কনটেইনার পাচার চক্রে আনসার ও নিরাপত্তা কর্মীরা
১১ মার্চ ২০২৩, ১১:০৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে এই সিন্ডিকেটে বন্দরের পরিবহন ও নিরাপত্তা বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী ও আনসার সদস্য এবং কনটেইনার খালাসের সঙ্গে যুক্ত অপারেটররা আছেন। মদভর্তি কনটেইনার পাচারের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত বন্দরের নিরাপত্তারক্ষী মোজাম্মেল হোসেন রবিন এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বদাতা বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই চক্রের আটজনকে পাকড়াও করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বন্দরের চারজন হলেন- পরিবহন বিভাগের নিম্নমান বহিঃসহকারী মো. আব্দুল হাকিম, নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষী কাজী আবু দাউদ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা শাখায় পদায়ন হওয়া আনসার সদস্য অনুকুল বিশ্বাস ও এনামুল হক। বাকি চারজন হলেন- লরিচালক জালাল উদ্দিন, আইয়ূব আলী ও নাজমুল হোসেন এবং সহকারী নুরুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, ৯ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড (গুপ্তখাল) থেকে তিনটি ট্রেইলরে (লরি) পণ্যবোঝাই দু’টি কনটেইনার বের করে নিয়ে যাবার সময় গেইটে আটকে দেয়া হয়। দায়িত্বরত একজন গোয়েন্দা সদস্যকে মারধর করে একটি খালি ট্রেইলর নিয়ে চালকের সহকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি দু’টি ট্রেইলর ও কনটেইনার এবং চালক ও সহকারীসহ চারজনকে আটক করেন বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা।
তাদের দেয়া তথ্যে পরবর্তীতে ইপিজেড থানা পুলিশ বন্দরের পরিবহন ও নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ওই চারজনকে আটক করে। আটক আটজনসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ের অধীন সহকারী উপ-পরিদর্শক মারুফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। একই মামলায় সাময়িক বরখাস্ত বন্দরের নিরাপত্তা পরিচালকের দফতরের নিরাপত্তারক্ষী মোজাম্মেল হোসেন রবিনের সঙ্গে কনটেইনার খালাসের যন্ত্রাংশ পরিচালনায় নিয়োজিত অপারেটরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
যেসব পণ্য বন্দর থেকে বের করে নিয়ে যাবা চেষ্টা হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে- আমদানি করা প্রায় ২৯ লাখ টাকার ২৫ মেট্রিকটন প্লাস্টিকের দানা ও প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ৩২ রোল ফেব্রিকস। ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, আটজনকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বন্দরের কর্মচারী, আনসার সদস্য, লরিচালক, সহকারী মিলে এটা পুরো একটা চক্র, যারা জাল নথিপত্র দিয়ে কনটেইনার খালাসের চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত। সর্বশেষ যে দু’টি কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে বের করে নেয়া হচ্ছিল, সেগুলোর জন্য কোনো নথিপত্রও দাখিল করা হয়নি। বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়।
জানা গেছে, কনটেইনার ইয়ার্ডের গেইটে দুই শিফটে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মী এবং একইসঙ্গে তিন শিফটে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি শিফটে বন্দরের দু’জন নিরাপত্তা রক্ষী এবং একজন গোয়েন্দা নিরাপত্তা সদস্য থাকেন। তাদের সঙ্গে প্রথম দুই শিফটে তিনজন এবং তৃতীয় শিফটে চারজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের পর আমদানিকারকের প্রতিনিধি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের অংশ হিসেবে বন্দরের শুল্ক বিভাগে একটি বিল অব এন্ট্রি প্রদান করে থাকে। বন্দরের যাবতীয় ফি এবং কাস্টমস হাউজে পণ্যের জন্য নির্ধারিত শুল্ক কর পরিশোধ করার পর আমদানিকারককে পণ্য খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়। খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সময় বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। খালাস শেষে দেওয়া ছাড়পত্র নিরাপত্তা বিভাগে জমা দিতে হয়। নিরাপত্তা বিভাগের অনুমোদনের পর ছাড়পত্রের কপি গেইটে জমা দিয়ে তবে পণ্যবাহী পরিবহনকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ঘটনার দিন সকাল ৮টায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের এএসআই মারুফ হোসেনের কাজে যোগ দেয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তিনি পৌনে ৯টার দিকে গেইটে পৌঁছান। গোয়েন্দা নিরাপত্তা সদস্য নজরুল ইসলাম একাই ট্রেইলরগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং তাদের হামলার শিকার হন।
পুলিশ জানিয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষী নথিপত্র জমা না দিয়ে লরিচালকদের ইয়ার্ডে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া বন্দরের কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের যোগসাজশ আছে। যারা খালাসে জড়িত তারাও পর্যাপ্ত নথি চেক করেননি অথবা নথিপত্র ছাড়াই পণ্য নিয়ে যেতে তাদের সহযোগিতা করেছেন। লরিগুলো যেসব প্রতিষ্ঠানের তাদের কারো সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটাও যাচাই করছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ইয়ার্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কনটেইনার নিয়ে যাবার সঙ্গে কয়েকজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা পেয়েছি। যেহেতু মামলা হয়েছে, বিষয়টি এখন পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। বন্দরের পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত কমিটি হবে। তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত