কোনো কথা শুনতে চাই না, নির্দলীয় সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে
১০ জুন ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ডেড’ নয়, এখন ‘লাইভ’ ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা কোনো কথা শুনতে চাই না। আগে পদত্যাগ করুন, তারপরে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচন কালীন একটা নির্দলীয় সরকার গঠন করবার জন্য সেই ব্যবস্থা নিন। নতুন নির্বাচন কমিশন নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে কারণে আমরা বার বার করে বলছি যে, এই সরকারের এখন থাকার আর কোনো কারণ নেই। তারপরও তার নেতা, তার মন্ত্রীরা বলছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেড ইস্যু। ডেড ইস্যু হবে কেনো? এটাই তো এখন সবচেয়ে লাইভ ইস্যু। কারণ আমরা মনে করি যে, এই সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। এতো চুরি করেছে, এতো দুর্নীতি করেছে এবং একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কারণ নেই। সেই কারণে আমরা বলেছি যে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা একটা নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্দলীয় সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। কারণ তারা জানে যে, তারা এতো চুরি-চামারি করেছে যে, সাধারণভাবে যদি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হয় তাহলে কোনো দিনই তারা ক্ষমতায় ফিরে আসা দূরে থাকুক, পার্লামেন্টে ১০ ভাগেরও বেশি ভোট পাবে না। সেই সরকার আজকে ক্ষমতায় বসে আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুইটা নির্বাচন ইলেকশন দেখেছে। আবার ওই জায়গায় ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। ১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদেরকে ডেকেছিলেন সংলাপের জন্য, আমরা গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমরা মনে করেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা অবস্থা তৈরি হয়। সেই অবস্থায় আমরা যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারি। তাহলে হয়তবা জনগণের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবো। কিন্তু তারা প্রতারণা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছেন যে, যখন নির্বাচন চলবে, নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে যে, তখন আর কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না। এই কথা কে বিশ্বাস করবে? সেই রাখাল বালকের গল্পের মতো। বাঘ আসছে, বাঘ আসছে বলে চিৎকার করবে আর গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে বেরিয়ে আসবে, এসে দেখে কিছু নেই রাখাল বালক হাসছে। তৃতীয়বার কিন্তু সত্যিই বাঘ এসেছে কিন্তু রাখাল বালকের চিৎকারে গ্রামবাসী কেউ আসেনি। আমরা তো দুইবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। থার্ড টাইম এদেশের মানুষ আর প্রতারণার স্বীকার হবে না। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এই সমস্ত কথায় কেউ ভুলবে না। কারণ কখনই তোমরা প্রমিজ রক্ষা করেনি।
দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে অর্থনীতির সাবেক এই শিক্ষক বলেন, এতো বেশি উন্নয়নের কথা বলেছে, কিছুদিন আগে মুখে খৈ ফুটেছে। সব দিকে নাকী তারা উন্নয়নে একেবারে সমুদ্র বইয়ে দিয়েছে। আমরা তখনও বলেছি, গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন কখনো উন্নয়ন হতে পারে না-এটা টেকসই নয়। এটা ভেঙে যাবে। আজকে দেখুন আমাদের কথার প্রতিধবনি করছে আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে। সরকার বলছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোড মডেল। আর আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো বলছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ঝুঁকিতে, বাংলাদেশের সাফল্য গল্প টক হয়ে গেছে, সাওয়ার। কথাটা আমার নয়, কথাটা ভারতের টেলিগ্রাফের অনলাইন ভাসর্নে পরাণ বালাকৃষ্ণা বলে একজন প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে এসব এসেছে। আরো এসেছে যে, বাংলাদেশের সরকার ইতোপূর্বে যে সমস্ত দাবি করেছে সেই দাবিগুলো যে কতটা ঠুনকো ছিলো তা ক্রাসিসে যখন বাংলাদেশ পড়েছে তখন সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের পুরো ব্যবস্থাটাই এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। এমনকি রপ্তানি থেকেও ডলার ফেরত আসছে না। রপ্তানির রশিদ সংখ্যা, রপ্তানি শিফমেন্টের সংখ্যা মেলানো খুব কঠিন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন জোর দিচ্ছে কমপক্ষে ৩০ লাখ ডলারের ওপর যেকোনো এলসিতে তারা ক্লিয়ারেন্স দেবে যা বাণিজ্যের জন্য আরো একটি বোঝা হবে। অর্থ্যাৎ ইকোনমি অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ডে। কেনো? এই যে ভয়াবহ, নজিরবিহীন দুর্নীতি, এই দুর্নীতি করে সব কাজগুলো করা হয়েছে।
সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন পত্রিকায় দেখলাম, বাংলাদেশ বিমান নাকী এয়ারবাস কিনবে আরো কয়েকটা। যে বিমান চলতেই পারে না, যে বিমান টাকা দিতে পারছে না জেট ফুয়েলের, প্রতিমুহূর্তে ভতুর্কি দিতে হয়। সেই বিমানের এখন বোয়িং বাদ দিয়ে তারা এয়ারবাস কিনবে। কারণটা কি জানেন? আমি কিছু দিন বিমান মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। বোয়িং কাউকে কিক-ব্যাক দেয় না, কিক-ব্যাক হচ্ছে কমিশন দেয় না। কিন্তু এয়ার বাস কিক-ব্যাক দেয়, কমিশন দেয়। আজকে সমস্ত কিছুর লক্ষ্য একটাই নিজেদের পকেট ভর্তি করা এবং সেই টাকা বিদেশে পাচার করা।
হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার ও মহাসচিব তরুন কুমার দে‘র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অর্পনা রায়, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, প্রয়াত নেতার ছেলে গৌরব চক্রবর্তী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান গৌতম চক্রবর্তীর সহধর্মিনী ও ফ্রন্টের উপদেষ্টা দিপালী সাহা চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চিরিরবন্দরে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দিতে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা
মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক শিক্ষার্থী
আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে চাঁদাবাজি মুক্ত করতে চাই
ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে
আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স
সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা
খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট
আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'
ভারত দলে ফিরলেন শামি
কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন
বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত
সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি : ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রসচিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার
ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত
আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা
রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি
রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ
দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক
তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি