জাতির পিতার আদর্শে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব : প্রধানমন্ত্রী
১৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:১১ এএম
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও ‘জাতীয় শিশু দিবস’-২০২৩-উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে প্রেসিডেন্ট হামিদ বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং এর পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তাঁরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে পালন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। বানাব আগামী দিনের বাংলাদেশ, স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আজকের শিশুদের এইটুকুই বলবো যে, খেলাধূলা, শরীরচর্চা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করা এবং প্রতিটি শিশুকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। সবাইকেই উন্নত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে। যারা প্রতিবন্ধি বা অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। তিনি বলেন,স্মার্ট বাংলাদেশে কোন শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবেনা, কোন মানুষই ভূমিহীণ-গৃহহীণ থাকবেনা। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হবেনা, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামীর বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত সম্দ্ধৃ বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আগামীতে ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়তে চাই এবং আজকের শিশুরাই হবে সেই আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী খেলাধূলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে আজকের শিশুদের উন্নত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা যেমন ফুটবল খেলতেন, তাঁর দাদাও খেলতেন আর আমার ভাইয়েরা তো খেলতেনই। এমনকি ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-পুতিরাও খেলাধূলা করে। এ জন্য তাঁর সরকার আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত খেলাধূলা ও প্রতিযোগিতার নানারকম ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেরাধূলায় অংশগ্রহণ করলে শরীর ভাল থাকবে, মনমানসিকতা ভাল থাকবে এবং সবাই একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে। সেটাই আমি চাই। অন্ধকে অন্ধ বলিও না, আর পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না-এটাতো ছোটবেলার শিক্ষা, কাজেই তাদের প্রতি সহানু ভূতিশীল হতে হবে। আমরা তাদেরকে ভাতা দেই এবং প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বৃত্তিও দিয়ে থাকি। কাজেই সকলেই একই সমাজের, সকলেই একই সংসারের।
তিনি বলেন, জাতির পিতা শিশুদের ভালবাসতেন এবং শিশুদের জন্য তাঁর অত্যন্ত দরদ ছিল এবং শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও তিনি ভালবাসতেন। এজন্য তাঁর জন্মদিনকে আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছি কারণ, শিশুরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যত এবং তারা যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। শিশুদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছোট্ট স্বপ্নিল বিশ্বাস। শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দুই শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিন। শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন এবং জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। অনুষ্ঠানে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের লেখা ‘শিশুদের শেখ মুজিব’ শিরোনামের একটি সচিত্র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা চিত্রকর্মটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ১শ’ অসচ্ছল শিক্ষার্থী আর্থিক অনুদান হিসেবে প্রত্যেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে লাভ করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মস্থান। এই মাটিতে তিনি জন্ম নিয়েছেন, বড় হয়েছেন এবং এই মাটিতেই তিনি শায়িত। নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তাঁর ভেতর যে মানবিকতা রয়েছে, মানুষের প্রতি দরদ, শিশুকাল থেকেই সেটা দেখা গেছে। যখন স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই দরিদ্র কোন শিক্ষার্থী যার বই নেই তাকে বই দিয়ে দিতেন। নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত মানুষের মাঝে বিলিয়েছেন। তাঁর ভেতর সেই মানবিকতা ছোটবেলা থেকেই আমার দাদা-দাদী লক্ষ্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় হয়ে জাতির পিতা, যারা একেবারে শোষিত-বঞ্চিত ছিল, একবেলা খাবার পেতনা, কোন পুষ্টি ছিলনা, রোগে চিকিৎসা পেতনা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই এনে দেননি। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুণর্গঠনকালে মাত্র নয় মাসের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। দুস্থ-অনাথ শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষে জাতীয় শিশু আইন, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। তিনি এসব শিশুদের জন্য কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় সরকার গঠনের পর আমরা জাতীয় শিশু শ্রমনীতি, ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, জাতীয় শিশুনীতি, ২০১১, এবং মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার সমম্প্রসারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদানের উল্লেখ করে বলেন, ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরিমার্জিত কারিকুলাম অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যবই বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে কম্পিউটার কোডিং পদ্ধতি এবং শিখন- শেখানো কার্যক্রমে ব্লেন্ডিং এ্যাপ্রোচ প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের দক্ষতা বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকার বিভিাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান এবং গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
জন্মদিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর গভীর শ্রদ্ধা
এর আগে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি দেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। ১৫ আগস্টের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ার বক্তব্য রাখেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মারা গেলেন 'মুজিব' বায়োপিকের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল
মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর আয়োজিত যৌন শিশু পাচার প্রতিরোধে অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
যশোরে আদালত চত্বরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভ
ফাইনালে মুখোমুখি মেট্রো-রংপুর
চুয়াডাঙ্গার গোয়ালপাড়া থেকে ১ কেজি ১৯৪ দশমিক ৩২ গ্রাম ওজনের ৪টি অবৈধ স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে বিজিবি
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাই
কুয়াকাটা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম’র সভাপতি কাজী সাঈদ, সম্পাদক মিজান
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর চিঠি নিয়ে যা জানাল ভারত
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
সোনারগাঁওয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
মামলা রেকর্ড করতে ঘুষ গ্রহণ, কুষ্টিয়ায় ওসি ও এসআই ক্লোজ
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জামায়াতের ২ কর্মী বহিষ্কার
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু