী ক্যাডার’রা এখন ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’, ‘টার্গেট কিলিং’য়ে মেতে আছে।শেখ হাসিনার বাহিনীরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকেও নিপীড়ণ-নির্যাতনে হার মানিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন,'দেশবাসী ভোট, পার্লামেন্ট হারিয়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন হারিয়েছে, হারিয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। শেষমেষ হারাতে বসেছে জীবন ও স্বাধীনতা। যারা গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে তারা বর্তমান মারাত্মক দুর্দিনের মধ্যে দিনযাপন করছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জনগণ কর্তৃক ধিকৃত হয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করে সহিংসতা আর হত্যাকেই শ্রেষ্ঠ সমাধান হিসেবে মনে করছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারী ক্যাডার’রা এখন ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’, ‘টার্গেট কিলিং’য়ে মেতে আছে।
তিনি বলেন,'সন্ত্রাসকে জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে মনে করছে। এরা হত্যা, জখম নিষ্পন্ন করে ক’দিন পর আবার আরেকটি খুন-জখমের জন্য উন্মাদ হয়ে ওঠে। অবৈধ সরকারের দুঃশাসনের প্রোডাক্ট হচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাস তাদের মানসিক-ব্যাধি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,'
দু’দিন আগে জামালপুরের বকশিগঞ্জে মানবজমিন এর সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশের কারণে তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। প্রথমে নাদিমসহ দু’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৭ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে বাবু চেয়ারম্যান। মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে গেলে মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথায় আঘাত করার পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একদিকে সরকারী ক্ষমতা, অন্যদিকে উর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাই হওয়ায় বাবু চেয়ারম্যান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মৃত্যু যেন তার কাছে খেলা।এসময় তিনি সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও গণমাধ্যম কর্মীদের দেখান।
রিজভী বলেন,'নড়াইল জেলাধীন লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি সদস্য মোঃ রাহাদুল আমিন রবিন এর ওপর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ কামাল পারভেজ (শোয়েব) সহ ওসমান, অনিক, শহিদুল, আবিদ, আলফাজ, জিসান ছাড়াও অজ্ঞাত ১০/১৫ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার’রা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করেছে।
এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ফাস্টফুড বিক্রেতা হাফিজুল ইসলামকে প্রকাশ্যে উপুর্যপুরি আঘাত করে হত্যা করে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা তুলে ধরে রিজভী বলেন,'তার অপরাধ সে যুবলীগের ডাকে মিছিলে অংশ নেয়নি। যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামানসহ কয়েকজন সরাসরি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। মামলার বাদী সজিব মিয়া গণমাধ্যমকে জানান-যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামানসহ কয়েকজন যুবলীগ কর্মী গত রোববার বিকেলে তার ভাইয়ের দোকানে যান এবং হাফিজুলকে পল্লবী ১৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সমাবেশে যোগ দিতে হুমকি দেয়। কিন্তু হাফিজুল তাতে রাজী না হওয়ায় তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে পরদিন সন্ধ্যায় তার ভাইকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে। এদিকে পুলিশ এই মামলাকে ভিন্নখাতে নিতে একশো টাকার ছেঁড়া নোট দেয়ার নাটক সাজিয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মহসিন পিপিএম বার বিপি-৭৬০২০৮৩৯৩০ এখন সরকারী দলের সন্ত্রাসী ও ঘাতকদের বাঁচাতে এই মিথ্যা নাটকটি সাজান।
তিনি বলেন,'আমরা আগেই জানিয়েছিলাম চট্টগ্রামের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বাড়ী ফেরার পথে মীরেরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে নির্যাতন ও গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণের ঘটনা। সেখানে নির্যাতনের খবর পেয়ে নুসরাতের মা কহিনুর বেগম ছুটে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদ হোসেন ও ডিউটি অফিসার সঞ্জয় কুমার সাহা তার অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো নাদিয়া নুসরাতের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের একটি গায়েবী মামলায় তাকে জড়িত করে। জোরারগঞ্জ থানার মামলা নং-৩ (১২) ২২, জিআর নং-২০৭/২২, ধারা-১৪৩/৩০৭/৩২৫ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩/৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। একটি মনুষ্যত্বহীন সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নারীরা আজ আতঙ্কের এক ভয়াল বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করছে।
রিজভী বলেন,'বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান দুলাল দলীয় সমাবেশে যোগদান শেষে ঢাকা ফেরার পথে মাহিলারা বাসস্ট্যান্ডে তার আত্মীয় জাকির হোসেনের আড়তের বসে চা পান করে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরবর্তীতে স্থানীয় মালিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর কবিরাজ এর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আড়তে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে গতকাল দৈনিক প্রথম আলো ও সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন,'
এই বাংলাদেশের জন্য কি ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল, ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়েছিল ? আওয়ামী সরকারের বিরোধীদের জীবন কাটে হামলা-মামলা-গুমের আতঙ্কে। নিষ্ঠুর রাজদন্ড এখন প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে এসেছে জনগণের পিঠে। গুম-খুন-ক্রসফায়ারের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ওপর অবিরামভাবে প্রধানমন্ত্রীর অগ্নিগরল বক্তৃতা ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের কটুক্তি পেশী প্রদর্শন ও উগ্রচন্ড প্রতাপে চারিদিকে বিরাজ করছে নৈরাজ্যের অমানিশা। নির্দয় রুদ্্র শাসনের অভিঘাতে দেশে নারীদের জীবন এখন সবচাইতে নিরাপত্তাহীন। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মনে হয় দেশব্যাপী মধ্যযুগীয় ‘উইচ হান্টিং’-য়ের অমানবিকতার পুনরাবৃত্তির প্রতিযোগিতা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু,যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,হাবিব উন নবী খান সোহেল,সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ,স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু,নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু,আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী,ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও