দেশি গরুতে ভরছে হাট
২৩ জুন ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় বসেছে ১৯টি পশুর হাট। গাবতলীয় ও সারুলিয়া স্থায়ী হাট হলেও ১৭টি হাট অস্থায়ী। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় পশুর হাট বসানো হয়েছে। পশুর জন্য হাটগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে কোরবানির হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। সবগুলো গরুই দেশি। গ্রামের কৃষক, ক্ষুদ্র খামারি, চরের বাথানের মালিক এবং কর্পোরেট হাউজের গরু হাটে তোলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের কোরবানির হাট দেশি গরুতে ছয়লাব হয়ে যাবে।
রাজধানীর হাটগুলো এখনো পুরোদমে জমে না ওঠায় অনেকেই পর্যায়ক্রমে পশু আনার পরিকল্পনা করেছেন। অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানির পশু রাখার ব্যবস্থাও করেছে হাট কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এখনো পর্যায়ক্রমে পশু নিয়ে হাটে আসছেন তারা। কিছু সময় পরপরই হাটের উদ্দেশে ট্রাকভর্তি গরু ঢুকছে। নদীপথেও ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভর্তি করে পশু হাটে আনা হচ্ছে। তবে গাবতলী হাটে বেচাবিক্রি শুরু হলেও অন্যান্য অস্থায়ী হাটগুলোতে এখনো বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। গতকাল শনির আখড়া ও কমলাপুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এখনোই প্রচুর গরু উঠেছে হাটে। সবগুলোই দেশীয় গরু। বিক্রেতারা বলছেন, ঢাকার মানুষের বাসাবাড়িতে পশু রাখার যায়গা না থাকায় তারা এখনো কেনাকাটা শুরু করেননি। ঈদের তিন দিন আগে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল হাটে সেসব গরু এসেছে সবগুলোই দেশি গরু। ট্রাকে ট্রাকে গরু-মহিষ-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশু নিয়ে বেপারী, খামারি ও গৃহস্থদের আগমনে ভরে গেছে। হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ছকও এরই মধ্যে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। বেপারীরা জানান, ভালো জায়গা দখল করতেই তারা আগেভাগেই গরু নিয়ে হাটে চলে এসেছেন। যদিও এ জন্য তাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে ভালো দামে গরু বেচতে পারলে তা পুষিয়ে যাবে।
দেশে কোরবানির পশুর চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বছর কোরবানির জন্য ১ কোটি ২৫ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত আছে। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৯৬ হাজার। প্রস্তুত কোরবানির পশুর মধ্যে ৪৮ লাখের বেশি গরু ও মহিষ। মূলত ২০১৫ সালে মোদী সরকার সীমান্ত দিয়ে গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিক্তিক ও গ্রাম পর্যায়ে কৃষিভিক্তিক গরু প্রতিপালন শুরু হয়। এখন দেশে উৎপাদিত গরু সারাবছরের গোশত এবং কোরনানির পশুর চাহিদা মেটাচ্ছে। গতকাল একাধিক পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে জায়গা চিহ্নিত করে বেপারীরা নাম লেখা কাগজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তারা আগেভাগে আসলেও তাদের গরু-ছাগল ২৪ জুন রাতে কিংবা ২৫ জুন সকালে ঢাকায় ঢুকবে। হাটগুলোতে দালালদের আনাগোনাও আগেভাগেই শুরু হয়েছে। তারা এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে হাটে আসা বেপারী ও খামারিদের সঙ্গে তাদের গরু বিক্রি করে দেওয়ার জন্য আগাম চুক্তি করার চেষ্টা করছেন।
তবে কোনো কোনো হাটে এখনো বাকি আছে টুকটাক কিছু কাজ। পুরো হাট এলাকায় লাগানো হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। এখানে গরু রাখার জন্য জায়গা তৈরি করছেন অনেক ব্যবসায়ী। পশুগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখতে নীচু জায়গায় মাটি ভরাট করে বাঁধা হয়েছে বাঁশের খুঁটি। এছাড়া আগেভাগে জায়গা দখল করে বড় ঘর বানাতে দেখা গেছে খামারিদের। মূলত হাট এলাকার প্রায় ৬০ শতাংশ অংশজুড়ে কোরবানির পশু নিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো তেমন ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না তারা। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পুরোদমে হাট জমে উঠবে। হাটে এখন পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগ পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও যশোর এলাকার ব্যবসায়ী।
গাবতলী পশুর হাটে তিন মণ গোশত মিলবে এমন গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৯৬ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আর চার মণ গোশত মিলবে এমন একটি দেশি মাঝারি গরুর দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। ফলে দেখা গেছে গত বছর থেকে এবার তিন মণ ওজনের গরুর দাম ২৪-৩০ হাজার টাকা বেশি। গরুর এই আকাশচুম্বী দামে ক্রেতারা পড়েছেন অস্বস্তিতে। পশুর হাট ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। হাটে কোরবানির পশু আসা শুরু করলেও এখনো বড় গরু সেভাবে ওঠেনি। যে গরু আছে সেগুলোর দাম আবার বেশ চড়া। এছাড়া হাটে বলার মতো প্রকৃত ক্রেতার সমাগম হয়নি। যে কয়জন হাতেগোনা লোক এসেছেন তারা দরদামেই ব্যস্ত। তবে যাদের দামে মিলে যাচ্ছে তারা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পশু।
গাবতলী হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী মো. রাসেল। তিনি ১০-১২টি গরু দেখার পর ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। লাল রঙের গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন তিনি। তিনি বলেন, গরুর দাম এবার অনেক বেশি। কোরবানি দেয়ার জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনলাম। বাড়ির সবাই গরুকে এই কয়দিন আদর-যতœ করবে।
গরু বেপারীরা বলছেন, গোশতে দামের ওপর নির্ভর করে কোরবানির পশুর দাম। গত বছর ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ২০০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে সেই গোশতের দাম। ফলে প্রতি মণ গোশতের দাম বেড়েছে আট হাজার টাকা। এতে করে তিন মণ ওজনের গরুপ্রতি দাম বেড়েছে ২৪ হাজার টাকা। গোশত ও গো-খাদ্যের দাম বাড়তি। ফলে হাট ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে বাড়তি দামে গরু সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেশি। এসব কারণেই গরুর দাম বাড়তি।
এক গরু বেপারী বলেন, ২০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি দইটি গরু বিক্রি করলাম। এবার গরুর দাম বাড়তি। কারণ গরুর খাবার ও পরিবহন খরচ বেশি।
প্রতিবারের মতো এবারও আবদুল কাদির ৫০টি গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে এসেছেন। গো-খাদ্য ও পরিবহন খরচের কারণে গরুর দাম বেশি বলে দাবি তার। তিনি বলেন, কসাইয়ের দরেও যদি হিসাব করেন তাহলে প্রতি মণ গোশতের দাম বেড়েছে আট হাজার টাকা। আমরা গ্রাম থেকে গরু কিনতে পারছি না। কম দামে গরু না পেলে কীভাবে ঢাকায় বিক্রি করবো।
গাবতলী পশুর হাটের ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম বলেন, হাট মোটামুটি প্রস্তুত। বেপারীরাও তাদের পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। তবে এখনো হাট জমে উঠেনি। ব্যাপক পশু আসবে। সবচেয়ে বেশি জমজমাট হবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর। এবার হাটে ১১টি হাসিল ঘরের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য র্যাব, পুলিশ ও সিটি এসবির বুথ এবং ব্যাংকের জন্য বুথ থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে সাত থেকে আটটি। এরইমধ্যে তিনটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। বেচাকেনা শুরু হলে বাকিগুলো নির্মাণ করা হবে। সার্বিক তদারকির জন্য চেকপোস্ট থাকবে চারটি। পাশাপাশি দুই শিফটে এক হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবার হাটে দায়িত্ব পালন করবেন।
যশোর থেকে ৪০টি গরু নিয়ে আফতাবনগর হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী নাসির। তিনি বলেন, আমার কাছে থাকা সবগুলো গরুই ২ লাখ টাকার বেশি। এখন পর্যন্ত ২টি গরু বিক্রি করেছি। এখন অতটা ক্রেতা নেই। যারা আসেন তারা ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ টাকা দাম বলেন। ঈদের ২/৩ দিন আগে হয়ত ভালো বিক্রি হবে।
পাবনা থেকে ২০ টি গরু নিয়ে এসেছেন আনোয়ার। তিনি বলেন, আমার কাছে থাকা গরুগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ দাম ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছে। তবে এখনও দামে পোষায়নি বলে একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।
কমলাপুরে বসেছে অস্থায়ী পশুর হাট। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ থেকে শুরু করে হয়ে গোপীবাগের কিছু এলাকা জুড়ে এই হাটের অবস্থান। হাট পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাট পুরোদমে জমে না ওঠায় অনেকেই পর্যায়ক্রমে পশু আনার পরিকল্পনা করেছেন।
ঝিনাইদহ থেকে ১০টি গরু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, রাতে গরু নিয়ে এসেছি। সকাল থেকে কয়েকজন ক্রেতা এসেছেন। অবশ্য দাম জিজ্ঞাসা করেই তারা চলে যাচ্ছেন। অনেকে শুধুই দেখতে আসেন। যার আয় যেমন তিনি তেমন গরু কিনবেন। যেহেতু এখনো বিক্রি শুরু হয়নি সেহেতু পরিস্থিতি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। পুরোদমে বিক্রি শুরু হলে কেমন গরুতে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি সেটা বোঝা যাবে।
বড় দুইটি গরু বিক্রি করতে কমলাপুর হাটে এসেছেন আরেক বিক্রেতা। তিনি বলেন, আমি দুইটা বড় গরু এনেছি। এর মাঝে একটি সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে। অনেক ক্রেতা গরুগুলো দেখছে। তবে দরদাম করে চলে যাচ্ছে। তার হলু নামের এই গরুটির ওজন হবে প্রায় ১২ মনের বেশি। গরুটিকে সাধারণত খুদ, ভুসি, গম ও ভাতের জাউ খাওয়ানো হয়েছে। গরুটির বয়স প্রায় সাড় ৩ বছর।
সিরাজগঞ্জে ভাই ভাই অ্যাগ্রোফার্ম থেকে ৩৫টি গরু এনেছেন এক বিক্রতা। তিনি বলেন, আমি সবসময় বড় গরু নিয়ে আসি। আমার প্রতিটি গরু ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি। চার বছর ধরে এই হাটেই আসছি।
হাট পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক সিরাজ হোসেন বলেন, পশু আসতে শুরু করেছে। ঈদের আগের তিন-চারদিন বিক্রি বেশি পরিমাণে হবে। এ বছর ২০-২৫টি স্থায়ী হাসিল কাউন্টার ও ৫-৭টি অস্থায়ী হাসিল কাউন্টার থাকবে। সবমিলিয়ে এ বছর প্রায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।
ইতোমধ্যে দেশে কোরবানির পশুর চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বছর কোরবানির জন্য ১ কোটি ২৫ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত আছে। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৯৬ হাজার। প্রস্তুত কোরবানির পশুর মধ্যে ৪৮ লাখের বেশি গরু ও মহিষ।
পশুপালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর কোরবানির পশুর জন্য বাড়তি দাম গুণতে হবে। খামারিরা জানিয়েছেন, গত বছর যে আকৃতির গরু ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে এ বছর তা ১২ লাখ টাকায় বিক্রির কথা ভাবছেন তারা। অন্যদিকে গত বছর যে গরু এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই একই গরুতে এবার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাড়তি গুণতে হবে ক্রেতাদের। তবে, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে যেন কেউ বাড়তি মুনাফা লুটতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সরকার। এ বছর কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যাওয়ার বাস্তবতা স্বীকার করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
অধিদফতরের মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদার বলেছেন, এ বছর কোরবানির পশুর দাম যেন অযৌক্তিকভাবে না বেড়ে যায় সে বিষয়ে প্রচেষ্টা চালানো হবে। দাম নির্ধারণ আমরা করতে পারি না। তবে উৎপাদন খরচ কত সেটি বলতে পারি। যেমন গবাদি পশুর উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি প্রায় ৫৫০ টাকা। এছাড়া মধ্যস্বত্ত্বভোগী আছে। সবমিলিয়ে একটা যৌক্তিক দাম নিতে পারে। আমরা হাটে প্রচার চালাবো। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা যেন অতিরিক্ত দাম নিতে না পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
জানা যায়, এবছর পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে। ইতোমধ্যে উভয় সিটি করপোরেশন এসব হাটের স্থান সুনির্দিষ্ট করেছে।এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০টি স্থানে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯টি স্থানে পশুর হাট বসবে। বাংলাদেশে আগামী ২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে।
ঢাকা উত্তর সিটির যেসব এলাকাগুলোতে পশুর হাট বসবে, সেগুলো হলো উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন, দক্ষিণখানের কাওলা শিয়াল ডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত খাঁপাড়া উত্তর পাশের জামালপুর প্রপার্টিজের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাব নগরের ব্লক ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত অংশের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলা এলাকার ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা, মিরপুর ৬ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কাচকুড়া ব্যাপারীপাড়ার রহমান নগর, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গা, গাবতলী গবাদিপশুর হাট।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পশুর হাটগুলো বসবে যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল–সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে জমে উঠতে শুরু করেছে পশুরহাটগুলো। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুরহাট সিটি হাট। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় গরু মহিষ। তাছাড়াও ঈদ উপলক্ষে নওহাটার হাট, রাজাবাড়ির হাট, দেলুয়াবাড়ি হাট, বানেশ্বরহাট, সোনাইচন্ডিহাটসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গরু, খাসি বিক্রি। এছাড়াও অস্থায়ী হাটও বসে কাটাখালিতে। এসব হাট থেকেই মানুষ কোরবানীর জন্য পশু কেনে। খামারিরা বলছেন গবাদি পশুর খাদ্যের দাম অনেক। ফলে লালন পালন করতে খরচ হয়েছে বেশি। ফলে পশুর দামও বাড়ছে।
কোরবানির জন্য রাজশাহীতে এবার চার লাখ পশু প্রস্তুত বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সেই হিসেবে চাহিদার তুলনায় রাজশাহীতে ৭০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। কোরবানির পশু আমদানির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন সংশিষ্টরা। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোরবানিযোগ্য প্রাণীর নিবন্ধন হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৫টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৮৬টি। এছাড়া ছাগল রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৯টি। জেলাতে ছোট-বড় মিলে এবার ১৬ হাজার ৫৪৫টি খামার ও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে এসব কোরবানির পশু লালন-পালন করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় কোরবানি যোগ্য পশু বেশি রয়েছে। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, আসন্ন কোরবানির পশুর সঙ্কট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের সবচেয়ে বড় হাট কাজীর বাজার হাট। ইতোমধ্যে ছোট-বড় নানা ধরনের দেশি গরুতে ভরে গেছে হাট। গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির গরুর দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। এ বছর সিলেট বিভাগে কোরবানিযোগ্য পশু আছে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার।
সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মু. আলমগীর কবির বলেন, ‘এবার সিলেট বিভাগে পশুর সংখ্যা বেশি। স্থানীয় ও খামারিদের কাছে থাকা কোরবানিযোগ্য পশু মিলিয়ে অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে চাহিদা। আশা করছি আমাদের চাহিদা পূরণ করে সিলেটের পশু দেশের অন্যান্য জায়গায় যাবে বিক্রির জন্য।’
এদিকে, সিলেট মহানগরীর মাছিমপুর এলাকায় পশুর হাট বসানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে দুই কাউন্সিলরের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাছিমপুরে গরুর হাটের জন্য জেলা পরিষদ টেন্ডার আহবান করে। তবে তা পাওয়ার আগেই ৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শারমিন আকতার রুমির স্বামী মনজু মিয়া ও তার দুই ভাই দিপু ও অপি হাটের জায়গায় বাঁশ বসানো থেকে অন্যান্য কাজ শুরু করেন। এতে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদের ভাই হারুন রশিদ খছরু বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের পাঁচ জন আহত হন। তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। পরে এসএমপির কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় উপলক্ষে ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮ পশুকে প্রস্তুত করেছেন নাটোর জেলার খামারিরা। এরমধ্যে গরু ও মহিষ ১ লাখ ১১ হাজার ২৩৪। বাকি ৪ লাখ ৯ হাজার ছাগল ও ভেড়া। এসব পশু জেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রয়ের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এবার নাটোর জেলায় প্রায় ২ লাখ ৫১ হাজার কোরবানির পশু জবাই হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৮ হাজার ১৫০টি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান ও উলুবাড়িয়া জাতের গরু পালন করা হয়েছে। নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে নাটোরে কোরবানির পশুর হাটের পাশাপাশি ৯টি অনলাইন প্লাটফর্মে পশু বিক্রয়ের ব্যবস্থা আছে। এবারে জেলায় প্রসিদ্ধ ১৪টি হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে। তাছাড়াও আরোও কিছু অস্থায়ী হাট বসতে পারে।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের কালিয়া কান্দাপাড়া, তালগাছি, এনায়েতপুর, সলংগা, শমেসপুর, চান্দাইকোনা, বাগবাটি, রতনকান্দি, কামারখন্দ, পাঙ্গাসী শালুয়াভিটা সহ জেলায় ৩১টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের মাধ্যমে গবাদি পশু বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় কোরবানীর পশুর হাট বসছে বলে জানিয়েছেন হাটের ইজারাদারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, জেলায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মোটাতাজা করা পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদিপশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যেকোনো ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিং লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করে অনলাইনেও বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জেলা প্রসাশন থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবছর জেলায় ৩১টি স্থায়ী এবং ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার