সিট পাচ্ছে না অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে থাকছে গেস্ট
০১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সিট ছাড়াই পড়াশোনা শেষ করতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখা যায় মেয়েদের হলগুলোতে। এসব হলগুলোতে দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই মোটামুটি সব শিক্ষার্থী সিট পেয়ে থাকে। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলে। তৃতীয় বর্ষের শেষ দিকে এসেও এই হলে সিট পাচ্ছে না অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব শিক্ষার্থী।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে সিট দিচ্ছে না হল প্রশাসন। এদের অনেকেই ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুমে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। আবার অনেকে হলে সিট না পেয়ে মেসে থাকছেন। যদিও এর আগের কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষে এসেও গণরুমে থাকার নজির নেই বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদেরকে সিট বরাদ্দ দেয়ার আগেই ভাইভা ডেকেছে, অভিভাবক ডেকে কথা বলেছে কিন্তু সিট দেয়নি। বারবার লিখিত আবেদন করেও আমরা সিট পাচ্ছি না। সিটের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে আমাদের সাথে বাজে আচরণ করা হয়। ম্যামদের কাছে আমাদের কোনো সমস্যার কথা বলা যায় না। কথা দিয়ে কলিজা ঝাঁজরা করে দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের মাঝে যাদের পজিশন আমাদের পেছনে তাদেরও অনেকে সিট পেয়ে গেছে। ম্যামরা শুনে ছাত্রলীগের কথা। আমাদের কথা শুনে না। ছাত্রলীগ যাকে পছন্দ করে ম্যামরা তাকেই সিট দেয়। আমি প্রচুর মেন্টাল প্রেশারে আছি। ম্যামরা আমাদের সাথে অন্যায় করেছে। তৃতীয় বর্ষ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বছর দেড়েকের মধ্যেই অনার্স শেষ। অথচ এখনো একটা সিট পাচ্ছি না থাকার জন্য! এটা আমাদের জন্য সত্যিই হতাশার।
কান্নাজড়িত কন্ঠে আরেক শিক্ষার্থী ইনকিলাবকে বলেন, এই পর্যন্ত আমাদেরকে কয়েক দফায় আবেদন করতে হয়েছে। সিট কনফার্ম হওয়ার আগেই আমাদের ভাইভা ডেকেছে, এলাকা থেকে অভিভাবক ডেকেছে, লোকাল অভিভাবক ডেকেছে। কিন্তু সিট দিচ্ছে না। ম্যাম আমাকে বলেছে সিট দেয়া হবে না কারণ সিট নেই। এর কিছুদিন পরেই দেখেছি দ্বিতীয় বর্ষের ২০জনকে সিট দিয়েছে।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমরা এখন ৪ জনের রুমে ১২জন থাকছি। ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতেও বাধ্য হচ্ছি। কোনো কোনো রুমে ফ্লোরিং করে সিনিয়র জুনিয়র একসাথে ২০ জনও থাকতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যান্টিনের খাবারের মান খুবই বাজে। তাই হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিজেরা রান্না করে খায়। কিন্তু আমরা যারা গণরুমে থাকতে হচ্ছে তাদের এই সুবিধাটা নেই। এখানে রুমে চুলা ব্যবহার করা যায় না। ওয়াশরুমে সিরিয়াল ধরতে ক্রস করতে হয় লম্বা লাইন। খাওয়া দাওয়া, ওয়াশরুম, গোসল সবকিছুতেই আমাদের ভোগান্তি। ম্যামদের কাছে এসব বিষয়ে জানালে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। উল্টো বকা খেয়ে আসতে হয়। অনেকেই এসব নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়, কারণ পরিচয় প্রকাশ পেয়ে গেলে তখন ম্যাম এবং আপু (ছাত্রলীগ নেত্রী) দুই জন থেকেই বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে এই জন্য।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি রাতে হল প্রভোস্ট প্রফেসর নাজমুন নাহারের পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থী। এসময় শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমে জানান, হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত রেখে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট দেয়া হচ্ছে। হলের কোনো সমস্যার কথা প্রশাসন কানে নেয় না।
এ সময় এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যদি বলি ক্যান্টিনে খাবারের দাম বাড়লেও মান কমে গেছে, তখন প্রভোস্ট ম্যাম ক্যান্টিন মালিকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। হলের সমস্যা নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ফেসবুকে কিছু লিখলে তাঁকে ডেকে নিয়ে অপমান করেন। এমনকি পরিবারকে ফোন করে ওই শিক্ষার্থী সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন তিনি। বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতে বলতে সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।
এদিকে এই হলের ঝুঁকিপূর্ণ মনোয়ারা ভবনে টাকার বিনিময়ে থাকতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী জানান, ম্যামরাও জানেন এই ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদেরকে বলে দেয়া হয় নিজ দায়িত্বে এই ভবনে থাকার জন্য। এক্ষেত্রে কারো থেকে ৩ হাজার কিংবা কারো কারো থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। মূলত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই ভবনে গেস্ট হিসেবে রাখা হয়। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ধীরে ধীরে এখান থেকে লিগ্যাল সিটে উঠানো হয়।
সিট বন্টনের দায়িত্বে থাকা হাউজ টিউটর মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ফারজানা বেগম বিস্তারিত জানার জন্য অফিসে যাওয়ার কথা বলেন। এছাড়া তিনি হল প্রভোস্ট নাজমুন নাহারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এদিকে হল প্রভোস্ট প্রফেসর নাজমুন নাহারকে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষার্থীরা কিছু বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য এসেছিল।এসব বিষয়ে স্থানীয় হল প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে যারা এসব ব্যবস্থাপনা করে থাকে। ওই হলে বাস্তবিকই অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

হাসনাত আব্দুল্লাহ’র গাড়ি হামলার অভিযোগ

মতলবে যৌথ বাহিনী কর্তৃক ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক

কমলগঞ্জে পরিত্যক্ত বস্তা ভর্তি সিমেন্ট থেকে পাথর ভেঙ্গে খোয়া তৈরি হচ্ছে

ধামরাইয়ে মাদক না ছাড়লে এলাকা ছাড়তে হবে- ওসি মনিরুল ইসলাম

এক অসহায় কৃষাণীর ধান কেটে বাড়িতে তুলে দিল তালতলীর কৃষক দল

আটঘরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা মোটরসাইকেল চালক নিহত

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে রহস্যাবৃত্তেই আটকে আছে সেই ‘আয়নাঘর’,

পদত্যাগ করেছেন এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান

গাজায় সুড়ঙ্গ বিস্ফোরণে ২ ইসরাইলি সেনা নিহত

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বহাল তবিয়তে, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
পাকিস্তানে মুক্তি পাচ্ছে জংলি'র উর্দু সংস্করণ

নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে নেতৃত্বে সোহান

হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে তামিল প্রতিবেদন ১৮ মে

কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের বেহাল দশা

দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরলো ১৫ জনের প্রাণ

কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা স্বপন ফকিরের কারখানায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি, ১৫ লাখ টাকার মালপত্র লুট

৯ বলে ২, এরপর ১৬ বলে ৫৫

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার

সোমবার থেকে হাবিপ্রবি-তে ২০২৫ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু

পদ্মায় ধরা পড়লো ৩২ কেজি ও২৫কেজি ওজনের দুই কাতল