ডাক বিভাগের ধৃষ্টতা!
২০ জুন ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ‘ই.সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’র নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়। লোপাটের অভিযোগ ওঠে প্রকল্পের পিডি ও ডাক অধিদফতরের তৎকালিন মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। ‘সার্ভার না কিনেই শত কোটি টাকা খরচ! ডাক বিভাগে দুর্নীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠন করে তদন্ত কমিটি। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে এসএস ভদ্রের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। মামলার রায়ে এসএস ভদ্রের অর্থ তছরুপের অপরাধ প্রমাণিত হয়। পরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অর্থ প্রকল্প পরিচালক এসএস ভদ্রের কাছ থেকে আদায়ের রায় হয়। রায়ের এ তথ্য দীর্ঘদিন চেপে রাখে মন্ত্রণালয়। চলতিবছর ২২ মার্চ ডাক অধিদফতরকে লেখা ডাক, টেলিযোযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ তথ্য প্রকাশ পায়।
তাতে দেখা যায়, পোস্ট ই সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পে সরকারের ৯২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ অর্থ আদায় করা হবে প্রকল্প পরিচালক এবং ডাক অধিদফতরের তৎকালিন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সুধাংশু শেখর ভদ্র’র (এসএস ভদ্র) কাছ থেকে। বিভাগীয় মামলার আদেশে রাজস্ব ক্ষতির এই অর্থ আদায়ের নির্দেশ আসে। এর ভিত্তিতে মহামান্য প্রেসিডেন্ট অর্থ আদায়ের অনুমোদন দেন। বলাবাহুল্য, সরকার তথা রাষ্ট্রের অভিভাবক হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। সেই প্রেসিডেন্ট যে দ-াদেশ অনুমোদন করেছেন এটি নিয়ে কোনো ধরণের প্রশ্ন কিংবা আইনগত বিতর্কের অবকাশ থাকার কথা নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এবং অত্যন্ত ধৃষ্টতাপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটি পিডিআর (পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট-১৯১৩) অনুযায়ী রাষ্ট্রের পাওনা এ অর্থ সরাসরি আদায়ের ব্যবস্থা না করে প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের ওপর আইনি মতামত চেয়েছে। প্রমাণিত দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ঢালছে অর্থ। পিডিআর অ্যাক্ট অনুযায়ী পাওনা আদায়ে কোনো ধরণের অস্পষ্টতা না থাকলেও নামী-দামী আইনজীবীর কাছ থেকে মতামত ‘ক্রয়’ করে চেষ্টা চলছে ধোঁয়াশা সৃষ্টির। যা প্রকারন্তে দেনাদার এসএস ভদ্রের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় না করার উদ্দেশ্যকেই নির্দেশ করছে।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবী আলাপচারিতায় জানান, মহামান্য প্রেসিডেন্টের সদয় অনুমোদন লাভের পর সেটির ওপর আইনগত মতামতের প্রয়োজন হয় না। কারণ, সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের আদায়যোগ্য পাওনা যা তামাদি হয়নি-মর্মে সন্তুষ্ট হলে পিডিআর অ্যাক্ট, ১৯১৩ এর ৪ ধারা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হয়। দেনাদারের কাছে দাবিদারের পাওনা জানিয়ে ৭ ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারি করা হয়। দেনাদার দাবিকৃত পাওনা পরিশোধ করেন কিংবা সম্পূর্ণ/আংশিক দাবি অস্বীকার করে আপত্তি দাখিল করতে পারেন। শুনানি শেষে আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়। সার্টিফিকেট কর্মকর্তার আদেশ গ্রহণ না করে দেনাদার সার্টিফিকেট কর্মকর্তার আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারেন। আপত্তি বা আপিল দায়েরের ভিত্তি না থাকলে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেনাদারের দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রথমে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং পরবর্তীতে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও নিলামে বিক্রি করে দাবিকৃত অর্থ আদায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করাই হচ্ছে আইনি বিধান।
কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডাক বিভাগের বর্তমান ব্যবস্থাপনা প্রথমত: একপ্রকার ধৃষ্টতার পরিচয় দেয়। দ্বিতীয়ত: নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে ধোঁয়াশা এবং জটিলতা সৃষ্টি করা। এবং তৃতীয়ত: বিষয়টিকে আমলাতান্ত্রিক বিলম্বের দিকে ঠেলে দিয়ে এসএস ভদ্রকে (দেনাদার) এক ধরণের সুবিধা ও আনুকূল্য দেয়া হয়েছে। গত ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষস্থানীয় এক আইনজীবীকে লেখা চিঠিতে (স্মারক নং-১৪.৩১.০০০০.০৪১.০১.০৩০.২১) ডাক বিভাগের এমন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। ডাক বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: ইউনূছ আলী ‘আদিষ্ট হয়ে’ এ চিঠি লেখেন। আইনগত মতামত চেয়ে চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জনাব সুধাংশু শেখ ভদ্র,সাবেক প্রকল্প পরিচালক, পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি এবং মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব),ডাক অধিদপ্তর,ঢাকা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) কর্তৃক সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বা আর্থিক ক্ষতি ৯২ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। উক্ত অর্থের মধ্যে যতটুকুন পেনশন, গ্রাচুইটি ও লাম্পগ্রান্ট থেকে আদায়ের জন্য বিএসআর পার্ট-১ এর বিধি-২৪৭ অনুযায়ী এবং অবশিষ্ট আর্থিক ক্ষতি পিডিআর অ্যাক্ট,১৯১৩ অনুযায়ী আদায়ের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় অনুমোদন করেছেন। এমতাবস্থায়, রাজস্ব ক্ষতি বা আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে পিডিআর অ্যাক্ট -১৯১৩ অনুযায়ী মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ/কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত মতামত অবিলম্বে প্রেরণ করার জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
ডাক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনেকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো দুর্নীতিবাজ মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এসএস ভদ্রের অনুগত। সেই দায়বদ্ধতা থেকে তারা এখনও ভদ্রের পক্ষে সক্রিয় এবং তার সেবায় নিবেদিত। এমনটির কারণ হচ্ছে, ভদ্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও অধরাই রয়ে গেছেন প্রকল্পের লুটপাটে একনিষ্ঠ সহযোগীরা। দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও ডাক বিভাগের বর্তমান ব্যবস্থাপনা এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হারুন অর রশিদ বলেন, পিডিআর অ্যাক্ট অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যেই বিষয়টি জেলা প্রশাসনে পাঠিয়ে দিয়েছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন
টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর
রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই
লাকসামে সরকারি খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়
কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট
ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?
গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো