ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ
২০ জুন ২০২৩, ১১:১১ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রতি বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এ সময় নদীভাঙনেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে পদ্মা, যমুনা ও তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। আমাদের সংবাদদাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন-
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের পদ্মা-যুমনা অববাহিকায় পদ্মা অধূষিত ভাঙনকবলিত অন্যতম উপজেলা হরিরামপুর। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আন্ধারমানিক খেয়া ঘাটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক।
গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে আন্ধারমানিক ট্রলার ঘাটে প্রায় তিনশো ফিট দৈর্ঘ্য এবং প্রায় বিশ ফিট প্রস্থ এলাকায় ঢেউয়ের আঘাতে নদী গর্ভে চলে গেছে। ২০১৬ সালে তীর রক্ষার জন্য যে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে ২ থেকে ৩ দিন এভাবে ভাঙতে থাকলে জিও ব্যাগেও ধস নামতে পারে এলাকাবাসী দাবি করেন।
আন্ধারমানিক ঘাটের ট্রলার চালক শেখ রুবেল জানান, যে হারে পানি বাড়ছে তাতে খুব তাড়াতাড়িই জিও ব্যাগ পর্যন্ত চলে আসবে। এখন জরুরিভাবে নতুন করে জিও ব্যাগ না ফেললে আরো ক্ষতি হবে। নদীর মাঝ দিয়ে খনন করে পানির গতিপথ পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
ট্রলার ঘাটের মুদি দোকানদার শেখ ইউসুফ জানান, দুই বছর আগে এখানে অনেক বড় চর পড়ায় ভাঙন দেখা যায় নাই। কিন্তু গত এক সপ্তাহ যাবৎ পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে আরো ক্ষতি হবে। আগের জিও ব্যাগেও ধ্বস নামতে পারে। ২ বছর আগে চর পড়লেও বর্তমানে দুই বছর যাবৎ এখানে চর না পড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের সেলিমপুর গ্রামের কয়েক শো পরিবার। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একইসাথে ভাঙন দেখা দিয়েছে গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকায়ও। গত কয়েক দিনে গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকায় পূর্বের জিও ব্যাগসহ ধ্বসে যাচ্ছে নদীর তীর।
গোপীনাথপুর উজানপাড়া গ্রামের রাজা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ায় আগের ফেলানো জিও ব্যাগসহ ফসলি জমি ধ্বসে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরো ভেঙে যাবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে যে সকল স্থানে জোয়ারের পানির ঢেউয়ে ধ্বস শুরু হয়েছে, সে সব স্থানে জরুরি ভিত্তিতে আমরা আপদকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এটা আমাদের প্ল্যানে আছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের ইসলামপুর ৫ নং নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন কাটমা যমুনা নদী ব্যাপক ভাঙনের শিকার ওই এলাকার শতশত মানুষ রাস্তাঘাট জনবসতি ফসলি জমি হাট বাজার স্কুল মাদরাসা মসজিদ গত কয়েক দিনে অবিরাম ভারী বর্ষণে ভারেতর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর ৫ নং নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন ভাঙনের শিকার জবেদ আলী ৩২ জানান, গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ যমুনা নদী পানি বৃদ্ধি সাথে কাটমা যমুনা নদী ভাঙন ও পানি বৃদ্ধিতে ভাংবাড়ী টগারচর ইলনেমারি মাইজবাড়ী পশ্চিম কাটমা জনতা বাজার শতশত ঘরবাড়ি উঠতি ফসল ভাঙনে আতঙ্কে মধ্যে রয়েছে এলাকাবাসী। যমুনা দ্বীপ চর ৪ নং সাপধরী ইউনিয়ন কালির চর কঠাপুর মন্ডলপাড়া জোরডোবা শিশুয়া চর শিশুয়া প্রজাপতিচর কাশারিডোবা বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ওই সব বন্যা কবলিত এলাকাবাসী নৌকা যুগে ঘরবাড়ির মালামাল নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুমান হাসান সাংবাদিকদের জানান, যমুনা নদী পানি বৃদ্ধি সাথে আমার এলাকা কাটমা ব্যাপক ভাঙনে শিকার অনেক পরিবার। আমি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মো. ফরিদুল হক খান এমপি মহোদয় জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি।
ভাঙন এলাকার ভুক্তভোগী শহিদুর জানান, গত কয়েক দিন যমুনা নদী ভাঙনে শতশত পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অনেকেই আবার খোলা আকাশের নীচে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে সরকার নদী ভাঙন রোধ কল্পে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়নি গত বছর নদী ভাঙনের সময় বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করলেও সঠিক ভাবে ডাম্পিং করেনি আমরা এলাকাবাসী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মো. ফরিদুল হক খান এমপি মহোদয় কে আপনারদের মাধ্যমে জানাতে চাই খুব তাড়াতাড়ি ভাঙন রোধ কল্পে স্থায়ী ব্যবস্থা নেন এবং এই ভাঙন দুর্দশা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাকা ভবনের একাংশ ব্রহ্মপুত্র নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। মাত্র চার বছরের মাথায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি নদের গর্ভে চলে গেল। গত রোববার ভোরে ভবনটির একাংশ ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ধ্বসে পড়ে। চলমান ভাঙনের তীব্রতায় পুরো ভবনটি যেকোনোও সময় নদের গর্ভে চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দুই বছর ধরে ভাঙনের কবলে থাকা ভবনটি রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ বছরের শুরুতে বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করেছে। সদ্য বিলীন হওয়া ভবনটি পরিত্যক্ত ছিল। এতে পাঠ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ের নতুন স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙনের তীব্রতায় আগের স্থান থেকে সরিয়ে নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছিল। পাকা ভবনটিতে কিছু আসবাবপত্র রাখা ছিল। গত বছর ভাঙনের পর নদী অনেকটা দূরে সরে যাওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম ভবনটি হয়তো রক্ষা হবে। কিন্তু দুইদিন থেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। রোববার ভোরে ভবনটির একাংশ নদে ধ্বসে পড়ে। বাকিটাও হয়তো চলে যাবে। ভবন নিলামের প্রশ্নে সভাপতি বলেন, নদী ভাঙন বন্ধ ছিল। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এদিকে আর ভাঙবে না। কিন্তু হঠাৎ করে গত রোববার ভোরে ভেঙে পড়েছে। নতুন স্থানে ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে আবারও আবেদন করা হয়েছে জানান তিনি।
কলেজ প্রিন্সিপাল জহিরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি নয়ারহাট ইউপির একমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ভবনটি পাওয়ার পর আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সে আনন্দ মাত্র কয়েক বছরেই বেদনায় পরিণত হলো। শেষ রক্ষা হলো না। এখন নতুন স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট রয়েছে। নতুন ভবন পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সুবিধা হবে।
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পাকা ভবনটি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ধ্বসে পড়েছে। এর দরজা জানালা ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরিয়ে নতুন স্থানে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের কারণে পাকা ভবনটি গতবছর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই স্থান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে ভবন সঙ্কটে অনেক শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। এই চরে পাকা ভবন না দিয়ে চর ডিজাইনের ভবন দেওয়া প্রয়োজন। যাতে ভাঙনের কবলে পড়লে ভবন ভেঙে সরিয়ে নেয়া যায়। আমরা সেভাবেই স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। ভাঙনে নয়ারহাট বাজারের বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছেঃমির্জা ফখরুল ইসলাম
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন
টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই
লাকসামে সরকারি খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়
কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট
ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?
গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু