অবাধে চলছে অবৈধ ইটভাটা প্রশাসন নিরব
০৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ এএম
জয়পুরহাটে অবাধে চলছে অবৈধ ইটভাটা। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে গত বছর উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও এ জেলায় তা মানা হচ্ছে না। এখানে মোট ৪৮টি ইট ভাটার মধ্যে নিবন্ধন আছে মাত্র ৫টির। বাকি ৪৩টি ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে। অধিকাংশ ইটভাটাতেই জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে। অথচ প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসকদের ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চললেও জয়পুরহাট জেলার চিত্র ভিন্ন। এখানে প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অবৈধ ইটভাটা অবাধেই এ জেলায় চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ৪৩টি ইটভাটার না আছে পরিবেশ ছাড়পত্র, না আছে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন। এরপরও জয়পুরহাটের অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। দিব্যি চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইটভাটাতেই জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে। গণমাধ্যমে আসা এমন প্রতিবেদন যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গতবছর ১০ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রিটও হয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে দেশের জেলা প্রশাসকদের সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেন। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও পরিবেশ সচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
জয়পুরহাট জেলার পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এবং হালনাগাদ তালিকায় দেখা গেছে এ জেলায় ৪৮ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র পাঁচটি পরিবেশের ছাড়পত্র আছে। বাকি সব অবৈধভাবে চলছে। প্রশাসন এ বিষয়ে নিচ্ছে না তেমন কোন জোরালো ব্যবস্থা।
ইটভাটার মাটি পরিবহনে প্রতিনিয়ত ট্রাক্টর চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ফসলি জমি তার উর্ব্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। ছাড়পত্র না থাকা ইটভাটাগুলোর উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয় বলে হালনাগাদ তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের জয়পুরহাট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন।
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৪ ধারায় বলা আছে, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত, সেই জেলার জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত করতে পারবে না। ওই আইনের ৮(১) ধারায় বলা আছে, ছাড়পত্র থাকুক বা না থাকুক,আইন কার্যকরের পর আবাসিক বাণিজ্যিক ও সংরক্ষিত এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি, কৃষিজমি এবং বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এর নিয়ম মানা হয়নি অধিকাংশ ইটভাটায়। এইসব ইটভাটা থেকে বসতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্ব খুবই কম। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার বড় তাজপুর গ্রামে এইচ ব্রিকস ভাটার পাশেই ফসলি জমি এবং মাত্র কয়েক গজ দূরে বড়তাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর মেসার্স লিটন ব্রিকস ভাটা ৩০০ বা ৩৫০ গজ দূরে রেললাইন ও ৬০০ গজ দূরে লোকালয়। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভারুরিয়া গ্রামে মেসার্স ভাই-ভাই ব্রিকস ভাটার কাছেই আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাঁচবিবির উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রামে মেসার্স বেলী ব্রিকস ভাটার ২২০ মিটার দূরে রেললাইন ও ৪৫০ মিটার দূরে জনবসতি। সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। সরেজমিনে আরও দেখা গেছে জয়পুরহাটের মেসার্স হারুন এন্ড বিকস ফিল্ডে জ্বালানির সরঞ্জাম হিসেবে কাঠ খড়ি পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রাখা হয়েছে।
বড় তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ইটভাটার ধুলাবালিতে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভীমপুর এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রাস্তা ও বসতবাড়ির আশপাশে ইটভাটার ধুলাবালি ওড়ে। এতে সমস্যা হয়। ফলের গাছের ফলন কমছে। ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয় না। ইটের ভাটার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না।
জয়পুরহাট জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, আমাদের বেশির ভাগ ইটভাটার ২০১৫ সালের পর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স নবায়ন করা যায় না। এই কারণে ইটভাটাগুলি অবৈধ। তবে ইটভাটাগুলোর মালিকেরা নিয়মিত প্রতিবছর আয়কর ও ভ্যাট দিচ্ছেন।
জয়পুরহাট জেলার জেলা প্রশাসক জনাব মো. সালেহীন তানভীর গাজীর কাছে এসব অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন দৈনিক ইনকিলাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এসব ভাটাগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি ও খতিয়ে দেখছি খুব দ্রুতই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সিলেট সীমান্তে নিহত এক তরুন : বিজিবির প্রতিবাদ
যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছেন তাদের বিচার হওয়া উচিত.রাজশাহীতে বদিউল আলম মজুমদার
ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় মামলা
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় বাড়ল
মেহেরপুর জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে কেএমপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে; কেএমপি কমিশনার
মির্জাপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত
বাগেরহাটে ষড়যন্দ্রমূলক মিথ্যা মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে প্রবাসীর সংবাদ সম্মেলন
পদবঞ্চিতদের আড়ালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, জবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় বিবৃতি
টিকেটে ছাড়াই তারকা খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সুযোগ পাবে সিলেটবাসী
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২ কমিটি গঠন
কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ার শাস্তি পেলেন কোহলি
আটঘরিয়ায় ফসলী জমিতে চলছে পুকুর খনন আশঙ্কাজনক হারে কমছে জমি
পাইকগাছায় অসুস্থ গরীবদের জন্য জিয়া প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
কেশবপুর উপজেলা মৎসলীগের সভাপতি ও সুফলাকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমান ডিবি পুলিশের হাতে আটক
মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষকের প্রান গেল
বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
কুলাউড়ায় মোবাইল চুরির অপবাদ সইতে না পেরে যুবকের আত্মহত্যা
মাদারীপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মানববন্ধন
তারাকান্দায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত-৬