কোরবানি না করলে আল্লাহর লা’নত নাজিল হয়
২৩ জুন ২০২৩, ১১:৩১ পিএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
কোরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্যেও যদি কেহ উহা থেকে নিজেকে বিরত রাখে তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে লাঞ্চিত ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। সমর্থবান ব্যক্তি কোরবানী না করলে তার প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লা’নত নাযিল হয়। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মাওলানা নূরুল হক জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল মালেকে নেসাব মুসলমানেরগণের উপর কোরবানী ওয়াজিব করেছেন। যা নিছক আল্লাহর রাজি-খুশির জন্য হতে হবে। প্রতিযোগীতামূলক কোরবানীর কোন ভিত্তি নেই। মনে রাখবেন আল্লাহর নিকট জবেহকৃত পশুর গোশত কিংবা রক্ত পৌছায় না, পৌছায় তাকওয়া। কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ প্রাপ্ত বান্দাগণের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করা য়ায়। কোরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্যেও যদি কেহ উহা থেকে নিজেকে বিরত রাখে তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে লাঞ্চিত ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। সমর্থবান ব্যক্তি কোরবানী না করলে তার প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লা’নত নাযিল হয়।
তিনি পবিত্র কোরআনে উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, আল্লাহর কাছে কখনো কোরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই পৌঁছায় (সূরা হজ : ৩৭)। অপর এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানীর একটি পদ্ধতির প্রচলন করেছি, যে জানোয়ার আল্লাহ তাদের দান করেছেন, তার ওপর যেন তারা তাঁর নাম উচ্চারণ করে (সূরা হজ : ৩৪)। খতিব বলেন, কোরবানী কেবল পশু জবেহ করে গোশত খাওয়াকে বলে না। হাটের সেরা পশুটি ক্রয় করে প্রদর্শনে মাধ্যমে নিজের আভিজাত্য প্রকাশের নাম কোরবানী নয়। এর মাঝে যদি তাকওয়া, খোদাভিরুতা না থাকে তাহলে কখনই কোরবানীর ফযিলত প্রাপ্ত হবেন না এমনকি আল্লাহর দরবারে আপনার কোরবানী কবুল হবে না। কেবল পশু জবেহ এর মাধ্যমে গোশত খাওয়ার উৎসব ছাড়া আল্লাহর তরফ থেকে ঘোষিত কোন নেয়ামত আপনার জন্য বরাদ্দ নেই।
সুতরাং কোরবানি করার সময় নিজের মনকে সর্বদা স্থির রাখতে হবে, যেন আপনার আমার নিয়তের ভুলের কারণে এতো বড় একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদাত গুনাহে পরিণত না হয়। বর্তমানে সমাজের অধিকাংশ মানুষের মাঝে এমন কিছু প্রবণতা দেখা যায় যার ফলে কোরবানীর আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কোরবানীর পশু ক্রয়ে প্রতিযোগীতা করা, ক্রয়কৃত পশু প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজের আভিজাত্য প্রকাশের চেষ্টা করা, কোরবানীকে সামনে রেখে গান, বাজনা, নৃত্যসহ বিভিন্ন গুনাহে লিপ্ত হওয়া, কোরবানীর পশুর গোশত সঠিক বন্টন না করা। এসকল কাজের মাধ্যমে আমরা কেরবানীর সাওয়াব তো পাচ্ছিই না বরং অর্থ ব্যয় করে গুনাহ ক্রয় করছি। সুতরাং এসকল ব্যাপারে খুবই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেন নিজের ও পরিবারের সদস্যের গুনাহের কারণে যেন এমন একটি পবিত্র ইবাদাত কলুষিত না হয়। মনে রাখতে হবে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ত্যাগ তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তুু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। এতে অন্য কাউকে অংশিদার করা যাবে না। কেননা, জাহেলি যুগে এমনটিরই প্রচলন ছিল। যেমন প্রতিমাকে সন্তুষ্ট করা, মসিবত দূর করা, জানের সদকা দেওয়া, শুধু রক্ত প্রবাহিত করা, আর গর্দান কাটা এগুলো ইসলামী শরিয়তের প্রবর্তিত কোরবানীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমার নামায, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল (সূরা আনয়াম : ১৬২)
খতিব বলেন, রাসূল (সা.) হিজরতের পরবর্তী মদিনার দশ বছরের জিন্দেগিতে প্রত্যেক বছর কোরবানি করেছেন। কখনো কোরবানি পরিত্যাগ করেননি বরং কোরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১২৩)। হাদিসটির দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, কোরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্যেও যদি কেহ কোরবানী না করে তাহলে তার উপর আল্লাহর রাসূলের অভিসম্পাতের ফলে লা’নত অবতীর্ণ হয়। অপর দিকে হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর নিকট সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ কোরবানী কী? তিনি বললেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.) এর সুন্নাত।
তারা বলল, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময় একটি করে নেকী আছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কী তাই? জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময় ও একটি করে নেকী আছে (ইবনে মাজাহ)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘ঈদুল আজহার দিন মানুষের কোনো আমল আল্লাহতায়ালার কাছে কোরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। কোরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত হবে। অর্থাৎ কোরবানী দাতা ওই জিনিসগুলোর বিনিময়ে সওয়াব পাবে। কোরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহতায়ালার কাছে একটি বিশেষ স্থানে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা খুশি মনে কোরবানী করো। বেশি খরচ হয়ে গেলেও মন খারাপ করো না (তিরমিজি)।
তাৎপর্যপূর্ণ এ জিলহজ মাসে কোরবানীর পাশাপাশি আরো কিছু আমল রয়েছে যা প্রত্যেক বালেগ মুসলমান নর ও নারীর জন্য আদায় করা জরুরী তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামায থেকে ১৩ তারিখ আসর নামায পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পুরুষগণ উচ্চস্বরে আর মহিলাগণ অনুচ্চস্বরে পড়া ওয়াজিব। ১ তারিখ থেকে ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে নখ, চুল, অবাঞ্চিত লোম কর্তন না করা।
সবশেষে খতিব বলেন, কোরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাগণের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এটা একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই করতে হয়। এতে সামান্যতমও ত্রুটি করা যাবে না। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক করতে পারে। সে বিভিন্ন হিংসা-বিদ্বেষ, লৌকিকতা থেকেও মুক্তি পায়। আল্লাহ আমাদের কোরবানীকে কবুল করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ত্যাগ, বিসর্জন ও কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব । যুগে যুগে নবী, রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম ও ওলী আউলিয়াগণ ত্যাগের মহিমায় নজরানা পেশ করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম শিশু পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর খলিল হয়েছেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের জন্য তায়েফের ময়দানে রক্ত ঝরায়ে রাহমাতুল লিল আলামিন ভূষিত হয়েছেন। অনুরূপ সাহাবায়ে কেরাম ও ওলী আউলিয়াগণও দ্বীন ইসলামের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জীবন সংগ্রামে সামান্যতম নেক আমল এবং সওয়াবের কাজেও আত্মত্যাগ করে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুসলিমার জন্য আদি পিতা হযরত আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত ত্যাগ বিসর্জন ও কোরবানীর এ ধারাবাহিকতা অব্যহত রেখেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবেও। ইনশাআল্লাহ। আর এ কোরবানী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নত । উম্মতে মুহাম্মাদীর কোরবানীর দিন সমূহে যার নিকট সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মাল থাকবে তার উপর কোরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ্র জন্য নামাজ পড় ও কোরবানী কর। (সূরা কাওসার, আয়াত নং ২)।
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব দেয়া হবে । অন্য বর্ণনায় নবীজি সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র হৃদয়ে সওয়াবের উদ্দেশ্য কোরবানী করবে তার এ কোরবানী তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে যাবে । আর যে ব্যক্তি কোরবানী করার সমর্থ থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করবেনা , সে যেন আমার ঈদগাহেও না আসে। (বলে নবীজি সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধমক দিয়েছেন, যদিও ঈদের নামাজের জন্য তার ঈদগাহে যাওয়া নিষেধ নয়)। আল হাদিস। অতএব যাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব তারা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কোরবানী করতে পারে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করেন । আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে