পরকীয়া লিভ-টুগেদার অতঃপর নির্মমভাবে খুন!
০৬ জুলাই ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
চট্টগ্রামে সূত্রবিহীন আরো একটি হত্যা : মামলার রহস্য উদঘাটন পিবিআইর
পরিচয় থেকে শুরু পরকীয়। এরপর বিয়ে না করেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একসাথে বসবাস (লিভ-টুগেদার)। অতঃপর পরকীয়া প্রেমিককে খুন। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকার একটি বাসা থেকে লাশ উদ্ধারের পর ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আর এর মধ্যদিয়ে আরো একটি সূত্রবিহীন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো। তিন সন্তানের জনক আকরাম উল্লাহ (৪২)। দীর্ঘদিনের প্রবাসে ছিলেন। দেশে ফিরে পরিবারের সাথে বনিবনা না হওয়ায় সংসার ছাড়েন। নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম এসে কাভার্ড ভ্যান চালনা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার সাথে পরিচয় হয় রোজিনা বেগম রোজির (২৩)। এক কন্যা সন্তানের জননী রোজি চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামী থাকে প্রবাসে। পরিচয় থেকে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয় দুজনের। এরপর শুরু করেন লিভ-টুগেদার। এক পর্যায়ে পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা করে লাশ বাসায় ফেলে খুলনায় বোনের বাসায় পালিয়ে যান রোজি।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখান থেকে তাকে পাকড়াও করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে পিবিআই। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, রোজি নির্মমভাবে তাকে খুনের দায় স্বীকার করেছেন। আর এর মধ্যদিয়ে আলোচিত এই খুনের রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
গত ১ জুলাই নগরীর ইপিজেড এলাকার নিউমুরিং এলাকার কেবি ম্যানশনের তৃতীয় তলার বাসা থেকে আকরাম উল্লাহর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের গলায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় থানায় হত্যা মামলা হয়। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট তার আগুলের চাপ নিয়ে পরিচয় সনাক্ত করে। তখন থেকে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো। খুনের শিকার আকরাম উল্লাহর পুত্র মো. আশরাফুল ইসলাম রাজু বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন।
পিবিআই মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসাবে উদ্ধার করা হয়। বাড়ির মালিক জানান, এক মহিলাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তারা এক মাসের জন্য বাসাটি ভাড়া নেন। যেদিন বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা সেইদিনই তালাবদ্ধ ঘরে লাশ পাওয়া যায়। খুনের পর রোজি পালিয়ে খুলনায় বোনের বাসায় চলে যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতারের পর তিনি দায় স্বীকার করে খুনের বর্ণনাও দিয়েছেন।
রোজি জানায়, বিগত ২০১৫ সালে কবির মোল্লার সাথে বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তখন থেকেই তিনি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ইপিজেড লেবার কলোনী এলাকায় তার স্বামী কবির মোল্লার একটি চায়ের দোকান ছিল। সেখানে আকরামের সাথে তার পরিচয় হয়। করোনার সময় রোজির চাকরি চলে যায়। লকডাউনে তার স্বামীর চায়ের দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। কোন উপায় না দেখে তারা বাগেরহাটের গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখানেও কোন চাকরি জোগাড় করতে না পেরে তার স্বামী সউদী আবর চলে যান। বিগত ২০২২ সালে রোজি তার মেয়েকে খুলনায় বোনের বাসায় রেখে ফের চট্টগ্রাম চলে আসেন। এরপর আকরাম উল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক গভীর হয়। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে একসাথে থাকেন।
রোজির ভাষ্য, আকরাম কাভার্ড ভ্যান চালক হলেও কাজ না পাওয়ায় প্রায় বেকার ছিলেন। থাকা খাওয়ার পুরো খরচ রোজি বহন করতেন। মেয়ের জন্য বোনের কাছে প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে পাঠাতেন। তার স্বামীও সউদী থেকে তাকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। তবে তার স্বামী তাদের এ অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতেন না। রোজি জানায়, ঘটনার দিন তার স্বামী ইমুতে ফোন দেন। তিনি তাকে তার নিজের শরীরের খোলামেলা ভিডিও ধারণ করে তার ইমুতে পাঠাতে বলেন। রোজি ভিডিও ধারণ করলেও তা কীভাবে পাঠাতে হয় তা না জানায় সেটি মোবাইলের গ্যালারিতে থেকে যায়।
বাসায় ফিরে আকরাম উল্লাহ ওই ভিডিও দেখে তাকে সন্দেহ করেন। আকরাম তখনই তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দেয়। তবে রোজি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। আকরাম রোজির মোবাইল নিয়ে তার স্বামীকে ফোন করে তাদের মধ্যে সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ফোন করা শুরু করে। এক পর্যায়ে মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ির শুরু করে দুজন। এ সময় রোজি আকরামের অন্ডকোষ চেপে ধরলে তিনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ঘরের মেঝেতে পড়ে যান। তখন তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এ অবস্থায় রোজি তার ওড়না ও কাপড় গলায় পেঁচিয়ে আকরামের মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ খাটের নিচে রেখে দেন।
এরপর আলামত গোপন করতে রক্তমাখা কাপড়চোপড় ঘরের জানালা দিয়ে পেছনের নালায় ফেলে দেন। এরপর লাশ ভেতরে রেখে বাসায় তালা দিয়ে রোজি অটোরিকশা নিয়ে অংলকার চলে যান। সেখান থেকে বাসে খুলনায় গিয়ে বোনের বাসায় উঠেন। পিবিআই রোজির দেখানো মতে ওই নালা থেকে খুনের বেশকিছু আলামত উদ্ধার করেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা