বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে বাড়ছে তিস্তা ও যমুনার পানি

ভাঙনে বিলীন স্কুল-বসতবাড়ি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৩ জুলাই ২০২৩, ১১:২৩ পিএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারত থেকে তথা উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আবারও বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা ও যমুনা নদীর পানি। পাশাপাশি তিস্তার কিছু এলাকা ভাঙ্গন দেখা দিলেও সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে অসহায় নদীপাড়ের মানুষ। এদিকে অবনতি হয়েছে সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতি। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩ সেন্টিমিটার ওপরে চলে গেছে দিরাই উপজেলায়। সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজারে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে সড়ক ডুবে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা তাহিরপুরে। ফলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যা নিয়ে লাখ লাখ মানুষ আতঙ্কে দিনযাপন করছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারতের গঙ্গা, পদ্মা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় লালমনিরহাট ও নীলফামারি জেলায় স্বল্পমেয়াদী বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়ার দেওয়া বন্যা পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায় পাউবো।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। তবে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট ও নীলফামারি জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
পাউবো জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, মনু-খোয়াই ব্যতীত প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসায় পরবর্তী সময়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
যমুনায় ভাঙ্গন : গত শনিবার প্রবল ¯্রােতে আকস্মিকভাবে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর-সলিমাবাদ গ্রাম সংলগ্ন সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টি এক বছর আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মধ্যে হলেও সীমান্তবর্তী হওয়ায় চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর সলিমাবাদ গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল এটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙনের সময় শত শত মানুষ তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের চোখের সামনে নদী গর্ভে বিলীন হতে দেখেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এতে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের মানুষের প্রায় দুই শতাধিক ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের অভিযোগ, বছরের পর বছর নদী ভাঙন রোধে সঠিক সময়ে কোনো কাজ হয়নি। এতে সময় মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে বরাবরের মতোই কাজ করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নদী ভাঙন কবলিত কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল গ্রামের মো. মনি শেখ বলেন, বাবার দেওয়া ছয় বিঘা ফসলি জমি ও এক বিঘার একটি বসতবাড়ি পেয়েছিলাম। বাড়িতে অন্তত পাঁচটি গাভি ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় সবই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমি আর বসতভিটা এক সঙ্গে ভাঙতে শুরু করেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে রাস্তার পাশে রেখেছি, এখন নিঃস্ব হয়ে পথে নেমে গেলাম। আমার জমি যখন ভাঙা শুরু হয়, তখন থেকেই শুনছি নদীতে বাঁধ দেওয়া হবে, কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল।
এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামের মো. মজিবর রহমান বলেন, এক সপ্তাহে অনেক বসতভিটা ও কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। ভাঙন বন্ধ করতে কোনো কাজ শুরু তো দূরের কথা কেউ খোঁজ খবর নিতেও আসেনি।
এদিকে চলতি বছরের ২ জুন চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া হতে চর সলিমাবাদ পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ শুরু হয়। উদ্বোধনের ১৩ দিনের মাথায় নির্মাণাধীন বাঁধ এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে দুই শ্রমিককে কারাদ- ও বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে এ অংশে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।
অপরদিকে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে ১৫ ও ১৭ জুন এলাকাবাসী ওই বাঁধ নির্মাণ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
ভেঙ্গে যাওয়া সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছর ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ ফুট লম্বা একতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভবনটি নদী গর্ভে চলে গেছে। এর আগেও পুরাতন ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, যমুনার ভাঙন কিছুতেই রোধ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যমুনায় পানি বাড়ার কারণে চৌহালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সুরমার পাতি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে : টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়ক প্লাবিত হয়ে বসত ঘরে পানি ঢুকছে। ফলে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে মানুষ।
ছাতক উপজেলা পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩ সেন্টিমিটার ওপরে চলে গেছে দিরাই উপজেলায়। সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজারে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে সড়ক ডুবে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা তাহিরপুরে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা, দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ। দুর্ভোগ আর ভোগান্তি নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছে মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ স্টেশনে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ৭.৯৬ মিটারে প্রবাহিত হয়েছে। বেলা ১২টায় ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ৭.৯৯ মিটার সমতলে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপরে। জেলায় গত কয়েকদিনে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বছরের সর্বোচ্চ ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রোববার রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার এবং ছাতকে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্ভাবাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এতে ঢলের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে। এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীর ভাঙনে গত পনের দিনে শতবিঘা আবাদি জমি, অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হুমকীতে রয়েছে আরো দেড় শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও ভাঙন কবলিত মানুষ বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বজরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিতদের নিজস্ব জমিজমা না থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশে ফেলে রেখেছে। ঈদের ১০ থেকে ১২ দিন আগে থেকেই এখানে ভাঙন চলছিল। জিও ব্যাগ দিয়ে সরকারি স্কুলটি রক্ষার চেষ্টা করা হলেও জিও ব্যাগসহ সেটি নদী গর্ভে চলে গেছে। এসময় ভেঙে গেছে আরো ৪৫ থেকে ৫০টি বসতবাড়ি। সবজি ও পাটক্ষেতসহ শত বিঘা আবাদি জমি নদী গ্রাস করে নিয়েছে। সেই সাথে গাছপালা-পুকুর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী শহিদুর ইসলাম জানান, ভাঙনে বজরা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আর রক্ষা করা যায়নি। সেই সাথে ঠিকানা হারিয়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। আরো দেড় শতাধিক বসতবাড়ী রয়েছে ভাঙনের হুমকীতে। এছাড়াও পিছনে আরো ৬ থেকে ৭০০ পরিবারও রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ণ বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক জায়গায় ভাঙন হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারীতে রেখেছি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, লোকায়লয় ভাঙন কবলে পরলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পশ্চিম বজরায় আমরা জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছি।
সিরাজগঞ্জ : মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সবচেয়ে বেশি ভাঙছে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে অসহায় নদীপাড়ের মানুষ। গত শনিবার সকালে প্রবল স্রোতে আকস্মিকভাবে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর-সলিমাবাদ গ্রাম সংলগ্ন সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এটি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মধ্যে হলেও সীমান্তবর্তী হওয়ায় চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চরসলিমাবাদ গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনের সময় শত শত মানুষ তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেও রক্ষা করতে পারেননি। এতে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের মানুষের প্রায় দুই শতাধিক ছেলেমেয়ের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নদীভাঙন কবলিত শাহজাদপুরে কৈজুরি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামের মনি শেখ জানান, বাবার দেওয়া ছয় বিঘা ফসলি জমি ও এক বিঘার একটি বসতবাড়ি পেয়েছিলাম। বাড়িতে অন্তত পাঁচটি গাভী ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমি আর বসতভিটা একসঙ্গে ভাঙতে শুরু করেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে রাস্তার পাশে রেখেছি, এখন নিঃস্ব হয়ে পথে নেমে গেলাম। আমার জমি যখন ভাঙা শুরু হয়, তখন থেকেই শুনছি নদীতে বাঁধ দেওয়া হবে, কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় সব শেষ হয়ে গেলো। এদিকে, চলতি বছরের ২ জুন চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে চরসলিমাবাদ পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তবে উদ্বোধনের ১৩ দিনের মাথায় নির্মাণাধীন বাঁধ এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে দুই শ্রমিককে কারাদ- ও বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে এ অংশে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।
চৌহালীর ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করিনি। জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যমুনায় পানি বাড়ার কারণে চৌহালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে রোধের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মির্জাপুরে ঝিনাই নদীর ভাঙনে ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর বাজারের এক তৃতীয়াংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার পালপাড়ার কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহারা পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এলাকাবাসী জানান, গত ২০ জুন ঝিনাই নদীর ভাঙন শুরু হয়। এর তিনদিন পর বাজরের পূর্ব অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এই ভাঙনে বাজারের অন্তত ৩০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে চলে যায়। ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে কুর্নি-ফতেপুর পাকা সড়কের এক টাকার বাজার নামক স্থানে বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। ফলে উপজেলা সদরের সাথে ভাঙন কবলিত এলাকার উত্তরাংশের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই অংশের লোকজন বিকল্প হিলড়া-আদাবড়ি সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন বলে জানা গেছে। লোকজন এখন পর্যন্ত সরকারি কোন আর্থিক সহায়তা পাননি।
গতকাল পাউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পুরো এলাকার ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন ইনকিলাবকে জানান, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রনয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোনালাপ
অযোগ্য হবেন হাসিনা?
উত্তরবঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে
প্রত্যেক ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে: ড. ইউনূস
প্রকৃত তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংবাদ করুন: প্রেস সচিব
আরও

আরও পড়ুন

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে

একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে

তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত

তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর

২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ

২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত

মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি

মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি

আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ

আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ

অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না

অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না

হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু

হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু