চট্টগ্রামে ৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা ব্যয়েও মিলছে না সুফল : বর্জ্যে ভরা খাল-নালা-নর্দমা

এবারও পানিবদ্ধতায় দুর্ভোগ

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

১২ জুন ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমছে। তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকা। পানির সাথে নালা-নর্দমার আবর্জনা উপচে পড়ছে সড়ক, অলিগলি, হাট-বাজার, মার্কেট, বিপণীকেন্দ্র, বসত-বাড়ির আঙ্গিনায়। পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে এবারও রেহাই মিলছে না। অথচ প্রতি বছর বর্ষার আগে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নানা আশার বাণী শোনানো হয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীর প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতা। এই সমস্যা থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় চারটি প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। তবে এর সুফলও মিলছে না। মহানগরীর বেশিরভাগ খাল, নালা-নর্দমা এখন আবর্জনার ভাগাড়। খাল-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে বৃষ্টি হতেই রাস্তায় পানি জমছে, আর খালে পানি যাচ্ছে না। দেখলে মনে হয় রাস্তা যেন খাল আর নর্দমা যেন কোন গ্রামের সড়ক। কয়েকটি খালে চলছে সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ। কাজের জন্য এসব খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তাতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর অনেক এলাকা।

সর্বশেষ গত শনিবার মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে নগরীতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তার আগে ৩১ মে এবং ১ এপ্রিলও অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। এ অবস্থায় সামনে বর্ষায় টানা বর্ষণে পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়া, নগরীর নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না করা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে মহানগরীতে পানিবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। মহানগরীর খালগুলোর মুখে সøুইস গেইট নির্মাণ শেষ না হওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকছে নগরীতে। গতকাল দিনভর নগরীতে বৃষ্টি ছিল না। তবে প্রবল জোয়ারে হালিশহর, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, শুলকবহরসহ অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ দুটি, সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে শুধু দুর্ভোগই বাড়ছে। নগরীতে পানিবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। বিগত ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজে অগ্রগতি না হওয়ায় তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। এখন মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১৮ কোটি টাকা। সিডিএর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
পানিবদ্ধতা নিরসনে দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এ প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর চাক্তাই থেকে শুরু করে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে একটি সড়ক নির্মাণ এবং ১২টি খালের মুখে সøুইস গেইট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে এর মধ্যে এক হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আর প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ১২টি খালের মুখে সøুইচ গেইট নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এসব খাল দিয়ে আসা জোয়ারের পানিতে মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিবদ্ধতা হচ্ছে। নয় বছরেও বহদ্দারহাট-বারইপাড়া থেকে বলিরহাট পর্যন্ত একটি নতুন খাল খননের কাজ শেষ করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে এক হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু খাল খনন কাজ শেষ না হওয়ায় মহানগরীর ষোলশহর ২নং গেইট, মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট-বারইপাড়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, চাক্তাই এলাকায় পানিবদ্ধতা সমস্যা প্রকট আকার নিয়েছে।

নগরীর ২৩টি খালের মুখে সøুইস গেইট এবং পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত নদীর পাড়ে প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ চলছে শম্ভুক গতিতে। পানিবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্পগুলোর ধীরগতির কারণে সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর খাল-নালাগুলো যথাসময়ে সংস্কার করছে না। এর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে পারছে না। তাতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের
স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা
সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি
আরও

আরও পড়ুন

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের

স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা

স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা

সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি

সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি

গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত

এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া

বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ

বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ

হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন

হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন