লক্ষ্য এবার ঢাকা
১১ জুলাই ২০২৩, ১১:৪০ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
বিগত প্রায় এক বছর ধরে সারাদেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করে তুলেছে। দলের কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা করে দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটিও ছড়িয়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এখন এই দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। আজ রাজধানীর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে এক দফা এক দাবি ঘোষণার মাধ্যমে মাঠে গড়াচ্ছে সরকার পতনের চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। যেখানে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আরো ৩৫টি দল। সকলেই একই দিনে একই সময়ে এক দফা এক দাবি ঘোষণা করবেন পৃথক পৃথকভাবে। থাকবে নতুন কর্মসূচির ঘোষণাও। নয়াপল্টনের আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি।
রাজধানীর ঢাকার প্রতিটি থানায় থানায় মাইকিং, নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা, ঢাকার আশাপাশের জেলাগুলোকেও অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। লাখো জনতার ঢল নামিয়ে গণতরঙ্গ সৃষ্টির আশা বিএনপির। এদিকে বিএনপির আজকের সমাবেশ নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া জেগেছে মানুষের মধ্যে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই মানুষের মুখে মুখে এখন আলোচনা হচ্ছে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে। সকলের দৃষ্টিও নয়াপল্টনের দিকে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বিএনপির এক দফা এক দাবি ঘোষণা এবং দাবি আদায়ে বিএনপি কি ধরণের কর্মসূচি দিচ্ছে সেটির প্রতি।
এদিকে সমাবেশ থেকে ঠিক কী ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে- তা নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করেছে দলটি। খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাও এ ব্যাপারে গতকাল রাত পর্যন্ত ছিলেন পুরোপুরি অন্ধকারে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতা জানান, এক দফা এক দাবি ঘোষণা করে সরকারকে নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হতে পারে। এছাড়া পদত্যাগের দাবিতে একগুচ্ছ কর্মসূচিও আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মানববন্ধন, পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, অবস্থান, লংমার্চ বা রোড মার্চ। জানা যায়, আগামী শুক্রবার ঢাকাজুড়ে মানববন্ধন বা মানবপ্রাচীর অথবা বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে একদফার আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। এদিকে ঢাকাজুড়ে মানববন্ধনের পর পর্যায়ক্রমে পদযাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, সমাবেশের মতো কর্মসূচি ঘুরেফিরে আসতে পারে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আসবে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি। এতদিন ধরে ঢাকার বাইরে কর্মসূচি হলেও একদফা আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে রাজধানী ঢাকা। সব কর্মসূচি পালন হবে যুগপৎভাবে। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিকরা যার যার প্ল্যাটফর্ম থেকে একদফার আন্দোলন ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ঘোষিত হতে পারে ৩১ দফা ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখাও’। এছাড়া পেশাজীবীদেরও মাঠে নামাতে চায় বিএনপি। তাদের মধ্যে ডাক্তার, আইনজীবীদের পোষাকসহ রাস্তায় নামা, শিক্ষকদের বই-খাতা-কলম নিয়ে নামানোর পরিকল্পনা আছে।
ঘোষণা আসবে যুগপৎ ধারার বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফার। ঘোষণার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা: বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসী সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করা।
দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন বিএনপির আন্দোলন যেভাবে চলমান, ঠিক সেভাবেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি আসবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে।
সরকারের পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গতবছরের আগস্ট থেকেই জোরদার আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। এলক্ষ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে। বিশেষ করে বিভাগীয় গণসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল দলটি। এরপর ডিসেম্বরে সরকারবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে শুরু হয় যুগপৎ আন্দোলন।
নির্বাচনের আর ৬ মাসের কম সময় বাকী, সরকারের দুঃশাসনে সাধারণ মানুষের দুর্দশা, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিদেশীদের চাপের কারণে এখন এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপি।
এদিকে এখন ঢাকায় অবস্থান করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি পৃথক প্রতিনিধি দল। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি যে সাধারণ মানুষের সমর্থন নেই এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন চায় সেটিও বিদেশী প্রতিনিধি দলকে দেখাতে চায় বিএনপি। এজন্য নয়াপল্টনের আজকের সমাবেশকে এসিড টেস্ট হিসেবেই নিয়েছেন তারা। বিগত দিনে নয়াপল্টনে যত সমাবেশ করেছে তারা এবার সেসব সমাবেশের চেয়ে আরো বেশি সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে। এজন্য কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো কেন্দ্রীয় ও মহানগর এবং ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছে। দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর পর প্রচারণা চালানো হচ্ছে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, ‘প্রিয় নগরবাসী, আসছে ১২ জুলাই বুধবার দুপুর ২টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম কমানো ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হবে এ সমাবেশ। উক্ত সমাবেশে দলে দলে যোগদান করে আওয়াজ তুলুন- এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার।’ চল চল পল্টন চল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোল।’
প্রচারণা চলছে ভার্চুয়াল মাধ্যমেও। প্রতিটি নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নয়াপল্টনের সমাবেশ সফল করতে পোস্ট করেছেন পোস্টার, ফেস্টুন। কেউ কেউ আবার ভিডিও করে সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আগের মতই। মূলত, আমাদের ফোকাস ছিলো এক দফার আন্দোলনের ম্যাসেজ অভিন্নভাবে আন্দোলনে শরিকরা যাতে একযোগে ঘোষণা করি। আর লোক সমাগমের বিষয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ যেন এই সমাবেশে স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির সমাবেশ হবে নজিরবিহীন। তিনি বলেন, বুধবার ঢাকায় জনসমাবেশ ঘিরে পুলিশ নানাভাবে নেতাকর্মীদের নির্যাতন, হয়রানি করে যাচ্ছে। তারা গায়েবি মামলা দিচ্ছে। মাইকিংয়ে বাধা দিয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার ও হয়রানি কোনো কিছুতেই নেতকর্মীদের দমাতে পারেনি। জনসমাবেশে বিপুল তরঙ্গ ও স্রোত তৈরি হবে। এই সমাবেশ একেবারই ব্যাতিক্রম এবং নজিরবিহীন হবে। কারণ মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১২ জুলাইয়ে পর চলমান আন্দোলন আরও উচ্চতর গতিতে, বেশি তীব্রতরভাবে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের সফলতার দিকে এগিয়ে যাবো। সে লক্ষ্যে কালকে আমরা এটি যৌথ ঘোষণা দেবো। যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা একই সময়ে একই ঘোষণা দেবে যার-যার অবস্থান থেকে।
আমীর খসরু বলেন, আমরা মনে করি এ ঘোষণার পর জাতি আশান্বিত ও উজ্জীবিত হবে। আন্দোলন আরও শক্তিশালী ও বেগবান হয়ে এই সরকারের পতনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
কে কোথায় কর্মসূচি করবে: আজ নয়াপল্টনে সমাবেশে এক দফা এক দাবি ঘোষণা করবে বিএনপি। একইসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স হলে, ১২ দলীয় জোট ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির পাশে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ৫টায় এফডিসি মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণফোরাম ৪টায় মতিঝিলে নটরডেম কলেজের বিপরীতে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৩টায় গণঅধিকার পরিষদ (নুর), গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), লেবার পার্টি নয়াপল্টনে, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট জাতীয় প্রেসক্লাবে, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ একই স্থানে। ###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা
সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন
সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’
আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক
বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩
নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ
হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী
হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম
চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক
ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা
১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া