প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের টাকা ভাগাভাগি
১১ জুলাই ২০২৩, ১১:০৯ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে সারাদেশ বিভিন্ন প্রশিক্ষক কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের জনশক্তিতে রুপান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হলেও দুর্নীতিতে ছেড়ে গেছে উদ্যোগটি। প্রকল্পের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটায় ব্যপক দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। সেই ক্রয়ের টাকা ভাগাভাগি করে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনো চিঠি চালাচালি চলছে।
জানা যায়, দেশের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে তরুণদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানে যুক্ত করার সরকারি উদ্যোগ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবছে। প্রশিক্ষণের যন্ত্রপাতি ঢাকা ক্রয় করে বিদেশী কোম্পানীর নামে কোটি কোটি টাকা বিল উত্তোতন করে নিয়েছেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ডিজি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা। এমন ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা এবং তার দুই সহযোগী কেন্দ্রের কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত ও ইলেকট্রিক ট্রেডের চীফ ইন্সট্রাক্টর শেখ রকিবুল হাসান এবং বিএমইটির উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিচালনা) কর্মকর্তা দেওয়ান মো. নজমুল হকসহ বেশকয়েজন কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এব দুর্নীতি-বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা গত ছয় মাসেও শেষ করতে পারেনি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) গঠিত তদন্ত কমিটি। বিএমইটির ডিজি দবদিরে সচিবের দপ্তর থেকে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে একজনকে অব্যহতিদেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সচিব ও ডিজির দপ্তরে চিঠি চালাচালি হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছেন।
চার-পাঁচটি টিটিসি ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলো সফলতা পায়নি বলছে আইএমইডি। প্রশিক্ষণের প্রায় ৪৪ শতাংশ হয়েছে পাঁচটি কেন্দ্র থেকেই। আর শেষের দিকে থাকা পাঁচ কেন্দ্রের আবদান মাত্র ৭ শতাংশ। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সেন্টারটি এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছে ২ হাজার ২২৯ জনকে। কিন্তু ঢাকার ডিজি অফিসে বসে থেকে প্রতিটি কেন্দ্রর প্রশিক্ষণের টাকা নিয়েছেন জনশক্তি কমর্সংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডিজি ও পরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিচালনা) প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দিন,উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিচালনা) দেওয়ান মো, নজমুল হকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জনশক্তি কমর্সংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানার দুর্নীতি-বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিজি অফিসে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উপসচিব এ এস এম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা এবং তার দুই সহযোগী কেন্দ্রের কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত ও ইলেকট্রিক ট্রেডের চীফ ইন্সট্রাক্টর শেখ রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এক কোটি এক লাখ ২৭ হাজার টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আগামী ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনসহ গত ১৩ মার্চ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। তদন্তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা গত ছয় মাসেও শেষ করতে পারেনি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) গঠিত তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা গত ১৪ বছরে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্মরর্ত ছিলেন। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি তার দুই সহযোগী কেন্দ্রের কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত ও ইলেকট্রিক ট্রেডের চীফ ইন্সট্রাক্টর শেখ রকিবুল হাসান নিয়ে টিটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। পরে অনিয়ম ও দুনীতির কারণে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানাকে বদলী করা হয়। এর পরে সাবেক অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আইনুল হক যোগদান করার পরে বিভিন্ন ট্রেড ও সেকশনের যন্ত্রপাতি এবং মালামাল সঠিক আছে কি না তা বুঝিয়ে নেয়ার জন্য দুইটি ইন্টারন্যাল ভেরিফিকেশন কমিটি গঠন করেন। সেই দুই কমিটিকে কোনো যন্ত্রপাতি ও মালামাল বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে আসছেন। খায়রুল কবির নামে এক ইন্সট্রাক্টর একাধারে ইলেকট্রনিক্স, প্রি-ডিপার্চার ওরিয়েন্টশন, প্লান্বিং ট্রেড ও ম্যাসন ট্রেড এ চারটির ট্রেডের দায়িত্ব নিয়োজিত থাকায় তিনি বদলী হয়ে লালমনিরহাট টিটিসিতে গেলেও এসব ট্রেডের দায়িত্ব আজো বুঝে দিতে পারেনি। অনেক মালামাল না বুঝে চলেগেছে এত সরকারে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত ২০০৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারি ফরম বিক্রির কোনো আয়-ব্যয়ের কোনো তথ্য রেজিষ্টার ও রিসিট বইয়ে নেই। গত ১৪ বছরে সরকারি ফরম বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা সাবেক অধ্যক্ষ মো. মাসুদ রানা ও তার সহযোগিরা ২০ লাখ টাকা আতœসাত করেছেন। বিভিন্ন সময় ঢাকা ও দিনাজপুরে ভ্রুমন করেছে সে বাবদ প্রতিষ্ঠানের আরো সরকারি ৩০ লাখ টাকা তুলে নিয়ে আতœসাত করেছেন। এ বিষয়ে নোটিশ করা হলেও তার জবাব দিতে পারেনি সাবেক অধ্যক্ষ মাসুদ রানা।গত ২০১৭ সাল থেকে প্রি-ডিপার্চার কোর্সে শুরু হলেও এ কোর্সের কোনো সুনিষ্টি তথ্য ও হিসেব নেই। প্রি-পার্চার কোর্সের ইনচার্জ মো. খায়রুল কবির, ইন্সট্রাক্টর মো. আমিনুল ইসলামের নামে দুই শিক্ষক দায়িত্ব পালন করলে তারা আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দেখাতে পারেনি।তারা দুইজনেই অধ্যক্ষ মাসুদ রানাকে দায়ি করেছেন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বেসিক কোর্সের আওতায় নিয়মিত কম্পিউটার স্বনির্ভর কোর্সে ৩/৪টি ব্যচ চললেও তার কোনো সরকার হিসেব নেই। এ কোর্সের সময় বার বার মালামাল ক্রয় দেখিয়ে সরকারে লাখ লাখ টাকা আতœসাত করা হয়। এদিকে সরকারি ভাবে গত ২০১৯-২০২০ সালে এ প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এটাকার কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার করে পুরোটাকা উত্তোলন করে আতœসাত করেন। তা জানা জানি হলে পরে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এক ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করেন। সেই ঠিকাদাকে এখনো বিল পরিশোধ করা হয়নি। পরে ঠিকাদার হাট এ্যাটাক করে মারা যান। বর্তমানে তার পরিবার বিলের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গত ২০১৯ সালে এসটিইপি প্রজেক্টর মাধ্যমে গার্মেস ট্রেডের জন্য জিডি-৪ এর মাধ্যমে একটি ফেব্রিক্স ইন্সপেকশন মেশিন ক্রয় করা হয়। মেশিনটির স্পেসিফিকেশন ব্র্যান্ড প্যারামাউন্ট মডেল চেক মাস্টার ভারতের। যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। কিন্তু তা ভারতে থেকে না ক্রিয় করে রাজধানীর ধোলাই খাল বাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মেশিন ক্রয় করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা আতœসাত করা হয়। জিডি-৩ এর মাদ্যমে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আন্তজারিক মানের পিএলসি মেশিন চায়না আমদানি করার চুক্তি থাকলেও তা না করে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের রাজধানীর ধোঁলাইখাল বাজার থেকে দেশীয় ভাবে তৈরি করা যন্ত্রপাতি ৩/৪ লাখ টাকা মেশিন ক্রয় করা হয়। আর ১০ লাখ টাকা অধ্যক্ষ মাসুদ রানা, প্রকিউরমেন্ট ইনচার্জ মেখ রফিকুল হাসান ও ফিন্যান্স ইনচার্জ নিমাই কুমার দত্ত মিলে আতœসাত করেছেন। ডিজি-১ এর মাধ্যমে ৪টি ডিজিটাল ইন্টারেক্টিভ বোর্ড ক্রয় করা হয়, যার মূল্য ৩২ লাখ টাকা। যার বাজার মূল্য ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা । এসব মাল ক্রয়ে ৫ লাখ টাকা বেশি দেয়িয়ে ২০ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। এছাড়াও ১১টি প্রকল্পের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ বিষয়ে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা ইনকিলাবকে বলেন,এগুলো নিয়ে অধিদপ্তর থেকে তদন্তটি এসেছিলো। তারা কি প্রতিবেদন দিয়েছে তা আমার জানা নেই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা
সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন
সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’
আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক
বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩
নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ
হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী
হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম
চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক
ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা
১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া