বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রশ্নে ভারতের অবস্থান জানতে চায় জনগণ: গয়েশ্বর
১৯ জুন ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশ্নে ভারতের অবস্থান জনগণ জানতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের নির্বাচনে পাস করিয়ে দেবেন, তা নয়, গণতন্ত্রের প্রশ্নে সুস্পষ্ট অবস্থান নেবেন কি না, তা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায়। সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। গত ১৪ মে চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ফেরার পথে ছাত্রদলের নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এ মানববন্ধন করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাসহ এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা দিল্লিতে খবর পাঠান, জনগণের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে শিখুন। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, তার পাশে বাংলাদেশ গণতন্ত্রবিহীন; যার জন্য এ দেশের জনগণ ভারতকে দায়ী করে, এ কথা স্পষ্ট করে বলে দিলাম।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, ভারত সরকার, ভারতের রাজনীতিবিদদের বলেন, বন্ধুত্ব কি শুধু শেখ হাসিনার সঙ্গে করবেন, বন্ধুত্ব কি শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে করবেন; নাকি বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের সঙ্গে করবেন? ১৮ কোটি মানুষের সঙ্গে যদি ভারতের বন্ধুত্ব হয়, সেটা হলো প্রকৃত বন্ধুত্ব, সেটা মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই হবে। নতুবা একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে কোনো লাভ হবে না।
গয়েশ্বর বলেন, একটা রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটা রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এই সরকার তো বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলে দিয়েছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব স্বামী-স্ত্রীর মতো। স্বামী-স্ত্রী আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক কিন্তু এক নয়। আমরাও তো ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্ব আমাদের দরকার। ঝগড়াঝাঁটি আমাদের চলে না। আমাদের যদি প্রভুত্ব বা স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা দেয়, সেই বন্ধুত্ব তো কাম্য নয়।
মানববন্ধন থেকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে। হ্যাঁ, বিএনপি নির্বাচনে যাবে; তবে কোনো ভোট ডাকাত এবং ভোট চোরদের ক্ষমতা রেখে নয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোববার বলেছেন তিনি নাকি কারও কাছে মাথা নত করেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই আপনার হীরার ছেলেরা (ছাত্রলীগ) যখন নারী নির্যাতন করে প্রধানমন্ত্রী তখন আপনার মাথা উঁচু থাকে কি করে? আপনার সোনার ছেলেরা মুদির দোকানদার থেকে যখন কোটিপতি হয়, জামালপুরে আওয়ামী লীগ নেতা বাবু চেয়ারম্যান শুধু মাত্র তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা এই অহংকার এবং আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে একজন সত্য প্রকাশে অগ্রসৈনিক সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করলো প্রধানমন্ত্রী তখন আপনার মাথা নত হয় না? ৪০ বছর আগে বিএনপি নেতা মারা গেছে তার বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দেন যে পুলিশ কর্মকর্তা তার কাছে মাথা নত করেন আপনি প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক সময়ের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন,'ওবায়দুল কাদের সাহেব সকাল থেকে কথা বলতে থাকেন বিএনপিকে নিয়ে।তিনি(ওবায়দুল কাদের)বলেছেন আমরা জানি বিএনপি যাই বলুক না কেন তারা নির্বাচনে আসবে। আমার মনে হয় কি জানেন? বিএনপি নেতাদের যারা ড্রাইভার বাড়িতে যারা কাজ করেন চাকর, বাকর, তাদের মোবাইল নাম্বার ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে আছে তাদের সাথে তিনি কথা বলেন। সেটা না হলে তিনি (কাদের) কি করে বলেন বিএনপি নির্বাচনে আসবে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা আমদানি করি চীন থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি ১ বিলিয়ন ডলার। আমরা ভারত থেকে আমদানি করি ১৪ বিলিয়ন ডলার, রপ্তানি করি ১ দশমিক ১৭ ডলার পাশাপাশি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট থেকে আমদানি করি ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি ৮ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নদের কাছ থেকে রপ্তানি করি ২২ বিলিয়ন ডলার। এই রপ্তানির সাথে আমাদের গার্মেন্টসের শ্রমিক অর্থনৈতিক স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ সব রয়েছে। আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) বক্তব্য শুনে মনে হয় আপনি সবচাইতে নতজানু। কেউ গণতন্ত্রের স্বার্থে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললে আপনার মাথা যখন উঁচু হয়ে যায়।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামার সময় হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আপনার মেয়ে-কন্যা, মা কারো কোন নিরাপত্তা নেই। কারন ঐ সোনার ছেলেরা (ছাত্রলীগ-যুবলীগ) যেভাবে সারাদেশ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দাঁপিয়ে বেড়ানোর প্রশ্রয় পেয়েছেন ওবায়দুল কাদের কাছে থেকে হাছান মাহমুদের কাছে থেকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে। রাষ্ট্র যখন দূর্বত্তদের প্রশ্রয় রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় তখন বুঝতে হবে এই রাষ্ট্র দানবরা পরিচালনা করছে।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও দলের স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সরফত আলীর পরিচালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শিরীন সুলতানা প্রমুখ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও