ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে পাঠাচ্ছেন রেমিট্যান্স অধরা রয়ে যাচ্ছেন পি কে হালদার, আমজাদ, জামাল মিয়াদের মতো শত শত লুটেরা সম্পদশালী :: পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং, ভারত ও চীন

বিদেশে পাচার করছেন ধনীরা

Daily Inqilab সাঈদ আহমেদ

২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৫১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২২ এএম

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পরিপুষ্ট করছে। তাদের পাঠানো অর্থে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও মানুষের জীবন মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কয়েক মাস থেকে ডলার সংকটের মধ্যে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনৈতিক সেক্টরে ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশে সোয়া কোটিরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের শ্রমের বিনিময়ে ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ দশকে ২১৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে এই খাত থেকে। অথচ নিজ দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এই অর্থের বড় একটি অংশ পাচার করছেন এনআরবি নামধারী এক শ্রেণির লুটেরা। এই লুটেরারা কখনও ‘পি কে হালদার’, কখনও ‘এস এম আমজাদ হোসেন’, কখনও বা ‘জামাল মিয়া’ নামে দেশের বিনিয়োগ খাতে সম্মান কুড়িয়ে থাকেন। অথচ দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে এরা কানাডায় ‘বেগম পাড়া’ দুবাইয়ে ‘বাংলাদেশি মহল্লা’ মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাড়ি-শিল্প প্রতিষ্ঠান এমনকি হালে ইংলান্ড ও আমেরিকায় বড় বড় বাড়ি-ফ্লাট কিনছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) বছর দুই আগে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার পাচার হয়। এই পাচারের প্রধান খাত আমদানি-রফতানি। কাঁচা মাল আমদানিতে ওভার ইনভয়েস এবং রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসের আড়ালে পাচার হচ্ছে অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচার সংক্রান্ত গবেষণা সেল বলছে, এক শ্রেণির বেসামরিক আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরা পাচার করছেন অর্থ। তারা অবৈধ অর্থ, ব্যাংকের টাকা, জনগণের আমানত, দেশের সম্পদ ইত্যাদি আত্মসাৎ ও লুট করে নিজ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে অর্থ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীন হচ্ছে পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য।

অর্থপাচারকারী এবং পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য চিহ্নিত হলেও অনুদঘাটিত রয়ে গেছে পাচারের বড় আরেকটি খাত। আর তা হচ্ছে, অনাবাসী বাংলাদেশি। তারা দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে আয়েশী জীবনযাপন করছেন। বাহ্যত তারা দেখাচ্ছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছেন। প্রকৃতপক্ষে দেশের উৎপাদনশীল খাতগুলোতে তাদের বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (এনআরবি) বাংলাদেশিদের কেউ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনছেন। কেউ বা ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ কিনছেন। প্রতিষ্ঠানের মালিকানাকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান থেকে যেনতেন প্রকারে টাকা বের করে নিচ্ছেন। লভ্যাংশ বা মুনাফাতো নিচ্ছেনই। এ ছাড়া নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ঋণের নামে। অস্তিত্বহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ নিয়ে পাচার করছেন বিভিন্ন দেশে।

কেস স্টাডি (এক) : ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:’। চেয়ারম্যানসহ ১৮ জন পরিচালক রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। তারা হলেন, চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জামাল মিয়া, পরিচালক-মোহাম্মদ জুলহাস, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. আব্দুর রব, সালেহ হোসাইন, হোসনে আরা নাজ, মো. জামালউদ্দিন, মো. কামাল মিয়া, আব্দুল আহাদ, মো. আবদুল হাই, কাজী ফারুকউদ্দিন আহমেদ, জহুরা তাসনুবা, মোহাম্মদ শামীম আহমেদ, মো. ফজলুল হক, মো. ইমাদুল ইসলাম, শওকাতুর রহমান (স্বতন্ত্র), ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী (স্বতন্ত্র) এবং মো. আকতার হোসেন(স্বতন্ত্র)। এর মধ্যে ৪ স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া প্রত্যেকেই অনাবাসী বাংলাদেশি। বেতন-ভাতা বাইরে নানা ভাউচারে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তারা। গত কয়েক বছরে তারা ভুয়া ভাউচারে হাতিয়ে নেন ১০৪ কোটি টাকা। অবাধ লুটপাটে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা এখন সঙ্গীণ। অর্থ সঙ্কটে গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে গ্রাহকরা এনআরবি পরিচালকদের বিরুদ্ধে পৃথক ৪টি মামলা করেন। ওই মামলায় হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আবদুর রব, কামাল মিয়া, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল আহাদ, জামাল উদ্দিন এবং পরিচালক আবদুল হাই গ্রেফতার হন। কারাভোগও করেন। অতি সম্প্রতি ১০৪ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন কুষ্টিয়ার কয়েকজন গ্রাহক।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এনআরবি পরিচালকগণ যে অর্থ দিয়ে হোমল্যান্ডের পরিচালকপদ কেনেন সেই টাকাও কোনো ব্যাংকিং চ্যানেলে আসেনি। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ এনে লগ্নি করেছেন তারা। অর্থাৎ নন-ব্যাংকিং এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে দেশে কোনো বিনিয়োগ করেননি। বিনিয়োগের আড়ালে করেছেন লুণ্ঠন। লুণ্ঠনের অর্থে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে যুক্তরাজ্যে সুখে দিনাতিপাত করছেন।

কেস স্টাডি (দুই) : ২০১৩ সালে কয়েকজন উদ্যোক্তা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক (এসবিএসি)। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন লকপুর গ্রুপের মালিক এস এম আমজাদ হোসেন। তার স্ত্রী বেগম সুফিয়া আমজাদ ব্যাংকটির পরিচালক। আমজাদ চেয়ারম্যান থাকা কালে নিজেরই বেনামী কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৬৬০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন। বিষয়টি বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তদন্তে ধরা পড়ে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পাঠানো হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে। কিন্তু অনুসন্ধান চলাকালে চতুর আমজাদ অনেকটা দুদকের নাকের ডগায় ২০২১ সালের নভেম্বর সপরিবারে দেশত্যাগ করেন। দেশত্যাগের পরপরই দুদক হাইকোর্টের নির্দেশে তার দেশত্যাগে জারি করে নিষেধাজ্ঞা। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে নিজের বেনামী প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ঋণের টাকা দেশের কোনো উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করেন নি। আমদানি-রফতানির আড়ালে পাঠিয়ে দেন বিদেশে। বর্তমানে তিনি স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ, পালিত কন্যা তানজি আমজাদকে নিয়ে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৯৩৫টি অ্যাকাউন্ট জব্দ থাকলেও আগে থেকেই বিদেশে পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে কাটছে তার আয়েশী জীবন।

কেস স্টাডি (তিন) : আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও পরিচালক পদ ধারণ করে এক দশকে অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ভারত, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। আলোচিত পিকে হালদার পর্যায়ক্রমে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেড, পিপলস লিজিং কোম্পানি, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লি: এর পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ৩০/৪০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ অর্থ তিনি বাংলাদেশের কোনো উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করেন নি। পাচার করেছেন সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত ও কানাডায়। একাধারে তিনি বাংলাদেশ এবং কানাডার নাগরিক। এছাড়া তার ভারতীয় পাসপোর্ট এবং গ্রানাডার পাসপোর্টও রয়েছে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দুদক ৩৪টি মামলা করেছে। এখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেডঅ্যালার্ট জারি রয়েছে। যদিও অন্য অপরাধে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে তিনি ভারতের কারাগারে রয়েছেন। এ রকম দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক। প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে ‘এনআরবি’ যুক্ত করে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করার কৌশল নিচ্ছেন অনেকে। এনআরবিদের বীমা সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৩ সালে চালু হয় ‘এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:’। চেয়ারম্যান কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে আর কেউ এনআরবি নন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ৭০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে ভুয়া কেনাকাটার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও আত্মসাৎকৃত অর্থ পাচারের অভিযোগ। বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিসহ বোর্ডের ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা এখন বিচারাধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি ক্রয়ে উচ্চ মূল্য দেখিয়ে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন আহমেদসহ অন্য আসামিরা। আসামিদের বেশ কয়জনের রয়েছে দ্বৈত নাগরিকত্ব।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিজনিত সমস্যার প্রধান কারণ শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নয়। অন্যতম কারণ বিদেশে মুদ্রা পাচার। গত অক্টোবরে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশকালে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, তদন্তের মাধ্যমে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দর দেখিয়ে পণ্য আমদানির তথ্য পেয়েছে বিএফআইউ। বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচারের তথ্য প্রাপ্তির কথা জানানো হলেও পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে এনআরবিদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই সংস্থাটির।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির’ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, বিদেশি অর্থ এখানে বিনিয়োগ হচ্ছে ব্যাংক-বীমা, মেডিক্যাল কলেজ, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানে অর্থের লেনদেন বেশি। যেখানে উৎপাদনের কাজ হবে। শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে বিয়োগ হচ্ছে না। এটি হচ্ছে একটি দিক। দ্বিতীয়ত হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি খাতকে পছন্দ হওয়ার কারণটা কি? এই জায়গাগুলো তাদের পছন্দ করার কারণ কি? এটি ভাবনার বিষয়। এ কারণে পছন্দ করছে যে, এখানে বিনা পরিশ্রমে লাভ আসছে। লাভ দু’রকম ভাবে আসছে। একটি হচ্ছে জেনুইন লাভ। দ্বিতীয়টি, কারসাজির লাভ। এই জায়গাগুলোতে যদি ডিরেক্টরশিপ নিয়ে প্রবেশ করা যায়, পরে সেখানে আরও কিছু ছাতা গজানো কোম্পানি খোলা আছে। সেই কোম্পানির নামে এখান থেকে ঋণের আকারে টাকাগুলো যাচ্ছে। এখান থেকে ব্যবসার আড়ালে আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়ায় আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এই অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে অনাবাসী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশের আর্থিক সেক্টরে পুঁজি বিনিয়োগে কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং লোকসান হচ্ছে। এটি একটি ফাঁদের মতো। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে আমানত নিচ্ছে। অর্থ সঙ্কট দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ধর্না দিয়ে সুদ মওকুফ, রি-সিডিউল ইত্যাদি সুবিধা নিচ্ছে। অনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। চূড়ান্ত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আর্থিক দিক থেকে এনআরবি বিনিয়োগ ক্ষতির কারণ। ডলার চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা বাবার জমিজমা বিক্রি করে, বহু রকম প্রতারণার শিকার হয়ে, নির্যাতনের শিকার হয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে ঘাম ঝরানো টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। সেই অর্থগুলোই আমদানির নাম দিয়ে, ব্যবসার নাম দিয়ে বিদেশে পাচার করছে। প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে এনআরবি নামধারী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ভূমিকাই রাখছে না। এই প্রক্রিয়ায় পাচার রোধে কি করণীয়-প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, এনবিআর, কাস্টমসের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় রয়েছে। দেশে কতগুলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দরকার সেটি ভাবনার বিষয়। যারা আর্থিক খাতেই শুধু বিনিয়োগ করছেন তাদের অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আরও

আরও পড়ুন

সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান

সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান

সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে আটকা পড়েছেন ৭১ পর্যটক

সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে আটকা পড়েছেন ৭১ পর্যটক

জকিগঞ্জে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু

জকিগঞ্জে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু

বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতির লক্ষে ইসিফোরজে’র প্রি-ওয়ার্কশপ

বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতির লক্ষে ইসিফোরজে’র প্রি-ওয়ার্কশপ

উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন

উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন

ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা

কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন

নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন

হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট

হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট

শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক

বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩

বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী

বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী

সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি

সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি

পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক

পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক

‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’

‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’

আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ

আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু