ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে খতিব

পশ্চিমা বিশ্বের অনুসরণে সংস্কার হলে জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হবে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম

পশ্চিমা বিশ্ব সব কিছুতেই নেতৃত্ব দিতে চায়। ওদের অনুসরণ করলে কোনো ফায়দা আসবে না। পশ্চিমা বিশ্বের সভ্যতা দিয়ে সংস্কার করা যাবে না। যে কোনো সংস্কার কোরআন হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সংস্কার করা হলে জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হবে। যে কোনো সংস্কারের মধ্যে যদি বৈষম্য হয় তা’হলে আল্লাহর নাফরমানি হবে। সমতা আর বৈষম্যের শিক্ষা কোরআন থেকে নিতে হবে। সংস্কারের নামে মুসলমানদের এই জমিনে পশ্চিমা বিশ্বের সমকামিতাকে বৈধতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

পুরুষকে নারী আর নারীকে পুরুষ ভাবার কোনো সুযোগ এই জমিনে হবে না। রাসূল (সা.) সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই সংস্কারের কথা বলে গিয়েছেন। জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে আল্লাহ কিছু নেক বান্দাকে দাঁড় করিয়ে দেন। আল্লাহ তাদেরকে হিম্মত দিয়ে দেন। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন। খতিব মুফতি আব্দুল মালেক বলেন, তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়া না হলে ঈমানই থাকে না। আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং নবী (সা.) কে অনুসরণ করতে হবে। আলোকিত মানুষ হতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। খতিব বলেন, আজ কাল ঈমান নিয়ে ফিকির কম হচ্ছে। ঈমান কাকে বলে তাকওয়া কাকে বলে তা’ জানতে হবে। কালেমার মাধ্যমে কলবের জমিনে ঈমানের গাছ লাগাতে হয়। ঈমান নামক বৃক্ষের যত্ন নিতে হবে তা’হলেই কলবের জমিনে ঈমান মজবুত হবে। নেক আমলের মাধ্যমে সমস্ত ফেৎনা থেকে ফিরে থাকা যায়। যত গুনা থেকে বেঁচে থাকবো ঈমানের বৃক্ষ ততমজবুত হবে।

 

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মুসলমানদের ঈমানের বলে বলীয়ান হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে সুন্নাহ ভিত্তিক প্রজ্ঞা নিয়ে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে হবে। ইসলাম ও মুসলমান নিধনে শত্ররা ঐক্যবদ্ধ। তারা খুব কৌশলে পরীক্ষা মূলক বিভিন্ন মুসলিম দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে।

 

মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে শক্তিশালী মুসলিম দেশ গুলোর চোখে ধূয়া তুলে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে কোন কোন মুসলিম দেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। মুসলিম বিশ্বকে এক্ষুনি সতর্ক হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ মুকাবিলার মাধ্যমে ইসরাইলকে প্রতিহত করতে হবে। নইলে মহাবিপদ। মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। এজন্যই তো আল্লাহ তায়ালা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর বিধানকে মজবুত ভাবে (ঐক্যবদ্ধ ভাবে) আঁকড়ে ধরো। (আল কোরআন)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মুসলিম জামাত থেকে দূরে থাকলো সে পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হল। আল্লাহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কুফরি শক্তির মোকাবেলা করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

 

 

গাজীপুর টঙ্গীস্থ পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, একজন আদর্শ মুসলিমের দিন-রাত কেমন হবে? কেমন হবে তার সকাল-সন্ধ্যা? কেমন হবে তার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবন? একজন মুসলিমের আচরণ তার প্রভুর সাথে কেমন হবে? নিজের সাথে কেমন হবে? মা-বাবার সাথে, সন্তানদের সাথে, স্ত্রীর সাথে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে কেমন হবে? কেমন আচরণ হবে ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে? মা-বাবার প্রতি সদাচার একটি মহান মানবিক হক; যার মতো গম্ভীর ও মর্যাদাপূর্ণ হক আর নেই। এ হক আদায় করে খোঁটা দেওয়া যায় না।

 

 

এ হক আদায়ে অবহেলা করলে নিন্দা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি নেই। মা-বাবার প্রতি সদাচার জান্নাতের দরজাসমূহের একটি। এ বিধানটি প্রণয়ন করা হয়েছে তাঁদের প্রতি ইহসান করার জন্য। এ হল প্রচÐ অনুভ‚তি ও স্পন্দিত আবেগ; সন্তানের জন্য মায়ের অন্তর অস্থির হয়ে ওঠা এবং বাবার চোখ সাদা হয়ে যাওয়া,তবে তাদেরকে উফ্ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সাথে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো এবং দুআ করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন। -সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩-২৪। খতিব বলেন, কতই না সৌভাগ্যবান সে সন্তান, যার বাবা-মা কিংবা সে দুনিয়া ছেড়েছে মা-বাবা সন্তুষ্ট অবস্থায়। কতই না ভাগ্যবান, কতই না নির্মল তার জীবন।

 

ইয়াস ইবনে মুআবিয়ার মা ইন্তেকাল করলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খোলা ছিল। মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি দরজা বন্ধ হয়ে গেল।কতই না হতভাগা সে সন্তান, যার বাবা-মা কিংবা সে দুনিয়া ছেড়েছে মা-বাবা অসন্তুষ্ট অবস্থায়। কতই না বিভ্রান্ত সে, কতই না ক্ষতিগ্রস্ত। সে যোজন যোজন দূরে থাক আল্লাহর রহমত থেকে। কারণ আল্লাহ তাআলা মা-বাবার প্রতি সদাচারের কথা এনেছেন তার ইবাদতের সঙ্গে। তিনি বলেছেন-এবং আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না।

 

পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। -সূরা নিসা : ৩৬ তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার কথা এনেছেন তার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন-তুমি শোকর আদায় কর আমার এবং তোমার পিতা-মাতার। আমারই কাছে (তোমাদেরকে) ফিরে আসতে হবে। -সূরা লুকমান : ১৪। বরং আল্লাহ তাআলা আমল কবুল হওয়া এবং গুনাহ মাফের কারণগুলোর মধ্যে একটি কারণ বানিয়েছেন মা-বাবার প্রতি সদাচারকে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন-আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে (গর্ভে) ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তাকে (গর্ভে) ধারণ ও দুধ ছাড়ানোর মেয়াদ হয় ত্রিশ মাস।

 

 

অবশেষে সে যখন তার পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়, তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাওফীক দান করুন, যেন আপনি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নিআমত দিয়েছেন তার শোকর আদায় করতে পারি এবং এমন সৎকর্ম করতে পারি, যাতে আপনি খুশি হন এবং আমার জন্য আমার সন্তানদেরকেও (সেই) যোগ্যতা দান করুন। আমি আপনার কাছে তওবা করছি এবং আমি আনুগত্য প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

 

এরাই তারা, আমি যাদের উৎকৃষ্ট কাজসমূহ কবুল করব এবং তাদের মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করব। (ফলে) তারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, তাদেরকে যে সত্য প্রতিশ্রæতি দেওয়া হত তার বদৌলতে। -সূরা আহকাফ : ১৫-১৬।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা

দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল

দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল

উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

ভাইরাল ভিডিওতে কটাক্ষের শিকার সামান্থা

ভাইরাল ভিডিওতে কটাক্ষের শিকার সামান্থা