প্রশ্ন রিজভীর

ভারত কি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না?

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৯ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন নিয়ে দুদিন ধরে খুব আলোচনা চলছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দিল্লির কূটনীতিকরা বলেছেন বাংলাদেশের হাসিনাকে দুর্বল করলে ভারত ও আমেরিকার জন্য সুখকর হবে না।

আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি! বাংলাদেশ কি স্বাধীন না? আমাদের দেশ তো স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক একটি দেশ। তাদের নীতি নির্ধারকরা কিভাবে বলতে পারে একজন অবৈধ ভোটার বিহীন প্রধানমন্ত্রীকে দুর্বল করলে তাদের স্বার্থ বিকৃত হবে। আমার মাথায় ধরছে না। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীন দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন স্বাধীনতার প্রতি অবজ্ঞা মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন সে আন্দোলনকে নিরৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা যদি একদলীয় কোন রাষ্ট্র বলতো তাহলে হত। কিন্তু এটা বলেছে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা। তাহলে আমরা কি ভাববো আঞ্চলিকতার আড়ালে আরেকটি কর্তৃত্ব বাদের অধীনে আছি? দেশের জনগণ কি এটা ভাববে না? এটাই তো জনগণ ভাববে, মনে করবে। অথচ দেশে গণতন্ত্র না থাকলে উগ্রবাদের জন্ম নেয়। গণতন্ত্র না থাকলেই তো জঙ্গিবাদের উত্থান হয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে সরকার, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগের গুন্ডা-পা-াদের সাথে। এতগুলো শক্তির সাথে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তার মানে আমরা ন্যায়ের পক্ষে আদর্শের পক্ষে সত্যের পক্ষে কথা বলি বলেই আমাদের এত সাহস, এত বড় শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি।

ভারতের কূটনীতিকবিদদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জিসানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তার খোঁজ নিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ৬ জন নেতা গিয়েছিল তাদেরও তুলে নিয়ে গেছে। সবাই জানে এটা গোয়েন্দারা করেছে। আমরা ওই মাইক্রোবাসের নাম্বারও জানি। কিন্তু তারা এখনো স্বীকার করছে না। রাষ্ট্রের তো এই চরিত্র হওয়ার কথা ছিল না। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রে কেউ কথা বললে অদৃশ্য হয়ে যাবে এটা হওয়ার কথা ছিল না? আর সেই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে যে আমার দেশের লোকদের কণ্ঠস্বরকে বন্ধ করার জন্য, গলার মধ্যে ফাঁসির দড়ি লাগিয়ে রেখেছে। সে টিকে থাকবে একটা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা এটা কিভাবে বলতে পারে?

রিজভী বলেন, তারা কি আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না? তারা কি আমাদের সর্বভৌমের বিশ্বাস করে না? এটা তো এখন সারা দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন জেগে উঠেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। যেমন- জিসানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তেমনি সারা দেশে এরকম অবস্থা চলছে। এরকম নিশ্চিত অন্ধকারের মধ্যে আমাদেরকে পথ চলতে হচ্ছে। যিনি আমাদের আলোর দিশারী সেই বেগম খালেদা জিয়াকে ওরা বন্দি করে রেখেছে। শুধুমাত্র কর্তৃত্ব বাদী শাসন আওয়ামী একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

তিনি বলেন, এই মানবাধিকারহীন, গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্র শেখ হাসিনার অধীনে পরিচালিত এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এটা নানাভাবে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ।

শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না নিজেই প্রমাণ করেছেন: এদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে যে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, সেটা তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। তার নির্বাচনে বিরোধী দল থাকে জেল খানায়। নির্বাচনী মাঠ শূণ্য করার জন্য একের পর এক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। ভোটাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয় না। তাই, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এই সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখে জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন মাস্টার, তমিজউদ্দিন, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু। সমাবেশ শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বিএনপি এবং অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহনে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

রিজভী বলেছেন, সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে না কেন? তিনি যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য যান সেখানে চিকিৎসায় ধরা পড়তে পারে কারাগারে বন্দী রাখা অবস্থায় তার খাবারে বিষ মিশানো হয়েছিল কিনা? বিদেশে উন্নত ল্যাবে এটা ধরা পড়তে পারে। এই কারণেই দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের ধারনা হয়, আশঙ্কা হয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে তাকে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল। কারণ শেখ হাসিনার এক তরফা নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বড় ভয় ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। পথের কাটা দূর করতে, নির্বাচনী মাঠ শূণ্য করতে রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে, আইন আদালত ব্যবহার করে বন্দি করা হয়েছিল। যে সুস্থ মানুষটি কারাগারের ভেতরে গেলেন, আজকে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কেন? কারণ, শেখ হাসিনার বিরাট চক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে তুলে দেওয়া হবে। উনি যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ^াসী এক দল থাকবে , এক নেত্রী থাকবে। কেউ কোনো সত্য উচ্চারণ করবে না। যে করবে তার সে গুমের শিকার হবে বা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হবে। এই কারনেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছেন।####


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যুবদল নেতা হান্নানের চিকিৎসায় সহায়তা দিলেন মজনু

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যুবদল নেতা হান্নানের চিকিৎসায় সহায়তা দিলেন মজনু

কারো কাছে থাকা আমানত চুরি হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

কারো কাছে থাকা আমানত চুরি হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

মাগুরায় ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল চালক নিহত

মাগুরায় ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল চালক নিহত

শেখ হাসিনার আমলে সীমান্তের কাঁটা তারে লাশ ঝুলন্ত, এখন পতাকা বৈঠক হয়--শাকিল উজ্জামান

শেখ হাসিনার আমলে সীমান্তের কাঁটা তারে লাশ ঝুলন্ত, এখন পতাকা বৈঠক হয়--শাকিল উজ্জামান

পেকুয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় মাওলানা ইমতিয়াজ

পেকুয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় মাওলানা ইমতিয়াজ

থানা থেকে ছিনাইয়া নেওয়া যুবদল নেতা গ্রেফতার

থানা থেকে ছিনাইয়া নেওয়া যুবদল নেতা গ্রেফতার

শ্রীনগরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার

শ্রীনগরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার

মুকসুদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা, প্রতিবাদ জানালো আ.লীগ

মুকসুদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা, প্রতিবাদ জানালো আ.লীগ

নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো

নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ

এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান

এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান

শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা

শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা

মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!

মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!

সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি

রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি

কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০

কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০

দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন

পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন

তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ

তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ