লক্ষণ দেখা মাত্রই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে : প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

রাজধানীর দুর্যোগ ডেঙ্গু

Daily Inqilab হাসান সোহেল

১৫ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩, ১২:০৯ এএম

জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে : প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আগেই শুরু হয়েছে : প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম
সমন্বিতভাবে ডেঙ্গুকে মোকাবিলা করতে হবে: প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার
বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এবার রাজধানীতে বাড়তে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা। দ্রæত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। মৃত্যু হারও বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশের কোন কোন স্থান থেকে মৃত্যুর খবর আসছে। গতকাল একদিনে সারাদেশে সর্বোচ্চ ২৮৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, একজেনর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশে ৪৮ রোগী আর ঢাকার বাসিন্দা ২৩৭ জন ভর্তি হন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা সরকারি তথ্য। বাস্তবতা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। এসব রোগী পাড়া মহল্লার হাসপাতালে পরীক্ষা করে বাসাবাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এডিস মশা নিধনের নামে ‘ডেঙ্গু ধরো, ডেঙ্গু মারো’ ইত্যাদি মিডিয়া কভারেজ উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুম শুরুর আগেই ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা বেশি। সেদিক থেকে প্রাক-মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়া এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা সুপারিশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২০১৯ সালে এমন অবস্থা হয়েছিল, দেশে ডেঙ্গু জ্বরের নাম শুনলেই ভয়ে কেঁপে উঠতো সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এক লাখেরও বেশি মানুষ ভর্তি হয়েছিল। ওই বছর ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে মারা যান। এর বাইরেও তখন একটা বড় অংশ হাসপাতালের আউটডোর, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার এবং ঘরে বসে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের ধারণা রাজধানীর ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ তখন আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত বছরও সরকারি হিসেবে ২৮১ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। আশঙ্কা রয়েছে এ বছর ডেঙ্গুর যে প্রাদুর্ভাব তাতে আক্রান্তের হিসাবে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে। যদিও ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মশা নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাদের আরও বেশি করে কাজ করা উচিত। এখনো তাদের কাজে অনেক গ্যাপ রয়েছে। যে পর্যন্ত রোগী বাড়তে থাকবে সে সময় পর্যন্ত আমরা ভাবব ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসে নাই। যেখানে স্প্রে করা হয় নাই, এখনো বেশি (মশা) আছে তা কমানো দরকার। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইদানিং আমরা ডেঙ্গুর প্রভাব দেখছি। বিশেষ করে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। নিজেদের বাড়ি-ঘর ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশা যেন না কামড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তাই স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি তিনি জনগণকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহŸান জানান।

সূত্র মতে, ডেঙ্গু মৌসুম আসার আগেই সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ২৯ জন। রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগী বেশি আসছে হাসপাতালগুলোতে। গতকালও ২৮৫ রোগীর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে ঢাকার বাইরে চট্রগ্রামেও এ বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৩৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে ঢাকার ৫৩ টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৭৬৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭১ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত সারাদেশে ৪ হাজার ৮৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ডেঙ্গু নিয়ে সামনে আরেকটা বড় দূর্যোগ অপেক্ষা করছে। যার আভাস মিলেছে গেল বছর। আগে এই রোগটিকে শহুরে রোগ বলা হলেও ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও। গেল বছর মোট ৬২৩৮২ ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ২৩১৬২ জন। এর বাইরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিতে যা ছিল ১৫৩৫২ জন। এ বছরও ঢাকা শহর ও ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগির সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি।

ডেঙ্গু শুরুর ২৪ বছর পরেও মিলছে না প্রতিরোধের ভ্যাকসিন। তাই ভ্যাকসিনের আশা না করে, ডেঙ্গু মশা নিধন করতে পারলে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বর হলে মৃত্যুর আশঙ্কা কম। তবে গর্ভবতী মায়েদের দ্বিতীয়-তৃতীয় দফায় ডেঙ্গু জ্বর হলে, জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর লক্ষণ বা উপস্বর্গে কিছুটা নতুনত্ব এসেছে। তবে ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তন আসেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু বা এডিস মশা পরিষ্কার ও ময়লা দু’ধরণের পানিতে জন্মায়। কেবল দিনে নয়, এরা রাতেও কামড়াতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার আহŸান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন, রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে কমে গেলে, শরীরে রক্ত দিতে হবে এমনটা নয়। বরং রক্তপাত হলেই রক্ত গ্রহণ করা যাবে। তবে সবকিছুই করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে। তাই লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসক এবং হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ তাঁর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন অহমেদ বলেছেন, জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবার অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য বছরের এই সময়ের তুলনায় কয়েকগুন ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৯ সালের দেশে যে ভয়াবহ ডেঙ্গুর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল (রোগী ১ লাখ ছাড়িয়েছিল)। আশঙ্কা করা হচ্ছে সে রেকর্ড ভাঙ্গবে এ বছর। কারণ অন্যান্য সময়ে বর্ষায় জুন-জুলাই থেকে শুরু হয় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। এ বছর জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা সেবা ও সচেতনতায় সব প্রস্তুতি নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশবাসীকে এজন্য সচেতন করতে চাই, যাতে সবাই এই মৌসুমে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলি। প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, মশার প্রজণণ ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে, উড়ন্ত মশা মারতে হবে এবং সঠিক বর্জ ব্যবস্থাপনাই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে পারে। একই সঙ্গে জনগনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সফলভাবে এটি সম্পন্ন করতে হবে।

এদিকে রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। অবশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্তৃপক্ষ ৩টি ওয়ার্ডকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ঢাকা মহানগরীর পর দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী কক্সবাজারে। সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রæত বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) গত বছরের শেষ দিকের এক জরিপের তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ডেঙ্গু ডেন-৩ ভ্যারিয়েন্টে দিয়ে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন। তবে গত বছর থেকে ডেন-৪ ভ্যারিয়েন্টে কিছু রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০০৩ সালে ডেন-৪ দেখা দিয়েছিল। এর পরে ডেন-৪ ছিল না। গত বছর ১১ শতাংশ রোগী ডেন-৪ এ আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয়বার কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসলে তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বেড়ে যায়। এ বছর মৃত্যু বাড়ার এটি একটি কারণে হতে পারে। আবার অনেক মানুষ আছেন যারা সাধারণ জ্বর মনে করে বাড়িতে বসে থাকেন। ক্রিটিক্যাল অবস্থা না হলে হাসপাতালে ভর্তি হয় না। এতেও মৃত্যুহার একটু বাড়ছে।

দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কেন বেশি জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, এটি ঘনবসতিপূর্ণ বড় এলাকা। বড় বড় হাসপাতালগুলো রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষ ঢাকায় আসেন। বিশেষ করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে মানুষের কাছে সুপরিচিত। তাই এখানে রোগী আসছে বেশি। একই সঙ্গে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ রোগী ঢাকার বাইরে থেকে আসে। এসব রোগীরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তাদের কোনো না কোনো আত্মীয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে। তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেও বলা হয়েছে। যার যার জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে সমস্যা হয় না। একই সঙ্গে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একার দায়িত্ব নয়। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড চিহ্নিত করে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ে গবেষণা করছেন। কেন এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আগেই বাড়ছে জানতে চাইলে বলেন, গত বছরের শেষ দিকেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তা অব্যাহত থাকে। ফলে ধারাবাহিকতায় জানুয়ারিতে এসেও রোগী থেকে যায়। তিনি বলেন, ঢাকায় সব সময়ে নির্মাণকাজ চলে। ফলে বাসাবাড়িতে পানি জমে থাকছে। তাতে এডিসের লার্ভা হচ্ছে। এটি বৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অন্যদিকে এ বছর মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য এডিস মশার বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া এখন গ্রামেও নগরায়ন হচ্ছে। ফলে শহর থেকে জেলা শহর বা উপজেলায়ও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে সচেতনতার পাশাপাশি সমন্বিতভাবে ডেঙ্গুকে মোকাবিলা করতে হবে। কারো একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও পরামর্শ
ডেঙ্গুর প্রকোপ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। মানুষের মধ্যে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে দেশের প্রখ্যত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে জ্বরের কথা বলেছেন। যা ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা ও চামড়ায় লালচে দাগ (র‌্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছে। একই সঙ্গে জ্বর হলে বিশ্রামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমনÑ ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। তবে প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট ও কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা থাকে; তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরের ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুর তিনটি ভাগ আছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা মোটামুটি স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীর সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুই দিন জ্বরের পরে শরীর ঠাÐা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু সবচেয়ে খারাপ। ক্ষেত্রবিশেষে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে ও সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে ওঠে। তবে অন্ধকারে কখনো কামড়ায় না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আরও

আরও পড়ুন

নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত

নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত

এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি

এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি

সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান

সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান

লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা

বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা

সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি

চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি

‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী

‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী

বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন

বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন

মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব

মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব

গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ

ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ

বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে

সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর

আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি

আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি

হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!

হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!

প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি

প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি

শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু

শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু