সঠিক আরওপি ব্যবস্থাপনা না হলে অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়বে বাংলাদেশে
০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
শিশু অন্ধত্বের অন্যতম কারণ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হলে দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে বাংলাদেশে।
রোববার (3 b‡f¤^i) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক পরামর্শ সভায় এমন সতর্কতা উচ্চারণ করেন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেসের (আইএপিবি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার এবং অপথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন।
তিনি বলেন, আরওপিজনিত দৃষ্টিহীনতা রোধ করতে ব্যর্থ হলে দেশে প্রতিবছর ৪শ’ শিশু অন্ধ মানুষদের সঙ্গে যুক্ত হবে।
আরওপি এমন একটি চক্ষুরোগ যাতে আক্রান্ত হয় অকালে জন্মগ্রহণকারী শিশু অর্থাৎ যারা মাতৃগর্ভে ৩৫ সপ্তাহ পূরণের আগেই জন্মগ্রহণ করে কিংবা জন্মকালে যাদের ওজন ২ কিলোগ্রামের কম থাকে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ লাখের বেশি শিশু জন্ম নেয়, যাদের মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বা প্রায় ৪ লাখ শিশু অকালে জন্মগ্রহণ করে।
আরওপি মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক এনায়েত বলেন, “আমাদের অকাল প্রসব প্রতিরোধে আরও মনোযোগ দিতে হবে। আমরা যদি অকাল প্রসব রোধ করতে পারি এবং অকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের সময়মতো সেবা দিতে পারি, তাহলে আরওপি প্রতিরোধে সফল হবো।"
দেশের শীর্ষস্থানীয় এই চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি হাসপাতালে আরওপি পরীক্ষার যে আটটি রেটক্যাম্প অর্থাৎ আধুনিক ডিজিটাল ইমেজিং যন্ত্র রয়েছে, আরওপি মোকাবিলায় সেগুলোকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত “ন্যাশনাল আরওপি প্রোগ্রাম: অপশন অ্যান্ড অপারচুনিটিজ” শীর্ষক সভায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ আরওপি ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের অভাবে আরওপি পরীক্ষার হার এখনও কম।
আরওপি পরীক্ষার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে নার্সদেরকে এ পরীক্ষায় সক্ষম করে তুলতে তাদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, “কেন আমরা আরওপি পরীক্ষার জন্য কেবল চক্ষু বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করতে থাকবো। এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত অন্য চিকিৎসক ও নার্সরা এটি করতে পারেন।”
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরি হলে আরওপি সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেত।
সভায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, নবজাতক বিশেষজ্ঞ এবং সরকার, দাতা সংস্থা ও চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওর প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
কয়েকজন আলোচক বলেন, প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সচেতনতা ও সঠিক রেফারেলের অভাবে বাংলাদেশ কার্যকরভাবে আরওপি ব্যবস্থাপনা করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে এই রোগের ব্যবস্থাপনায় সফলতা আসবে না বলে সতর্ক করেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিট্রিও রেটিনা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, অকালে জন্মগ্রহণকারী বেশির ভাগ শিশুকে তারা যেখানে জন্ম নেন সেখান থেকে সময়মতো টারশিয়ারি বা সর্বোচ্চ স্তরের চক্ষু হাসপাতালে রেফার করা হয় না।
তিনি বলেন, "এমনকি সেখানকার মেডিকেল স্টাফরাও সাধারণত আরওপি ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের রেটিনাল ইমেজ টারশিয়ারি হাসপাতালে পাঠান না, যদিও সেটাই হলো আরওপি পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপ।"
তৃণমূল স্তরে সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দিয়ে, ডা. নুজহাত বলেন, “আমাদের নিকু (নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট) এবং স্ক্যানুর (বিশেষ যত্ন নবজাতক ইউনিট) একটি ম্যাপিং প্রয়োজন। যেসব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে ডেলিভারির ব্যবস্থা আছে, সেখানে নিকু বা স্ক্যানু আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এবং যেখানে নিকু বা স্ক্যানু আছে সেখানে আরওপি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, আরওপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রসূতি ও নবজাতক বিশেষজ্ঞদের বড় ভূমিকা রয়েছে।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাজমুন নাহার বলেন, “একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ বা একজন নবজাতক বিশেষজ্ঞ যখন অকালে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর চিকিৎসা করেন, তখন তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের পরামর্শ দেন যে শিশুটিকে অবশ্যই আরওপি পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে লেখা পরামর্শই যথেষ্ট নয়। ডাক্তারকে নিশ্চিত হতে হবে যে, মা-বাবারা যেন ঝুঁকিটা ঠিকমতো বোঝেন এবং শিশুটিকে পরীক্ষা ও রেফারেল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেন।”
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ বলেন, প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও নবজাতক বিশেষজ্ঞদের অভিভাবকদেরকে উপযুক্তভাবে সতর্ক করতে হবে যে, অকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের চোখের পরীক্ষা এড়িয়ে গেলে তারা দৃষ্টিশক্তিই হারাতে পারে।
তিনি বলেন, “যখন ডাক্তার ও নার্সরা অকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের মা-বাবাকে সমস্যা সম্পর্কে জানান, তখন মা-বাবারা সাধারণত এটিকে হালকাভাবে নেন। তাই চিকিৎসকদের অন্ধত্বের ঝুঁকির ওপর বেশি জোর দিতে হবে।”
যদি সময়মতো শনাক্ত এবং চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে আরওপি দ্রুত অন্ধত্ব পর্যায়ে যেতে পারে। জন্মের ২০-৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা এবং আরওপির প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগের কারণে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়।
সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের (সিএমই) পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহিনা সুবহান, শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. মনির হোসেন ও অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লায়লা আরজুমান্দ বানু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. খালেদা ইসলাম, নবজাতক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার দে, শিশু চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কাজী শাব্বির আনোয়ার, আইআরডি গ্লোবালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. তাপস রায়, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. তারিক রেজা আলী এবং ডা. মাহজাবীন চৌধুরী, অরবিসের সহযোগী পরিচালক ডা. লুৎফুল হোসেন, ইউনিসেফের পরামর্শক ডা. জাহিদ হাসান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. জহুরুল ইসলামও আলোচনায় অংশ নেন।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম