অনাবৃষ্টিতে বরেন্দ্র অঞ্চল
১৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
বর্ষার আষাঢ় শ্রাবণ গেল। বরেন্দ্র অঞ্চলে ঝরলোনা কাঙ্খিত বৃষ্টি। বরেন্দ্রে তপ্ত মাটি হয়নি সিক্ত। ফলে বড্ড পেরেশানীতে আছে কৃষি প্রধান অঞ্চলের মানুষ। সময় চলে যাচ্ছে এখনো শেষ করতে পারেনি বৃষ্টি নির্ভর ফসল আমন ধানের। দেশের বিভিন্নস্থানে বান বর্ষণে থৈ থৈ করলেও এ অঞ্চলের খাল বিল পুকুর ফসলের মাঠ শুকনো। আউশ আবাদ কোন রকমে করলেও আমন নিয়ে বিপাকে। বীজতলা থেকে মাঠে রোপণ সবকিছুই করতে হচ্ছে মাটির নীচ থেকে পানি তুলে। এ সময় বৃষ্টি হয়। গভীর নলকূপগুলো সাধারণত বন্ধ থাকে। মেরামত করা হয় এই সময়ে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। সেই খরা মওসুম থেকে পানি তোলা হচ্ছে এখনো চলছে। অবিরাম পানি তোলাতে নীচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।
এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগা, নাটোর) আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ পাঁচ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে রাজশাহীতে ৮০ হাজার ৭৫৯ হেক্টর,নওগা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর, নাটোরে ৭৩ হাজার ৪ হেক্টর, নবাবগঞ্জে ৫৩ হাজার পাঁচশো হেক্টরে। এ পর্যন্ত রোপা আমনের আবাদের অগ্রগতি হচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এখনো বাকী রয়েছে প্রায় অর্ধেক জমি। সবার আশা ছিল আষাঢ়ে বৃষ্টি না হলেও শ্রাবণে ভারী বর্ষণ হবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য দেয়া হচ্ছিল। সে তথ্যে মানুষ আকাশের দিকে চেয়েছিল। মাঝেমধ্যে আকাশজুড়ে কালো মেঘ জমলেও ঝরেনি বৃষ্টি। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে তপ্ত আবহাওয়া কিছুটা হলেও শীতল হয়েছে। প্রকৃৃতি এমন বিরুপতায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ আমন আবাদের সময় ফুরিয়ে আসছে। আর ভাদ্র মাসে অর্ধেক ঝরা আর অর্ধেক খরা। বৃষ্টির অভাবে আউস আবাদও তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। বরেন্দ্র অঞ্চলে আউস আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ আশী হাজার পাঁচশো পাঁচ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ এবার আউশের জমি কমেছে প্রায় কুঁড়ি হাজার হেক্টর।
এবার রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টিও ঝরেছে কম। আষাঢ় মাসে দশদিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৪ দশমিক মিলিমিটার, আর জুলাই মাসে ষোলদিনে বৃষ্টি হয়েছে ১৩৮.৩ মিলিমিটার। আর চলতি মাসে পনের দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯০ মিলিমিটার।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, এবার বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। ভারী বর্ষণ নেই। সাধারণত ৪৪ মিলিমিটাররের বেশি বৃষ্টি হলে তাতে ভারী বর্ষণ ধরা হয়। এবার এ পর্যন্ত আষাঢ় মাসে একদিন মাত্র ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরপর সব ছিটে ফোটা। চলতি মাসের পনের দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯০ মিলিমিটার।
বরেন্দ্র অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় সেচ দিয়ে কৃষক আমন আবাদের চেষ্টা করছে। সেচের পানির জন্য সরকারি বেসরকারি গভীর নলকূপের কাছে কৃষকদের লাইন। সবচেয়ে উঁচু এলাকা হিসাবে পরিচিত নাচোল ইউনিয়নের কৃষক ইয়াসিন আলী বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় তারা নলকূপের পানি কিনে সেচ দিচ্ছেন। তাদের আবার সিরিয়াল দিতে হচ্ছে। আবার কখনো কখনো বিদ্যুতের অভাবে পাম্প চলছেনা। বড্ড ঝামেলায় আছি। সেচের খরচ বাড়ায় আবাদের খরচও বাড়ছে। কৃষক জুলফিকারের মতে আমন আবাদের শুরুতে বীজতলা তৈরী করতে কিছু সেচ দিতে হতো। আর বাকী আবাদ হতো বৃষ্টির পানিতে। এবার পুরোটাই করতে হচ্ছে সেচদিয়ে। আগে যেখানে একবিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে খরচ হতো চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এখন পড়ছে দ্বিগুন। তাছাড়া বেড়েছে সেচ আর কীটনাশক আর শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে কি যে দাঁড়াবে আল্লাহ মালুম।
এদিকে এবার বর্ষা মওসুমে পদ্মা ভরেনি। নেই থৈ থৈ করা পানি। পদ্মায় পানি না থাকায় এর শাখা নদী খাল বিল পানি আসেনি। সারা বছর ফারাক্কার গেটদিয়ে পানি আটকে রেখে এপারের মানুষকে কষ্ট দিলেও বর্ষার সময় ভারতের বিহার মালদহের বন্যা। সামলাতে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দিয়ে ওপারের মানুষকে ডুবিয়ে মারে। এমন খেলা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এবার বিহারে বন্যা না হওয়ায় ফারাক্কার গেট খুলে দেয়া হয়নি। ফলে এপারে পানি আসেনি। বান ডাকেনি মরা পদ্মাসহ সংযুক্ত নদী খাল বিলে। একদিকে ভারী বর্ষণ নেই।
অন্যদিকে নদীতে পানি নেই। বর্ষা মওসুমে খাঁ খাঁ অবস্থা। পানির জন্য চলছে হা পিত্যেশ। নীচ থেকে ক্রমাগত পানি তুলতে তুলতে বরেন্দ্রের গতর খালি হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে গভীর নলকূপে পানি উঠছেনা। সেচ নয় খাবার পানিতে টান ধরেছে। ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রিচার্জ হচ্ছেনা। ভূগর্ভস্থরে পানি। গত তিন দশকে পানির স্তর নেমেছে আট থেকে আঠারো মিটার। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে গেছে। এক তথ্যে দেখা যায় ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে রাজশাহীতে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছি ১৬৫০ মিলিমিটার। ২১ সালে গড় বৃষ্টিপাত কমে দাঁড়িয়েছে ১০৫০ মিলিমিটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বরেন্দ্রে অঞ্চলের সব কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ভূগর্ভের পানি। কৃষি, মাছ চাষ, খাবার পানিসহ সর্বক্ষেত্রে এ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের
বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি, আহত ৩
দুইবার আবেদন করেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব পায়নি তারিক সিদ্দিকের পরিবার
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
মায়ের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে হাসপাতালে তারেক রহমান
রাজশাহীতে এবেলা ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় পিছু হটল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ
আশুলিয়ায় মেরামতের নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে
'বিয়ের গন্ডগোল' নিয়ে জোভান–তটিনী আত্মপ্রকাশ
ভারতে বসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন ফ্যাসিস্টের দোসর আলাউদ্দিন নাসিম
রুশ জ্বালানিখাতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা
সিরিয়ার দামেস্কের মসজিদে পদদলিত হয়ে নিহত ৪ জন
কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল
খাদ্য পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজর রাখতে পুনর্গঠন হলো এফপিএমসি
দেশে অস্তিত্বহীন দলবাজরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করছে: জয়নুল আবদিন ফারুক
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা
ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ১২ বাংলাদেশি
লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সবশেষ যা জানা গেল