ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
বিদেশে নিশ্চিত জীবনের স্বপ্ন ভাঙছে

বিয়েতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নারীরা

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স

১৯ জুন ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ২০ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিদেশে নিশ্চিত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে ভারত সহ এই অঞ্চলের পরিবারগুলির বিদেশী পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। বিয়েতে ভাল প্রবাসী পাত্র লাভের আশায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোটা অংকের আর্থিক সাহায্য বা যৌতুক দিতেও কার্পণ্য করেন না তারা। ভারতের সরকারী কর্মকর্তা এবং মানকাধিকার কর্মীদের মতে, কয়েক হাজার ভারতীয় মহিলাকে প্রবাসী স্বামীরা পরিত্যাগ করেছে, এমনকি কয়েক দশক ধরে স্থানীয় সামাজিক রীতিনীতি অনুসারে তাদের অনেককে শ্বশুরবাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। অনেকের স্বামী যৌতুক, মধুচন্দ্রিমার খরচ এবং বিদেশে ভিসার অর্থ লাভের জন্য প্রতারণা করে বিয়ে করেছেন। যেসব মহিলার স্বামী এভাবে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাত করে পালিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট আইনি প্রতিকার পাওয়া এবং স্বামীরা বিদেশে অবস্থান করায় সাধারণ আইনের অধীনে তাদের বিচার করা কঠিন। একারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না এই ধরণের প্রতারণাগুলি।

খুরাল নামক এক ভারতীয় মহিলা বলেছেন যে, তিনি তার শ্বশুরবাড়িকে তার কাগজপত্র তৈরি এবং ভিসা বাবদ প্রায় ৮হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করেছেন। তবে, তার শ্বশুর এই দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, ‹ওকে প্রমাণ করতে দিন।› তিনি উল্টো বলেছেন যে, তার ছেলে ভারত ছাড়ার আগে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন কারণ দম্পতির বনিবনা হয়নি। খুরাল বাধ্য হয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য সহিংসতার মামলা দায়ের করেছেন। কারণ পুলিশ প্রায়ই এই ধরনের অভিযোগের অধীনে তদন্ত শুরু করে কারণ পালিয়ে যাওয়া স্বামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট আইনের অভাব রয়েছে। কিছু মহিলা তাদের স্বামীর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্য লড়াই করছেন। প্রতারণামূলক বিয়ের শিকার সতি বলেন, ‹আপনার স্বামী আপনাকে কখনই বিদেশে নিয়ে যাবে না, এটি মনে রাখবেন। থানায় মামলা করুন বা অপেক্ষা করে মরুন।’

সাংস্কৃতিক এবং আর্থিক কারণে এই ধরনের ক্ষেত্রে মহিলারা খুব কমই বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। তবে, সম্প্রতি আটজন ভারতীয় নারী দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একটি আর্জি দাখিল করেছেন, যাতে এই বিস্তৃত সমস্যা বলে মোকাবেলা করার জন্য সরকার নীতি প্রণয়ন করে। একজন প্রাক্তন বিচারক যিনি পাঞ্জাবের একটি কমিশনের নেতৃত্ব দিয়ে এই সমস্যাটির তদন্ত করেছিলেন, তিনি জানিয়েছেন যে, শুধুমাত্র পাঞ্জাবেই এই ধরনের ৩০হাজার মামলা রয়েছে। এ অঞ্চলে যুবকরা প্রায়ই বয়স্ক স্বজনদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে, যাতে তারা দেশত্যাগ করতে পারে। মাদকের ব্যবহার, স্বল্প আয়, ঋণের পাহাড় এবং আত্মহত্যার ঘটনার কারণে সবাই তাদের ডলারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পাঞ্জাব থেকে উড়ে যেতে চায়। এবং ভুক্তভোগী নারীরা আংশিকভাবে সেই আকাক্সক্ষার ফল। কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পালন করতে চাইলেও অপ্রত্যাশিত ঘটনা বা কঠোর ভিসার নিয়ম তাদের তা করতে বাধা দেয়।

এই বিষয়ে রাজ্য কমিশনের সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাকেশ কুমার গর্গ সম্প্রতি বলেছেন, ‹এতে অন্যান্য বিপদও লুকিয়ে রয়েছে। কিছু মহিলা তাদের স্বামীর পরিবারের অন্য সদস্যদের দ্বারা যৌন শোষণের অভিযোগ করেন, কারণ তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’ অনেক ক্ষেত্রে, পুরুষরা কানাডার মতো ধনী দেশে অবতরণ করার জন্য অভিবাসন এজেন্টদের অর্থ প্রদানের জন্য যৌতুকের অর্থ ব্যবহার করে। গর্গ বলন, ‘ছেলেরা আসে, ফূর্তি করে, যৌতুকের টাকা নিয়ে চলে যায়। তারপর নাগরিকত্বের জন্য বিদেশে গিয়ে আবার বিয়ে করে। এটা স্রেফ বিশ্বাসঘাতকতা।’ এমন পরিতক্ত্য মহিলাদের সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়, এটি প্রমান করে যে, দেশত্যাগ করার মরিয়া আকাঙ্খার অনেক সতর্কতামূলক গল্পের চেয়েও বেশি ভয়ানক।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
আরও

আরও পড়ুন

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই  শ্রমিকের মৃত্যু

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে  হাতেম

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা