বাণিজ্য হবে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি

আমের রাজ্যে জমে উঠেছে বেচাকেনা

Daily Inqilab রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী থেকে

১২ জুন ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

আমের রাজ্যে (রাজশাহী অঞ্চলে) জমে উঠেছে আমের বেচাকেনা। আম পাড়া সূচি অনুযায়ী গোপালভোগ আর গুটি আম দিয়ে মে মাসের শেষ ভাগ থেকে আমের যাত্রা শুরু। এরপর একের পর এক নামছে নাম স্বাদ আকার আকৃতি নিয়ে বনেদী জাতের আম। আম পাড়া চলছে আম জনতার রসনা মেটাবার জন্য। বাজারে পর্যায়ক্রমে এসেছে ক্ষিরসাপাতি, রানিপছন্দ, ল্যাংড়া। অপেক্ষায় আমের রাজা ফজলী, আম্রপালি, বারোমাসি আর আশ্বিনা।
এবার আবহাওয়া অনূকুল থাকায় গাছ ভরে মুকুল আসে। ধীরে ধীরে গুটি হয়। আম চাষীদের মাঝে স্বপ্ন বাসা বাঁধে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার মুখে পড়ে আম। দীর্ঘ সময় বৃষ্টিহীনতা আর প্রচ- তাপাদহ আম আবাদের বিরুপ প্রভাব পড়ে। খরতাপে গুটি ঝরতে থাকে। সেচদিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা ছিল। গরমের কারণে আম গায়ে গতরে বড় হতে পারেনি। অন্যবারের চেয়ে এবার সব আমের আকার বেশ খানিকটা ছোট। বিশেষ করে বড় গাছের। তবে আবার ছোট হলেও গরমের কারণে আমে মিষ্টতা বেড়েছে। এবার আমের জন্য রাজশাহী অঞ্চলে (রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগা, নাটোরে তিরানব্বই হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে এগারো লক্ষ্য মেট্রিকটণ আম। যার বাজার মূল্য দশ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ব্যবসায়ীরা জানান, মাঠ পর্যায়ে ক্ষিরসাপাতি বারোশত টাকা মন দরে শুরু হলেও এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম আরো কমেছে। ক্ষিরসাপাতি, ল্যাংড়া, রানীপছন্দ আম গ্রামে এক দেড় হাজার টাকা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর আমের বাজারে এসে দাম বদলে যাচ্ছে। বনেদী বাজারে দেড় দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার এখনো তাপাদহ থাকায় খুব দ্রুত আম পেকে যাচ্ছে। ফলে গাছে বা আড়তে রাখা যাচ্ছেনা। দুদিন ঘরে রাখলে তা আর দেশের অন্যস্থানে পাঠানোর মত অবস্থা থাকছেনা। এসব পাকা আম নিয়ে লোকসানে পড়েছেন চাষী আর ব্যবসায়ীরা। এসব আম স্থানীয়ভাবে হাজার ১২০০ টাকা মন হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। তাই আমের স্বাদ নেবার সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলাচ্ছেনা।
ম্যাঙ্গো স্পেশাল নামে আম পরিবহনের জন্য একটি ট্রেন চাপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা চালু হয়েছে। এদের এখানে প্রতি কেজি আম পাঠাতে দেড় টাকার বেশি নয়। কিন্তু এদের তেমন পরিকল্পিত প্রচার প্রচারণা না থাকায় সাধারণ মানুষকে কুরিয়ার সার্ভিসের মত আকৃষ্ট করতে পারছেনা। ব্যবসায়ীরা বলছেন এজন্য আম বাজার গুলোতে তাদের বুথ থাকা প্রয়োজন। যাতে করে সহজে মানুষ আম বুকিং দিতে পারে। তাহলে আম পরিবহনে রেলকে লোকসান দিতে হবেনা। মানুষও সুফল পাবে।

এদিকে পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক ভাবে আম চাষ বাড়ায় বিদেশে আমের চাহিদা বাড়ছে। ইংল্যান্ড, সুইডেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে আম যাচ্ছে। এজন্য বিষমুক্ত ও দেখতে সুন্দর করার জন্য ব্যাগিং আম প্রযুক্তি বেশ কাজে দিয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাগিং আমের জনক ড. শরফ উদ্দিন বলেন, স্বাদ ও গন্ধ পুষ্টিমানের আমাদের আম ভাল হলেও রফতানিতে ভাল স্থানে নেই। অথচ বিভিন্ন দেশে আমাদের আমের চাহিদা রয়েছে। তবে বিদেশে আম রফতানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনী মার প্যাচের কারনে আম রফতানি করা সম্ভব হচ্ছেনা। এখানকার কৃষি অধিদফতর বিদেশে রফতানিযোগ্য নিরাপদ আম উৎপাদনে বিশেষ কার্যক্রম নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উপজেলার ২০০ বেশি আম চাষীকে প্রশিক্ষণ আর কীটনাশক ট্রেনিং ফ্রুটব্যাগ ও নগদ টাকাও দেয়া হয়েছে। তাদের উৎপাদিত আম দেশের বাইরে পাঠানোর কাজ চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, আম রফতানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি আছে। কোন ধরণের ঝামেলা ছাড়াই এবার এসব আম বিদেশ যাবে। ইতোমধ্যে এক বাগানী সুইডেন ও ইংল্যান্ডে তার আম পাঠিয়েছে। রাজশাহীর বাঘাতেও অনুরুপভাবে বাছাই করা কৃষকদের আম বিছুটা হলেও বিদেশ যাত্রা শুরু করেছে। ড. শরফ বলেন, ভাল মানের আম দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিং করে আমের রফতানি ভাল ফল বয়ে আনবে। আসবে বৈদেশিক মুদ্রা। এখানকার আম অর্থনীতি আরো বড় হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের
স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা
সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি
আরও

আরও পড়ুন

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের

স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা

স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা

সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি

সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি

গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত

এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া

বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ

বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ

হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন

হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন