প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ৯০ চিকিৎসক
১৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৬ পিএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। তাদের একটি অংশ পাস করে ডাক্তারও হয়েছে। এসব প্রশ্ন ফাঁস করে আটটি প্রতারকচক্র কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ওই আটটি চক্রের ১৫০জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করেছে র্যাব, ডিবি ও সিআইডি। এ চক্রের সাথে জড়িত ৯০জনকে গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। এদের মধ্যে ১৫জন চিকিৎসক রয়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতো ডিজিটাল ডিভাইস। আর সহায়তা করতো প্রেসের কর্মচারীরাও। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এদের মধ্যে রয়েছে সাতজন চিকিৎসক। গ্রেফতারকৃতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা নিয়ে তদন্ত করছে সিআইডি।
সিআইডি ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে। চক্রের সদস্যরা ইতোপূর্বে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে ও নগদে হাতিয়ে নিয়েছে। গত ১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয় এসব চক্রের হাত ধরে।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সিআইডি ১২জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে এক দম্পতিসহ সাতজন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অর্থের বিনিময়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সুবিধাভোগী শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। একই সাথে এ চক্রের সাথে ৯০জনের অধিক জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, মেডিক্যালে প্রশ্ন ফাঁস চক্রে ফেইম, প্রাইমেট, থ্রি-ডক্টরস, মেডিকো, ই-হক কোচিং সেন্টার ও ইউনির্ভাসেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সহায়তা কেন্দ্রের মালিকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। যা তারা খতিয়ে দেখছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮টি চক্রের ৮০ সক্রিয় সদস্য কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। বিভিন্ন সময় ১৫০জনকে গ্রেফতার করা হলেও ৮ জন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমেধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়ে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড (প্রবেশপত্র) উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেডিকেল, ডেন্টাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তিচ্ছুদের কাছে তা চড়া দামে বিক্রি করে আসছিল একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রধান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন ভ‚ঁইয়া মুন্নু। তার আপন খালাতো ভাই আব্দুস সালাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর প্রিন্টিং প্রেসের মেশিনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই প্রেসেই ছাপা হতো মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। সেই সুযোগেই সালামের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বের করে ভর্তিচ্ছুদের কাছে বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন মুন্নু। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট মুন্নুসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে মামলা করা হয়। এ চক্রের সদস্যরা জামিনে বেরিয়ে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র যে প্রতি বছরই সফল হয়েছে তা নয়। প্রশ্নফাঁস সংঘটিত হয় মূলত চারটি স্টেপে। প্রথম স্টেপে প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়। দ্বিতীয় স্টেপে চক্রের হোতাদের হাতে তা চলে যায়। এরপর তারা তাদের বিশ্বস্ত হ্যান্ডসের (সহযোগীদের) কাছে পৌঁছে দেয়। শেষ স্টেপে টাকার বিনিময়ে তা পৌঁছে যায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে। প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাইনি। তবে আমরা অনেক চিকিৎসকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে সতর্ক হয়ে গেছেন। তদন্তের স্বার্থে সংখ্যা বা তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় এদের গ্রেফতার করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসিম : সিলেটে কাইয়ুম চৌধুরী
ডার্ক ওয়েবে গ্রাহকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ : সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধুর মৃত্যু
কর্মীদের বীমা সুরক্ষা প্রদানে ঢাকা ব্যাংক ও মেটলাইফের চুক্তি স্বাক্ষর
পাঠ্যবইয়ে নাম যুক্ত হওয়ায় আমার চেয়ে পরিবার বেশি খুশি: নিগার
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় সম্মেলন- ২০২৫ অনুষ্ঠিত
শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার আভাস, বাড়বে রাত-দিনের তাপমাত্রা
বগুড়ায় শিবিরের সাবেক কর্মী সাথী ও সদস্যদের মিলন মেলায় রাফিকুল ইসলাম খান
ক্যাম্পাসভিত্তিক জুলাইয়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখার আহ্বান প্রেস সচিবের
শিবালয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর পদ্মায় ভেসে উঠলো বারেক মেম্বরের লাশ
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: যাদের উপর থাকবে নজর
এবি পার্টির কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি
হ্যানয় গ্র্যান্ড মাস্টার্স-২ দাবায় ফাহাদের হার
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা : লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ
মানিকগঞ্জে নিখোঁজ সাবেক ইউপি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
পাঠ্যবই সংশোধনের আহ্বান বিএনপির
৭১'র পরাজিত শক্তি ২৪'র আন্দোলনকে ব্যবহার করে ৭১'র গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়: নাছির
সীমান্তে অস্থিতিশলীতাই প্রমান করে ভারত কোন দিনই আমাদের বন্ধু ছিলো না : পীর সাহেব চরমোনাই
নাইজেরিয়ায় অতর্কিত বন্দুক হামলা, সরকারি বাহিনীর ২১ সদস্য নিহত