বেগুন, লেবু-শসায় উত্তাপ
২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৭ এএম
প্রতি বছর রোজা এলেই নিত্যপণ্যের দামে আগুন লেগে যায়। এবারের রোজতেও এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। ইফতারিতে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শরবতে ব্যবহৃত লেবু বাজারে বিক্রি হচ্ছে হালি প্রতি সর্বনিম্ন ৫০ টাকায়। যদিও এর মান খুব একটা ভালো নয়। আর একটু বড় সাইজের ভালো মানের এলাচি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা হালি। ইফতারিতে বেগুনি বানানোর জন্য যে লম্বা বেগুন ব্যবহার করা হয়, তার দাম প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
রোজায় এ সকল পণ্যের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। পাশাপাশি রোজার প্রথম দিকে বাজারে দাম বেশি থাকলেও শেষ দিকে দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। যদিও দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের দোষ দিচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। রমজানে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, খিলগাঁও রেলগেট বাজার এবং মেরাদিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ভ্রাম্যমাণ ও খুচরা বাজার ঘুরে দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, কাঁচামালের দাম বেশি হলে ক্রেতারা সহজে কিনতে চান না। সে ক্ষেত্রে আমাদের বিক্রিও কমে যায়। বিক্রি বাড়লে আমাদের লাভ ভালো হয়। তাই দাম বাড়লে আমাদের জন্যও সমস্যা। তবে সরকার যদি পাইকারি বাজারগুলোতে মনিটরিং করতে পারে তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। কারণ পাইকারি বাজার থেকে আমরা যে দামে কাঁচামাল কিনব অবশ্যই তার থেকে কিছু বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করব। লাভ ছাড়া তো আমরা বিক্রি করতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন পাইকারি বাজারে সবজি কিনতে যাই, সেই সময় বাজারে যদি কাঁচামাল কম থাকে এবং ক্রেতার সংখ্যা বেশি থাকে তখন পাইকাররা ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা এখন বাংলাদেশের নিয়ম হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা এটা চিন্তা করে না যে, দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষের কেনাকাটা করতে সমস্যা হয়। পাইকারি বিক্রেতারা তো ঠিকই বিক্রি করতে পারে। শুধু সমস্যায় পড়ি আমরা সাধারণ ছোট ব্যবসায়ীরা।
শাক-সবজির দাম নির্ধারণ করা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কাঁচামালের দাম সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব না। তবে কাঁচামালের জন্য সমগ্র দেশে একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রাইজ দেওয়া আছে, যদিও এটা কোনো ফিক্সড দাম নয়। তবে এর মাধ্যমে বোঝা যাবে দাম অতিরিক্ত বেশি রাখছে কিনা। রোজায় যেন কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম অতিরিক্ত মুনাফার লোভে না বাড়ায় সে জন্য সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রোজার মাসে ফার্ম থেকে ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, রোজায় বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামে ৩০-৪০ টাকার একটা প্রভাব পড়বে। আশা করছি ভোক্তা পর্যায়ে কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগির দাম কমবে ৩০-৪০ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে তিনি এ কথা বলেন। এদিন ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার। ভোক্তা মহাপরিচালক বলেন, কাজী ফার্ম, সিপি, প্যারাগন ও আফতাব ফার্মের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কোম্পানিগুলো আজ পর্যন্ত প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা করে মিলগেটে বিক্রি করেছে। তারা বৈঠকে আমাদের জানিয়েছেন- আগামীকাল থেকে ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। আশা করছি ভোক্তা পর্যায়ে এখন দাম ৩০-৪০ টাকা কমবে।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ভোক্তার কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন- সারা দেশে পাইকারিতে ২২০-২৩০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে। সেটা হাত বদল হয়ে ২৬০ টাকা হচ্ছে খুচরায়। প্রতিটি ভোক্তা এখন মুরগির দাম নিয়ে সাফার করছে। আশা করছি এই পদক্ষেপের কারণে দুই-তিন দিনের মধ্যে মুরগির দাম কমে আসবে। আজ কোম্পানিগুলো আমাদের বলছে- ফিডের দাম বাড়ার কারণে এখন উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে আমরা এও বলেছি মুরগির দাম কোনোভাবেই ২০০ টাকার বেশি যৌক্তিক নয়। কোনভাবেই ৫০-৬০ টাকা বাড়তি দাম কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোম্পানিগুলোকে বলেছি, কোনো খাতে সরকার বেশি ইন্টারাপ্ট করলে সমস্যা, আমরা আপনাদের সাপোর্ট দেব। কিন্তু বাড়তি দাম মানব না। তাই তারা দাম কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে। এখন মিলগেট থেকে দাম নির্ধারিত হবে। এরপর হাতবদলে দাম কতো বাড়ছে, সেটা আমরা দেখবো। গোয়েন্দা সংস্থা তদারকি করবে। এরপর কোন সমস্যা হলে, সমাধান না হলে আমদানি উন্মুক্ত করে দেব।
এসময় কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কাজী ফার্মসের কর্ণধার কাজী জাহেদুল হাসান বলেন, অনেক ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা এজন্য ফার্মে দাম নির্ধারণ করে দেব। এরপর বাহিরে অনেক হাতবদল হয়। তারপর দাম কত হচ্ছে, সেটা ভোক্তা অধিদফতর দেখবে। সারা দেশে মুরগি উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে। ৩০ বছরের ব্যবসায় এমন অবস্থা দেখিনি। সরবরাহ কম থাকার কারণে মুরগির দাম বাড়ছে। আমরা যে চার কোম্পানি আছি, তারা নির্ধারিত দামে বিক্রি করবো। খাবারের দাম ও খরচ কমতে পারে, তখন সেটা আরও কমাবো।
এরপর ভোক্তা অধিকারের ডিজি সফিকুজ্জামান বলেন, মার্কেট লিডাররা এ দাম নির্ধারণ করেছেন। বাজারে প্রভাব হবে। ২৩০ টাকায় বিক্রি করেছে। আগামীতে ৪০ টাকা কমে বিক্রি হবে। এর আগে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশকে অযৌক্তিক দামে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করায় তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এরপর কোম্পানিগুলো মিলগেটে নির্ধারিত এ দামে মুরগি বিক্রি করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়