আধ্যাত্মিক সাধনার রমজান
২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৩ পিএম
গ্রামীণ জনপদের মাঝখানে বিরাট পুকুর। গোটা লোকালয়ের পানির একমাত্র উৎস্য এই পুকুর। দীর্ঘদিন অনাচার, যাচ্ছেতাই ব্যবহার ও সংস্কারের অভাবে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে পানিতে। ঘনশ্যাওলা আর কচুরিপানার মাঝে মরা মাছ ভেসে ওঠে কদিন পরপর। সুপেয় পানির অভাবে জীবনধারণ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়েছে চারপাশের অগণিত মানুষের। পাড়ার ছেলেরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করেছে। তাতে অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও নোংরা পানিতে ভরে যায় আবার। সীমাহীন দুঃখ দুর্গতির হাত হতে উদ্ধারের জন্য সবাই শরণাপন্ন হয় পাড়ার মুরব্বির কাছে। তিনি বললেন, পুকুর সংস্কারে তোমাদের চেষ্টা তদবীর ব্যর্থ হওয়ার কারণ আমি ধরতে পেরেছি। দীর্ঘদিন অযতœ অবহেলায় পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে অন্তত পাঁচটি জায়গায়। সেই পথে লোকালয়ের সব আবর্জনা ঢুকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে প্রতিদিন। সেই নালা বন্ধ না করে যত চেষ্টা চালাও পুকুর পরিষ্কার করার চেষ্টা সফল হবে না তোমাদের।
মুরব্বির পরামর্শে সবাই মিলে প্রথমে নোংরা পানি প্রবেশের নালা পাঁচটি বন্ধ করে দিল। তারপর পাড়ার তরুণ-বৃদ্ধ, বড়-ছোট সবাই হল্লা করে শ্যাওলা কচুরিপানা ছেঁকে তুলে ফেলল। তারপর ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি সেঁচে বাইরে ফেলে দিল।
বৃদ্ধ মুরব্বি বললেন, এবার পুকুরে খননকার্য চালাও। পলিমাটি তুলে ফেলার পর পুকুরের তলায় যাতে সূযের্র প্রখর রোদ পতিত হয় তার ব্যবস্থা কর। এবার আরেকটু গভীরে খনন করার সাথে সাথে দেখবে ফোয়ারার মতো পানি উতলে উঠছে পাতাল ফুঁড়ে। দেখতে দেখতে পুকুর ভরে গেল স্বচ্ছ নির্মল পানির জোয়ারে। পুকুরের নল পাঁচটি খুলে দেয়ার ব্যবস্থা হলো। স্বচ্ছ নির্মল সুপেয় পানি প্রবাহিত হলো সমগ্র জনপদে। আঁধার রাতে নগর জীবনে কয়েকদিন বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর পুনরায় চালু হলে যেভাবে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় এখানেও সুপেয় পানির সরবরাহ পেয়ে পুরো জনপদ ঈদের খুশিতে জেগে উঠল।
মওলানা রূমী বলেন, তোমার দেহকে জনপদের সাথে তুলনা কর। দেহরূপ জনপদের বেঁচে থাকার উৎস তোমার অন্তর। অন্তরই মানবীয় স্বভাব চরিত্র নিয়ে বেঁচে থাকার পানি সরবরাহ করে তোমার জীবনে। কিন্তু দীর্ঘদিন অবহেলায় পাপ পঙ্কিলতায়-কলুষতার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তোমার অন্তর ও চরিত্র। কারণ, নালার মতো তোমার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের পথে অহরহ হারাম, আবর্জনা ও পাপ, অশ্লীলতার নোংরা ময়লা পানি প্রবেশ করছে তোমার অন্তরের পুস্করনীতে। কাজেই প্রথমে ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি নালা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখ। বিশেষ করে, তোমার মুখটি দিনের বেলা বৈধ পানাহার ও যৌন সংসর্গ থেকে বন্ধ কর। কান, চোখ, স্পর্শ ইন্দ্রিয় হারামের প্রতি দৃষ্টিপাত ও হারাম শোনা বা স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখ একটানা এক মাস। এভাবে মনের পুষ্করনীর কচুরিপানা কুধারণা কুভাবনা পরিষ্কার কর তওবা ইস্তেগফারের জাল দিয়ে। দিনের বেলা রোজা, রাত জেগে ইবাদতের মাসব্যাপী কৃচ্ছসাধনায় অন্তরে খননকার্য চালাও। তারপর আশায় বুক বেঁধে দোয়া মোনাজাতের আর্তিতে অন্তরকে আকাশের পানে মেলে ধর। তাতে আকাশের সূর্য নয়, আরশের নূরের ঝলক পতিত হবে, তাপিত হবে তোমার অন্তরজগত। এই ফাঁকে আল্লাহর জিকির ও আদেশ-নিষেধ পালনের কসরতে কলবের গভীরে খননকার্য চালাও। দেখবে, উন্নত চিন্তা, সুন্দর চরিত্র মাধুরি ও নতুন জীবনের সুপেয় পানিতে সিক্ত হবে তোমার জীবন। সেই সুন্দরের ফল্গুধারা প্লাবিত হবে সমাজ জীবনের সর্বত্র। সুন্দর আর উন্নত চরিত্র ও মানবিকতার জয়ধ্বনিতে তখন জেগে উঠবে পুরো জনপদ। রমজানের ত্রিশদিনব্যাপী উপবাসব্রত ও কৃচ্ছসাধনার এই সুফল পাবে তোমার নিজের জীবনে ও বৃহত্তর সামাজিক অঙ্গনে।
রোজায় যদি এমন চেষ্টা, চেতনা ও সাধনার সংযোগ না থাকে তাহলে রোজার সুফল আপনার আমার জীবনকে আলোড়িত, আলোকিত করতে পারবে না। এ জন্যেই বারবার বলা হয়েছে, রোজা পালন করতে হবে পূর্ণ বিশ^াস ও এহতেসাব সহকারে। তাহলেই অতীত জীবনের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। এহতেসাব মানে নিজের চেতনাকে শাণিত করা, ভুলত্রুটি পাপ বর্জনের উদ্দেশ্যে আত্ম-পর্যালোচনা করা, আরশের নূরের ঝলক পাওয়ার আশায় উপোস থাকা, ইফতার করা, রাতজাগা, তারাবিহ পড়া, শেষরাতে উর্ধ্বলোকের ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর তরফে খাবারের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা।
হাদিস শরীফে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আচরণ ত্যাগ করেনি রোজা রেখে তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’। (বুখারির বরাতে মিশকাত-১৯০২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, কতক রোজাদার এমন আছে যার রোজা দ্বারা পিপাসা ব্যতীত কিছুই লাভ হয় না। আর রাত জেগে ইবাদতকারী এমন কতক ব্যক্তি আছে যার রাত জাগাতে নিদ্রাহীনতা ছাড়া কিছুই অর্জিত হয় না। -(দারেমীর বরাতে মিশকাত-১৯১৭)
রোজা পালনে সবচে বড় কথা আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংযম। হাদিস শরীফে বর্ণিত, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ রোজা রাখে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, গালমন্দ না করে। যদি কেউ গায়ে পড়ে তাকে গালি দেয় অথবা ঝগড়া বাধায় মারামারি করতে চায় তাকে যেন বলে দেয় আমি রোজাদার। কাজেই আপনার ঝগড়ার বা গালমন্দের জবাব দিতে আমি অপারগ। (বুখারী ১৮৯৪; মুসলিম ১১৫১)
অন্যান্য ধর্মেও কৃচ্ছসাধনার কসরত আছে। সেই কসরত সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সন্যাসব্রত পালনের মাধ্যমে। একটি গোষ্ঠী তখন পুরোহিত, ভিক্ষু, বৈরাগি বা সন্যাসী হয়ে যায়। বৈবাহিক জীবনের মতো মানব প্রকৃতির অনিবার্য চাহিদা ও দাবিকে অস্বীকার করে তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর পুরোহিতরাও। অথচ তাদের যৌন অনাচারের নানা নোংরা কাহিনী মানব সভ্যতার জন্য কলঙ্কজনক। এসব কারণে ইসলামে বৈরাগ্য সাধনা নেই। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি শ্রেণির সন্যাসব্রত গ্রহণের সুযোগ নেই। ইসলামের সাধনা কৃচ্ছতা সমাজের সবাইকে নিয়ে সংসারে সংযমে রমজানে। এখানেই ইসলামীজীবন দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্য। ইসলামের এই সৌন্দর্য তুলে ধরার পরিবর্তে যারা নেট দুনিয়ায় ধর্মের দোহাই দিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে তারা ইসলামের কেউ নয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা