ঢাকা   মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্ধকারে : নিঃস্ব অনেকের দীর্ঘশ্বাস

এমটিএফইয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারণা

Daily Inqilab সাখাওয়াত হোসেন

২১ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৬ পিএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম

অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এমটিএফই’র প্রতারণায় অনেকটাই অন্ধকারে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। দেশজুড়ে আলোচনায় এমএলএম ব্যবসার ফাঁদ “এমটিএফই”। অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা এই দুবাইভিত্তিক কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছেন লক্ষাধিক যুবক। ধারণা করা হচ্ছে, এই কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতারণা নিয়ে চলছে বিভিন্ন বিশ্লেষণ। এরইমধ্যে এমটিএফই নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এমটিএফই’র ৪০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রয়েছে বাংলাদেশ। এই ৪০০ সিইও’র বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের আটক বা গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সাইবার ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিআইডি ও ডিএমপির ডিবির একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমটিএফই’র বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ও মার্কেটিংয়ের লোকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এত বড় অংকের টাকা প্রতারনার বিষয়ে আগে প্রায় সকল সংস্থার কর্মকর্তারা অন্ধকারে ছিলেন বলে ওই কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন- বিট কয়েন) ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও তথ্য পেলেও এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা পাওয়া যায়নি। তবে মামলা না পেলেও এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ছিলো বায়বীয়। তারা প্রতারণার জন্য কোনো পণ্যের ব্যবহার করেনি অন্যান্য এমএলএম কোম্পানির মতো। তারা শুধু অ্যাপের মাধ্যমে এই প্রতারণা করেছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আমাদের কাজ করছি।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা এমটিএফই’র অনেক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অধিকাংশই অ্যাপটির বিষয়ে জানতো না। তারা স্থানীয় সিইওদের সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে অ্যাপটির বিষয়ে তথ্য জানতে পারে। প্রলোভিত হয়। এই দায় সিইওরা এড়াতে পারে না। তাই তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে এমটিএফই’র কত গ্রাহক আছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে এমটিএফই’র হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মোট ৮ লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের অ্যাপে। শুধু বাংলাদেশ নয়; দুবাই, ওমান, কাতার সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এমটিএফইতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এমটিএফই নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। আমরাও অভিযুক্তদের বিষয়ে নজরদারি করছি।

সিআইডির একজন ডিআইজি ইনকিলাবকে বলেন, এদের যারা রিপ্রেজেনটিভ বা মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনব। এছাড়া কেউ যদি অভিযোগ দেয় সে অভিযোগ গ্রহণ করে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এমটিএফই একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমচক্র। এর সম্পূর্ণ কার্যক্রম ছিল বায়বীয়। এ বিষয়ে নজরদারির দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এমটিএফই যে প্রতারণা করছে সে বিষয়ে তো আমাকে কেউ জানায়নি। অনেক অ্যাপস আছে, আমি কীভাবে বুঝব যে এটা প্রতারণা করছে। আর এই অ্যাপস যারা ব্যবহার করেছে তারাও তো কোনো অভিযোগ করেনি। তাহলে এ বিষয়ে কীভাবে অ্যাকশনে যাব।

দেড় লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন রাজধানীর রামপুরার মাহবুব আলম। তিনি জানান, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে এই কোম্পানির সঙ্গে আছেন। বাংলাদেশে সিইও পদমর্যাদার ব্যক্তি রয়েছেন ৪০০ জনের অধিক। শুধু রাজধানীতেই এই সিইওদের আড়াইশ অফিস উদ্বোধন হয়েছে। আর সিইও হওয়ার তালিকায় রয়েছেন আরও এক হাজার ব্যক্তি। একেকজন সিইওর অধীনে রয়েছেন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন।

কোম্পানিটিতে সিইও হিসেবে ছিলেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ৯৩০ ডলার বা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ৪৫ হাজার টাকা লাভ দিতো কোম্পানিটি। ৫০০ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ২২ হাজার টাকা লাভ দিতো। এছাড়া কেউ যদি ৩,৫০০ ডলার বিনিয়োগ করে এবং ১৫ জন ব্যক্তিকে কোম্পানিতে যুক্ত করে আর এই ১৫ জন মিলে যদি ৯ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে তাহলে ৩,৫০০ ডলার বিনিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতি মাসে অন্তত ৪ লাখ টাকা করে লাভ পেয়ে থাকেন। গত ১৫ দিন ধরে কারিগরি ত্রুটির কথা বলে বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল কোম্পানিটি। গত বৃহস্পতিবার থেকে লেনদেন বন্ধ হয়। শুক্রবার পুরোপুরি সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকের নিউজ ফিডে বিভিন্ন বিদেশি অ্যাপের লোভনীয় মুনাফার বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনলাইন প্রচার চালায় কিছু যুবক। এই অ্যাপসের একাধিক হেল্প অফিসও খোলা হয়েছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এবার প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াস্পোরা সেল’ গঠন করল নাগরিক কমিটি
ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
এবার মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত
ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে নিজেকে নিয়ে ফখর তথা অহংকার করার কিছুই নাই -ছারছীনার পীর ছাহেব
আরও

আরও পড়ুন

অভিষেকের দিনেই বিতর্কে ট্রাম্প ,বাইবেলে হাত না রেখেই শপথ

অভিষেকের দিনেই বিতর্কে ট্রাম্প ,বাইবেলে হাত না রেখেই শপথ

এবার প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াস্পোরা সেল’ গঠন করল নাগরিক কমিটি

এবার প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াস্পোরা সেল’ গঠন করল নাগরিক কমিটি

ইসরায়েলপন্থি মার্কো রুবিওকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ

ইসরায়েলপন্থি মার্কো রুবিওকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ

আমাদের এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে : জো বাইডেন

আমাদের এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে : জো বাইডেন

যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২

যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২

সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন

সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন

মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা

মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা

কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও

কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও

জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল

জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল

কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের

কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের

কলকাতায় প্রকাশ্যে মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

কলকাতায় প্রকাশ্যে মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় ফেনীতে সুদানের নাগরিক আটক

ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় ফেনীতে সুদানের নাগরিক আটক

ক্ষমতা গ্রহণ করেই বাইডেন আমলের ৭৮ নির্বাহী আদেশ বাতিল ট্রাম্পের

ক্ষমতা গ্রহণ করেই বাইডেন আমলের ৭৮ নির্বাহী আদেশ বাতিল ট্রাম্পের

পেকুয়ায় প্রাচীন খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি

পেকুয়ায় প্রাচীন খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি

ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন

ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’

গাজা একটি ‘বিশাল ধ্বংসস্তূপ’, পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন: ট্রাম্প

গাজা একটি ‘বিশাল ধ্বংসস্তূপ’, পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন: ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রথম পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: ডোনাল্ড ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রথম পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের শপথ : যোগ দেন চীনের হ্যান ঝেং ভারতের জয়শঙ্কর

ট্রাম্পের শপথ : যোগ দেন চীনের হ্যান ঝেং ভারতের জয়শঙ্কর