কোরবানির হাটে বেচাকেনা শুরু
২১ জুন ২০২৩, ১০:৩৭ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। মহানগরীতে ১০টিসহ মোট ২২২টি হাটে আসছে গবাদি পশু। চট্টগ্রামের বিভিন্ন খামারে এবং কৃষক ও গৃহস্থের বাড়িতে লালিত-পালিত গরু, মহিষ, ছাগল বাজারে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। খামারগুলোতেও বিপুল সংখ্যক গরু রয়েছে। খামার থেকে অনলাইনে এবং সরাসরি গরু কিনতে শুরু করেছেন অনেকে। কোরবানিদাতারা দলবেঁধে পার্বত্য জেলা এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গরু কিনে আনছেন।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, এবার চট্টগ্রামে আট লাখ ৮০ হাজার গবাদি পশুর চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ঘাটতি হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি। তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা গবাদি পশুতে এই চাহিদা পূরণ করা হবে। ফলে এবারও কোরবানির পশুর কোনো ঘাটতি থাকবে না। বিগত কয়েক বছরের মতো দেশি গরুতেই কোরবানি সারতে পারবেন কোরবানিদাতারা। পশুরহাটের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধ এবং জাল-জালিয়াতি রোধেও সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাটে মেডিক্যাল টিম নামানো হয়েছে।
আগামী ২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। মহান আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। চট্টগ্রামে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এখানকার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা একাধিক পশু কোরবানি দেন। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর তাই এবার মন্ত্রী, এমপি এবং আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করবেন। দেবেন একাধিক পশু কোরবানি। তাতে এবার কোরবানির সংখ্যা বাড়তে পারে। কোরবানি হাট সামনে রেখে এই অঞ্চলের খামারি, বেপারিরাও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। খামারগুলোতে সযতেœ লালিত-পালিত হৃষ্টপুষ্ট গরুর অভাব নেই। হাট বসার আগেই খামারগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। কোরবানিদাতারা সরাসরি খামারে গিয়ে গরু কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ বুকিং দিচ্ছেন। আবার অনলাইনেও কেনাবেচা চলছে।
এই অঞ্চলে মহিষও কোরবানি দেওয়া হয়। হাটে এবার মহিষের সরবরাহও স্বাভাবিক। আছে ছাগল, খাসি ও ভেড়াও। মহানগরী ও জেলার হাটগুলোতে গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা শুরু হয়। বেশিরভাগ হাটের প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি। তবে এর মধ্যেই বেপারিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু নিয়ে আসছেন। ক্রেতা আকর্ষণে হাটের ইজারাদারেরা নগরী ও জেলায় মাইকিং করছেন। ব্যানার, ফেস্টুন বসিয়ে চলছে প্রচার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হাটের প্রচার চলছে। সেখানে গরুর ছবি দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মহানগরীতে দুটি স্থায়ী হাটসহ ১০টি হাট বসেছে। আর জেলার ১৫টি উপজেলায় বসেছে ২১০টি। হাটগুলো তদারকি করছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের গঠিত ৭৩টি মেডিক্যাল টিম। মোতায়েন রয়েছে র্যাব-পুলিশের বিশেষ টিম। হাটগুলোতে বসেছে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ। চট্টগ্রামে এবার কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে আট লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। এখানকার আট হাজার ২২০টি খামারে গরু রয়েছে আট লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে সঙ্কট আছে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি কোরবানি পশুর।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোরবানি দেওয়া হয়েছিল আট লাখ ১৩ হাজার ৫০টি গবাদিপশু। এর আগে ২০২১ সালে সাত লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি, ২০২০ সালে সাত লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি, ২০১৯ সালে সাত লাখ ৩০ হাজার ৭৮৯টি পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাবে- এবার স্থানীয়ভাবে লালিত-পালিত হৃষ্টপুষ্ট করা পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি। এছাড়া ৭১ হাজার ৩৩৩টি মহিষ, এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি ছাগল এবং ৫৮ হাজার ৬৬২টি ভেড়া রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের হাটে গরু, মহিষ আসছে। এছাড়া বৃহত্তর ফরিদপুর, রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারিরা গরু আনছেন। মওসুমি ব্যবসায়ীরাও গরু নিয়ে আসছেন হাটে। ফলে হাটগুলোতে এবারও কোরবানি পশুর কোনো ঘাটতি থাকবে না।
মহানগরীর স্থায়ী হাট সাগরিকা পশুর বাজার ও বিবিরহাট গরুর বাজারে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে। একই দৃশ্য নগরীর দেওয়ানহাট পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারে। এছাড়া আরো সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে নগরীতে। এগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং), দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের মাঠ, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের কাটগড় মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের মাঠ, নগরীর বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ। এসব হাটের পাশাপাশি নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী, বায়েজিদ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়েওঠা খামারগুলোতেও গরু বিক্রি হচ্ছে।
মহানগরীর বাইরে খামারের পাশাপাশি হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ১৫টি উপজেলায় স্থায়ী ৫৮টি হাট রয়েছে। এছাড়া অস্থায়ী পশুর হাট বসবে ১৫৫টি। মীরসরাইয়ে ২১টি, সীতাকু-ে ১০টি, সন্দ্বীপে ১৪টি, ফটিকছড়িতে ৩০টি, রাউজানে ২২টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২০টি, হাটহাজারীতে ৭টি, বোয়ালখালীতে ১২টি, পটিয়ায় ১০টি, চন্দনাইশে ১৪টি, আনোয়ারায় ১৫টি, সাতকানিয়ায় ৭টি, লোহাগাড়ায় ১৬টি, বাঁশখালীতে ১১টি এবং কর্ণফুলীতে ২টি হাট বসেছে।
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে জমে উঠতে শুরু করেছে গরু, ছাগল ও মহিষের হাট। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের বৃহৎ ও অন্যতম কোরবানির পশুর হাট হিসেবে পরিচিতি রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজার ও রানীর হাট। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার রাণীর হাট, রোয়াজার হাট শুক্র ও সোমবার মিললেও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাজারে প্রতিদিন পাওয়া যাবে বিভিন্ন জাতের গরু ও মহিষ। এ বাজারে রাঙ্গামাটি, ঘাগড়া, কাউখালীসহ আশপাশের অঞ্চলের বড়, ছোট, মাঝারি সাইজের বিভিন্ন এগ্রো ফার্মের গরু, পাহাড়ে লালন-পালন করা ও দেশি গরু থাকলেও বাজারে মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। কোরবানির পশু কিনতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাজারে ক্রেতারা আসেন।
হাটহাজারী নাজিরহাট থেকে আসা মো. জসিম বলেন, এই বাজার থেকে আমি প্রতিবছর পবিত্র কোরবানীর জন্য পশু কিনে থাকি তবে গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর খামারীরা বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, বিভিন্ন সময় গরুর খাদ্যের দাম বাড়তি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় কিছুটা দাম এ বছর বেড়েছে। ক্রেতারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী পশু কিনে নিতে পারবে এসব বাজার থেকে। বাজারের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন বলেন, প্রতিবছর আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরবানির পশু কিনতে আসা ত্রেতাদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সহযোগিতা করে থাকে। লেনদেনের ক্ষেত্রে জাল নোট চিহ্নিতকরণে মেশিন বসানো হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী নির্দ্বিধায় এ বাজার থেকে তাদের কোরবানির পশু কিনতে পারবেন ক্রেতারা। রোয়াজার হাট ও রাণীর হাট ছাড়াও রাঙ্গুনিয়ার অন্যান্য হাটগুলি হচ্ছেন চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট, গোডাউন, পোপরা হাট, মরিয়ম নগর চৌমুহনী, চন্দ্রঘোনা আধুর পাড়া, বেতাগী, পদুয়া, স্বনিভর রাঙ্গুনিয়া, দক্ষিণ রাজানগর ও রাজার হাট এলাকায় এসব বাজারগুলি প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বসতে শুরু করেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম