দেশে বৈষম্য বাড়ছে
২১ মার্চ ২০২৩, ১০:২৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২৪ এএম
আমরা একটি অন্যায্য বণ্টনব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি প্রয়োজন। একই সঙ্গে আমরা একটি অন্যায্য সরকারব্যবস্থার মধ্যে আছি। শাসন পদ্ধতি ন্যায়সংগত নয়। পুরো ব্যবস্থার মধ্যে এক ধরনের অন্যায্যতার প্রভাব লক্ষ করা যায়। অর্থনীতিও তা থেকে মুক্ত নয়। দেশে অর্থনৈতিক বণ্টনব্যবস্থা সীমাহীন বৈষম্যের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের দেশে বিত্তবান ও বিত্তহীনের মাঝে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল সহনীয় পর্যায়ে। বর্তমানে তা না কমে বরং উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের এক বক্তব্যে দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান তাঁর বক্তব্যে এ সব কথা বলেছিলেন। কয়েক বছর পর এসে তা আবারও সত্যি প্রমাণিত হলো। অর্থনৈতিক বৈষম্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে তা বুঝা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়ার হিসেবে। দেশে ব্যাংকিং খাতে ১ কোটি টাকার বেশি অ্যাকাউন্ট হিসেবদারীর সংখ্যা গত ২০২২ এর ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেড়েছে ৩ হাজার ৪২৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিস্টিকস’ রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, বিশ্ববাজারের ন্যয় দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার ফলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক মুনাফা করেছে যার ফলে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে। রিপোর্টে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি অ্যাকউন্ট হোল্ডার ১ লাখ ৯৯৪৬ জন। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫২০। কোভিডের পর থেকে কোটিপতি হিসেবে পরিমাণ বাড়ছিল। কিন্তু ২০২২ এর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট কমেছে প্রায় দুই হাজারটি। ব্যাংকাররা বলেন, কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব আর কোটিপতির সংখ্যা কখনই এক নয়। এসব ব্যাংক হিসাবের গ্রাহকদের মধ্যে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দেশে আসল কোটিপতি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশে ওভারঅল মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে ডিপোজিটের পরিমাণ কমছে। তবে কোটিপতি অ্যাকউন্ট এর পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ইনইকোয়ালিটি বা বৈষম্য বাড়ছে। মূলত বিশ্ববাজারে গত এপ্রিল থেকে পণ্যের দাম ব্যাপক বাড়ছে। অনেক ব্যবসায়ীদের আগে ক্যাপিটাল মেশিনারিজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকৃত পণ্য মজুত ছিল। যার কারণে বিশ্ববাজারের ন্যয় ওইসকল পণ্যের দাম দেশের বাজারে ব্যাপক বাড়ায় অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক লাভ করেছে। তিনি বলেন, গত বছরের শুরু থেকে ডলারের দাম বাড়ছে। রফতানিকারকরা যখন পণ্য রফতানি করেছে তখন ডলারের দাম কম ছিল। রফতানি আয় যখন দেশে এসেছে তখন ডলারের দাম অনেক বাড়তি ছিল। এর ফলেও রফতানিকারকদের আয় অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২২ এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মোট ১৩ কোটি ৬২ লাখ ব্যাংক হিসাবে এ আমানত জমা হয়েছে। এরমধ্যে কোটিপতিদের যে আমানত রয়েছে তা মোট ব্যাংকিং খাতের আমানতের ৪২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। কোটি টাকার স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিলেও সে হিসাবগুলোর মধ্যে ব্যক্তির সংখ্যা কত, সে পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও নেই। দেশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে জানা যায়, এ ব্যাংকগুলোর কোটি টাকার বেশি হিসাবের মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ ব্যক্তির। বাকি হিসাবগুলো সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি খাতের প্রতিষ্ঠানের। এরমধ্যে করপোরেট প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের কোটিপতির সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ কোটিপতিরা একাধিক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখে যার কারণে তাদের মোট টাকার অঙ্কটা পরিসংখ্যানে আসে না। এদিকে মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক চ্যানেলে ডিপোজিটের গ্রোথ কমলেও এনবিএফআই এ অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাব বেড়েছে ৪৩৪টি। একইসময়ে এসব একাউন্টে জমা টাকার পরিমাণও ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআই সেক্টরে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ৫ হাজার ৩২৬টি একাউন্টে মোট জমার পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে এই সেক্টরে ৪ হাজার ৮৯২টি কোটিপতি একাউন্ট ছিল। এসব একাউন্টে জমা ছিল ২৩ হাাজর ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. কায়সার হামিদ বলেন, কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা একাউন্টগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্টই বেশি। এছাড়া কিছু ব্যক্তিগত একাউন্টও আছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেখলে ডিপোজিট কিছুটা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআই এর ৫ দশমিক ২২ লাখ একাউন্টে জমা ছিল ৪৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কোটিপতি একাউন্টগুলোতেই আছে মোট জমার ৫৭ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি এনবিএফআইএর এমডি জানান, আগের বেশ কয়েকটি কোয়ার্টারে পিপলস লিজিং এর হিসাব যোগ করা হয়নি। ডিসেম্বর কোয়ার্টারে সেটি যুক্ত হয়েছে। নানা অনিয়মের কারণে খারাপ অবস্থায় থাকা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ডিপোজিট আছে। একারণেই ডিপোজিটের গ্রোথ দেখাচ্ছে। মূলত অল্প কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোতে ডিপোজিট সেভাবে বাড়েনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু
রিহ্যাব মেলায় গতকাল আশিয়ান সিটি’র ১৩ নং স্টলে ছিল ক্রেতাদের ভীড়।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু
লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল
দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ
শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক
দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন
বাজারে সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে: নূর
খতমে নবুওয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
প্রকৃত তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংবাদ করুন: প্রেস সচিব
কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারায় দুই প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা ও কারাদন্ড
‘চাঁদাবাজ দখলবাজরা জুলাই অভ্যূত্থানের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করছে’
মানিকগঞ্জে আগামীকাল তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ
আটঘরিয়ায় দলীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ
প্রত্যেক ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে: ড. ইউনূস