একজনের নামে ৬০ বিঘার বেশি জমির থাকবে না
২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৩ এএম
ভুমি আইনে সংস্কার আনা হচ্ছে। এ আইন পাস হলে কেউ আর ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক থাকতে পারবেন না। একজনের নামে ৬০ বিঘা জমির বেশি রাখা যাবে না এমন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩। জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) আদায় করা হবে ইংরেজি অর্থবছর অনুযায়ী। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর আইনের খসড়ায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এখন থেকে বাংলা বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্রের পরিবর্তে ইংরেজি সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হবে। খাজনা আদায় ও এর হিসাব-নিকাশ সময়োপযোগী করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ভূমি উন্নয়ন কর আইন- ২০২২,এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন শাখার অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় ভূমি উন্নয়ন কর আইন-২০২৩-এর খসড়া পর্যালোচনা চুড়ান্ত করা হয়। আজ মঙ্গলবার তা চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। গত বছর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগের একটি অধ্যাদেশকে পরিমার্জন করে নতুন আইন করা হচ্ছে। নতুন আইন পাস হলে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ও পরিবারভিত্তিক কৃষিজমির পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হবে না। তবে জমি ২৫ বিঘার ওপরে থাকলে সব জমির জন্য ট্যাক্স দিতে হবে। ধরেন আমার ২৬ বিঘা জমি আছে, তাহলে পুরো ২৬ বিঘার দিতে হবে। তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে জরিমানা করে আদায় করা হবে।
এ বিষয়ে ভূমি সচিব মো.মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ভূমি উন্নয়ন কর আইন পাস হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। অধ্যাদেশের সঙ্গে মিল রেখেই এই আধুনিক আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলা সালকে ভিত্তি করে খাজনা আদায় করা হয়। অর্থাৎ ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্রকে অর্থবছর ধরে খাজনা আদায় করা হয়। খসড়া আইনে খাজনা আদায়ের অর্থবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে (তহশিলদার) বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে ‹ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০১৮›-এর খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সারাদেশে খাজনা আদায় করা হয় ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলা সালকে ভিত্তি করে। বর্তমানে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয় ১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে প্রণীত এ অধ্যাদেশ আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে। এই বাধ্যবাধকতার জন্য বিভিন্ন অধ্যাদেশের সমন্বয়ে ভূমি উন্নয়ন কর আইনের খসড়া করা হয়েছে। এ আইনে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবান জেলাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়াটির বিষয়বস্তু, ভাষার বিন্যাস এবং অন্যান্য আইনের সঙ্গে সঙ্গতি-বৈপরীত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লিখিত মতামত নেওয়া হয়েছে। এসব শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অর্থবছর অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হবে। আগের বছরের কর অনাদায়ী থাকলে তা আদায় করেই কেবল নতুন কর আদায় করা যাবে। ভূমির মালিক ইচ্ছা করলে তিন বছরের কর একসঙ্গে দিতে পারবেন। তবে পরে কর বাড়লে তা পরিশোধ করতে হবে। বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর শতকরা ছয় টাকা ২৫ পয়সা হারে সুদসহ আদায় করতে হবে। একাধিক বছরের বকেয়ার ক্ষেত্রে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ আদায় করতে হবে। ভূমির খ-িতকরণ রোধ করতে একটি দাগে ভূমি মালিকের সর্বনি¤œ জমির পরিমাণ এক শতাংশ উৎসাহিত করা হবে। ভূমি মালিকের জমি এক শতাংশের কম অর্থাৎ শতাংশের ভগ্নাংশ থাকলে তা পূর্ণ শতাংশ গণ্য করে কর নির্ধারণ করা হবে। কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, ঈদগাহ, সার্বজনীন মন্দির, গির্জা বা সাধারণের প্রার্থনার স্থান বা প্রতিষ্ঠান ভূমি উন্নয়ন কর থেকে অব্যাহতি পাবে। তবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোত্রীয়, দলীয় ও সম্প্রদায়ভিত্তিক উপাসনালয় বা সমাধিক্ষেত্রকে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে এবং দান ও দর্শনীর অর্থে পরিচালিত উপাসনালয় বা সমাধিক্ষেত্রের বেলায়ও কর দিতে হবে। খসড়া আইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা বহাল রাখা হয়েছে। বকেয়া কর আদায়ের জন্য ১৯১৩ সালের সরকারি পাওনা আদায় আইন অনুযায়ী সার্টিফিকেট মামলা করতে পারবে। এ আইনের আওতায় ভূমি উন্নয়ন কর কখনও তামাদি হবে না।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর নির্ধারণী তালিকা প্রকাশের পর কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ধারা-১৫-এর উপধারা (২)-এর নির্ধারিত কোর্ট ফিসহ আবেদন করতে পারবেন। সহকারী কমিশনার আবেদন পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবেন। সহকারী কমিশনারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্নিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আপিল করতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৪৫ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এবং বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি। আপিল বোর্ডে আপিল করা যাবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে এবং বিভাগীয় কমিশনারের ক্ষেত্রে আপিল ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই পরবর্তী কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করা যাবে। ভূমি আপিল বোর্ড ১৮০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করবে।
খসড়া অনুযায়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্নিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে জমি ব্যবহারের প্রকৃতি পরিবর্তন বা শ্রেণি বদল হলে তা আমলে নিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) নির্ধারণ করবেন। করের এ তালিকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুমোদন করলে তা জনসাধারণের জন্য প্রকাশ ও প্রচার করা হবে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রচলিত পদ্ধতিতে এ কাজটি বাস্তবায়ন করে আসছেন। তাদের কাছে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির কোনো কর বা খাজনা দিতে হয় না। খসড়া আইনেও এ বিধান বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অকৃষি জমিকে বাণিজ্যিক, শিল্প এবং আবাসিক ও অন্যান্য এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে প্রতি শতক জমির ওপর নির্ধারিত হারে কর আদায় করার বিধান যুক্ত হয়েছে। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহূত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ‹ক› ধাপে ৩০০ টাকা, ‹খ› ধাপে ২৫০ টাকা, ‹গ› ধাপে ২০০ টাকা, ‹ঘ› ধাপে ১০০ টাকা, ‹ঙ› ধাপে ৬০ টাকা এবং ‹চ› ধাপে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্পের কাজে ব্যবহূত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ‹ক› ও ‹খ› ধাপে ১৫০ টাকা, ‹গ› ধাপে ১২৫ টাকা, ‹ঘ› ধাপে ৭৫ টাকা, ‹ঙ› ধাপে ৪০ টাকা এবং ‹চ› ধাপে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহূত জমির উন্নয়ন কর ‹ক› ধাপে ৬০ টাকা, ‹খ› ধাপে ৫০ টাকা, ‹গ› ধাপে ৪০ টাকা, ‹ঘ› ধাপে ২০ টাকা, ‹ঙ› ধাপে ১৫ টাকা ও ‹চ› ধাপে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো জমির মালিকের একই মৌজায় অনেক জমি থাকলে তা একত্রিত করে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায় করা যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ