আন্দোলনের পর আন্দোলনে নানা জটলা তৈরি হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, অবান্তর নানা আন্দোলনের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থী মনে এসেছে বিতৃষ্ণা, বিভক্তি থেকে বিভক্তিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের এসব স্নায়ু দ্বন্দ্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে চুন থেকে পান খসলেই প্রশাসক শিক্ষক, কর্মকর্তাদের অব্যহতি, বদলি ও রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। জুলাই বিপ্লবের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা রকম রদবদল হয়েছে।
রদ বদলে এসব জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিরাও। তবে প্রশাসনকে কাজ করার সহযোগিতা না করে উল্টো তাদেরকে চাপে রেখে নানা সময় বিতর্কিত করতে দেখা যাচ্ছে একটি গোষ্ঠীকে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশাসনের উপর বিক্ষুদ্ধ হয়েছেন।
গত ১৯ এপ্রিল আবাসন সংকটের জেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচতলায় মেডিকেল সেন্টারে কাথা বালিশ নিয়ে অবস্থান করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের দাবী দ্রুত আবাসন ব্যবস্থা না করা পযর্ন্ত আমরা এখানেই থাকব। তবে প্রশাসন পুরান ঢাকায় দুটি পরিত্যক্ত হল( বাণী ভবন, বজলুল রহমান হল) উদ্ধার করে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
সেনাবাহিনী কয়েকবার ফিল্ড ওয়ার্কে গিয়ে দেখে এসেছেন কিন্তু কাজ শুরু কবে নাগাদ হতে পারে নিদিষ্ট করে জানান নি। তবে সেখানে স্থানীয়রা দাবি করছেন এখানে যেন ছেলেদের হল না করা হয়, মেয়েদের হল করলে আপত্তি নেই তাদের। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে কথা বলে দ্রুতই কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের পাশে ২য় তলায় লিফট নির্মাণের জন্য কাজ চলমান অবস্থায় সেখানে শিক্ষার্থীরাও বাধা দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে ট্রোল করা শুরু করে। কেউ বলে শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা নাই, খাবারের জন্য ডাইনিং নাই আর প্রশাসন বিলাসবহুল লিফট নির্মাণ করছে। কেউ বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মূলা চাষে সফলতা দেখিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বলছেন লিফটের কাজ গত ভিসির সময় বাজেট আাকরে পাশ হয়েছে, এখন নিদিষ্ট খাতে বরাদ্দ টাকা ব্যয় না করলে তা ফেরত যাবে এজন্য ব্যয় করতে হচ্ছে।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশি বিদেশি ব্যক্তি দেখা করতে আসেন যারা লিফটে চলাচলে অভ্যস্ত এবং শারীরিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য লিফট ব্যতিত উপায় নেই। শিক্ষার্থীদের এসব অযৌক্তিক দাবীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন হস্তক্ষেপ করছেন না। তবে এসব অযৌক্তিক দাবির পেছনে যে কয়জন শিক্ষার্থীকে বারবার দেখা যাচ্ছে তারা কোন না কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে তারা ফুটেজ খোর বলে পরিচিত। এরা কোন বিষয় নিয়ে দাবি তুললে দুই তিনদিন পর তা ঝিমিয়ে যায়। এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ তাদের ব্যবহারে সন্দিহান হয়ে কোনো আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে না ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকেল চুরির অভিযোগ জানাতে গিয়ে রেজিস্ট্রার কতৃক বাম ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থী হেনস্তার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার রেজিস্ট্রার কতৃক শিক্ষার্থী হেনস্থার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসলে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাজের গন্ডি সম্পর্কে জানা নেয় এসব শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য একজন প্রক্টর ও আটজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চুরি, মারামারিসহ নিরাপত্তাহীনতার সকল দায়িত্ব প্রক্টরের। কিন্তু তারা রেজিস্ট্রারের কাছে এসব অভিযোগ কেন নিয়ে যান, তার কাজের বিষয় আলাদা এটি বলার পর শিক্ষার্থীরা তা ভুল বুঝছেন বলে জানান রেজিস্ট্রার ড.গিয়াসউদ্দিন আহমদে। জানা যায়, রেজিস্ট্রার হতে মরিয়া জগন্নাথের কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষক।
জুলাই আন্দোলনের পর তারা জামায়াতে ছত্রছায়ায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যে পদে কর্মকর্তার থাকার কথা সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে জামাতপন্থী শিক্ষককে। আবার বিভিন্ন পদের চেয়ারে যেতে আগ্রহের বসে শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে উস্কে দিচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক। নিজেদের দলীয় এজেন্টা বাস্তবায়নের চিত্র খোলস ছেড়ে দৃশ্যগত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। এছাড়াও প্রশাসনের সিংহভাগই আওয়ামী দোসরদের থাকায় তারাও বিভিন্নভাবে উস্কে দেয়ার জন্য প্রণোদনা দিচ্ছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, যত দিন আন্দোলন চলবে ততদিন পূর্বের ঘটনার বিচার হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন স্থিতিশীল থাকলে এতদিন স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার হতো কিন্তু দোসররা বিভিন্ন ভাবে আন্দোলন জিয়িয়ে রাখতে নানা পন্থা ব্যবহার করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়েও বর্তমান রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগের জন্য আন্দোলন হয়েছে ও কুশপুত্তলিদাহ করা হয়েছে। এসব আন্দোলনে অগ্রভাগে থাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ জুলাইয়ের পর গঠিত নানা সামাজিক সংগঠন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে 'দুরব্যবহার করেছি' কথাটি ঠিক নয়। তারা আমার কথা বুঝতে ভুল করেছে। আমার দায়িত্ব নিরাপত্তা দেয়া নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব। সামান্য ঘটনায় এত ছড়াছড়ি হওয়ার এক শ্রেণির শিক্ষক কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রশ্নে বলেন, এখানে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা আমার জানা নেই। জুলাই আন্দোলনকে একটি মাত্র ছাত্র সংগঠন প্রকাশ্যে সংহতি দিয়েছিল আমি সে দলের আর্দশ ধারন করি। কিন্তু আমি যখন রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করি তখন দল মত নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকে প্রাধান্য দেয়।