আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হলে কী হবে তা জনগণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটা যে এসছিলো সেটা তো একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছিলো, এটা অস্বীকারের উপায় নেই।

আমরা জনগণকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি বলেই তা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা চাই যে, জনগণের মতামতটা উঠে আসুক সেই কারণে আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন আপনি জনগণকে মানবেন না, বিচ্ছিন্ন করে দেবেন, জনগণের মতামতকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেবেন, কোনো পাত্তাই দেবেন না। এখন তো সেই রাস্তায় চলে গেছেন- যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে হবে। গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা কলেন।

নির্বাচনে বিএনপি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মূল বিষয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এটি তৈরি করার জন্য আমরা যেটা বলেছি সবার আগে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করেন, নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর পর নির্বাচন হবে আমরা এক‘শ বার নির্বাচনে যাবো।

তিনি বলেন, আমরা ২০১৪ সালে বয়কট করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমরা ওয়াক ওভার দিতে চাইনি। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার না দুই দফা তিনি সকলের সামনে প্রমিজ করলেন যে, একদম নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, কোনো রকমের অত্যাচার-নির্যাতন হবে না, পুলিশি নির্যাতন হবে না, প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, ভোটে কারচুপি-ছলচাতুরি এগুলো হবে না। বার বার করে উনি বলেছেন। কিন্তু কি লাভ হয়েছে? এখন আপনি যা ই বলেন, যত সুন্দর ভাষায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার যাই বলেন কি হবে?

সাংবাদিকদের নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন সাংবাদিককে সিআিইডি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে, এটা ভয়াবহ ঘটনা। গতকাল রাতে সময় ও একাত্তর টেলিভিশনে একটা ফিচার করেছে যে, এই মুহুর্তে কেনো সরকারকে বিব্রত করার জন্য এই ধরনের একটা সে রিপোর্ট করেছে? কি অপরাধ করেছে সেই সাংবাদিক, তা বুঝলাম না।সত্য যে ঘটনা সেই ঘটনা সে তুলে ধরেছে। একজন মানুষের যে উক্তি সেই উক্তিটা তুলে ধরেছে। কি এমন অপরাধ হয়েছে? অপরাধটা কি বলছে যে, ২৬ মার্চের দিন এটা করা হয়েছে যে, স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়েছে, তার মানহানি করা হয়েছে, এটা বলা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, একজন মানুষ যদি স্বাধীনতার দিন ক্ষুধার্ত বোধ করে, সে যদি বঞ্চিত বোধ করে এবং সে যদি ওই কমেন্টটা দেয় যে, আমার এই দেশ স্বাধীন হয়ে কি লাভ হলো? কি অপরাধ হয়েছে, অপরাধটা কোথায়? এটা তো সত্য যে, স্বাধীনতা আমাদেরকে খেতে দেয় না, এভাবে মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা করে সেই স্বাধীনতা সম্পর্কে তো প্রশ্নই উঠতে পারে। তা লাভ কি? খেদ উক্তি যেটাকে বলে। তার অর্থ তো এই নয় যে, সে স্বাধীনতা বিরোধী। সাংবাদিক শাসুজ্জামান শাসন রিপোর্ট করেছেন তার জন্য তাকে তুলে নিয়েছে সিআইডি।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার কারণে একজন সাংবাদিককে যদি হেনস্তা করতে হয় সেটা কি সরকারকে কোনো প্লাস পয়েন্ট দিচ্ছে, কোনো ক্রেডিট দিচ্ছে। ইন নো ওয়ে। ইতিহাস বলে বাংলাদেশে সবসময় এই ধরনের কাজ যে সরকারগুলো করেছে, পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে কেউই কিন্তু রক্ষা পায়নি। এটা করে তো সরকারের লাভ হবে না। তিনি শাসসুজ্জামান শামসের আটকের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

স্থায়ী কমিটির সভায় ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিকদের দেশে বসবাসকারী নিকট আত্বীয় স্বজনদের উপর ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল ‘আল জাজিরা’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলকার নাইন সায়েব খান সামিরের ভাই মাহিনুর আহমেদ খানকে গত ১৭ মার্চ সাদাপোষাকধারী লোকেরা মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করার ঘটনাও নিন্দা জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

নওগাঁয়ে সুলতানা জেসমিন হত্যা নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, একথা নিসেন্দেহে প্রমাণিত যে, সুলতারা জেসমিন র‌্যাব কাস্টডিতে মারা গেছে যা চরমভাবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক অধিকারগুলো এ বিষয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে এবং সুলতানা জেসমিনকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছে।

স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন মহিলাকে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা ব্যাতিরেখে তুলে নেওয়া এবং ফলোশ্রুতিতে তার মৃত্যু আবারো প্রমাণ করেছে যে, এই সরকারের অধীনে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেচ্ছাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে।

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সংলাপ নেই: বিএনপি মহাসচিব বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোন সংলাপ নেই। আগে নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে আসতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের বিষয় আসলে তখন আমার দল বিবেচনা করবে। আমাদের স্পষ্ট কথা- নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো আলাপ নেই।

বর্তমান প্রধান নির্বাচন নির্বাচন কমিশনারের সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান তিনি বলেন, বর্তমানে মূল রাজনৈতিক সংকট নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসু হবে না এবং তা হবে অর্থহীন।২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয় এবং ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নেই।

তিনি বলেন, আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়েছে যে, যেহেতু মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময় সম্ভব নয়। সেই কারণে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহন করতে পারছে না। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে চিঠি দেয়ার জন্য স্থায়ী কমিটির সভায় ধন্যবাদ জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংলাপের সুযোগ কেনো নিচ্ছে না এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যার কোনো ক্ষমতাই নেই আমার দেশের এই সমস্যা সমাধানের তার (ইসি) কাছে এই সুযোগ (সংলাপ) কি জন্য নেবো? উনি তো মেইল বক্স নন যে, উনার কাছে পাঠিয়ে দিলাম, উনি পাঠিয়ে দিলেন সরকারের কাছে। এটা এবসেলুইটলি সরকারের ব্যাপার। যেহেতেু গভমেন্টের পার্লামেন্টে টু-থার্ড মেজরিটি আছে, গভমেন্ট ক্যান দিস, নো বডি এলস ক্যান টেক দিস। আমরা বার বার আন্দোলন করে এই কথাটা বলছি যে, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তন করেই ওই জায়গায় যেতে হবে। সুতরাং ওটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে, সরকারকেই আসতে হবে। আমাদের কথা খুব পরিস্কার যে, এই বিষয় ছাড়ার আর কোনো বিষয়ে আলোচনার আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। গত মঙ্গলবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হয়।###