মির্জা ফখরুল

পশ্চিমা বিশ্ব ও ভারতকে দেখাতে জঙ্গি নাটক করছে সরকার

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২২ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম

পশ্চিমা বিশ্ব এবং ভারতকে দেখাতেই সরকার দেশে ‘জঙ্গি নাটক’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে গহীন জঙ্গলের একটা পাড়া থেকে নিরহ সাধারণ মানুষজনকে জঙ্গি বলে তুলে নিয়ে আসলো। এটা প্রয়োজন আছে তাদের? কারণ তারা দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আছে, জঙ্গি আছে। এটাকে দমন করবার জন্য শুধু তাদেরকেই দরকার। এটাই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্যে এবং সেটা দেখাতে চায় পশ্চিমা বিশ্বকে, ভারতকে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাফর আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো জানি যে, জঙ্গি বলতে তারা, জঙ্গি আওয়ামী লীগ, জঙ্গি এই সরকার। তারা এখানে সাধারণ মানুষের ওপরে আজকে যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চাপিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে তারা হত্যা করছে ধবংস করছে, তাদের সব অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, হ্যাঁ এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, এটা পাপ নয়, অপরাধ নয়। সেজন্যই যেকোনো মানুষ যারা ধর্ম পালন করেন তাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে সে (সরকার) ফয়দা হাসিল করেন।

ছাত্র দলের নেতাদের বাসা থেকে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে ৪৮ ঘন্টার পর অস্ত্র মামলায় যুক্ত করে দেয়া ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখেছেন, তিনটা অস্ত্র। সেই অস্ত্রগুলো দেখে মনে হবে যে, ২০/২৫ বছর আগে মাটিতে লুকানো ছিলো সেই অস্ত্র তুলে নিয়ে আসছে। এই মিথ্যা প্রচারণা, এই যে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা। ওরা সমস্ত দেশের মানুষকে বোকা মনে করে। এখন সবাই বুঝে, এভাবে প্রতারণা করে সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যিনি জোর করে প্রধানমন্ত্রী বসে আছেন সোমবার বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বলেছেন খুনি। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এজন্য যে, জিয়াউর রহমান সাহেব মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাকে খুন হতে হয়েছে এদেশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, তাকে খুন হতে হয়েছে এদেশের রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বানানোর জন্য।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি একইভাবে এদেশের জন্য এখনো কারাবন্দি আছেন, এখনো হাসপাতালে অসুস্থ বন্দি অবস্থায়। তাদের ছেলে যিনি আমাদের নেতা যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এদের (সরকার) সমস্ত চক্রান্তে মিথ্যা মামলায় বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে, কিভাবে তাকে ২১ আগস্টের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বার বার বলেছি, ওই মামলার তিন তিনটা চার্জসিটে তার নাম কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো সাক্ষী প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সেখানে চতুর্থ যে চার্জশিট তৈরি করা হলো আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে সেখানে তার নাম যুক্ত করা হলো। মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছে বিএনপি সরকার। তাকে ১৪৫দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাকে দিয়ে ফলস এফিডিভেড করিয়ে তারেক রহমানের নাম যুক্ত করা হয়। পরে মুফতি হান্নান তার প্রফিডিভেড প্রত্যাহার করেছিলেন সেই এফিডেভিড আদালত হাজির করা হয়নি। আদালতে যাওয়ার আগেই তাকে আরেক মামলায় ফাঁসির হুকুম হয়েছিলো সেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, কেনো? এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ একটা মামলা যেখানে ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটেছে, একটা নিকৃষ্টতম, কলঙ্কজনক ঘটনা, এতোগুলো মানুষের প্রাণ গেছে সেই মামলায় প্রধান আসামীকে (মুফতি হান্নান) আদালতে হাজির করার আগেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হলো? খুব পরিস্কার। যেটা আইন বিরোধী। মুফতি হান্নান যে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন সেটা আদালতে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনা পর ওই সময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এসেছিলো তদন্ত করার জন্য, তাদের তরফ থেকে পরবর্তিকালে প্রকাশ করা। আজকের প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তিনি এই মামলার সাক্ষী, তিনি সাক্ষীও দিতে যাননি। আমরা এই বিষয়গুলো বার বার তুলতে চাই না, অবতারণা করতে চাই না। আমরা অবশ্যই এই ধরনের ঘটনাকে শুধু নিন্দা নয়, ঘৃণা প্রকাশ করি। আমরা কখনো কোনো সন্ত্রাসকে পছন্দ করি না, এটা কলঙ্কজনক ঘটনা, ন্যাক্কারজনক ঘটনা, এটা যেকোনো জাতির জন্য কলঙ্কময়। কিন্তু তারা বার বার এই মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এটা করে কোনো লাভ হবে না।

এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন নয় উল্লেখ করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো এখানে যারা আছেন তারা, বাইরে যারা আছেন তারা এবং যুগপৎ আন্দোলন যারা করছি তার বাইরেও সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আজকে এক হয়েছে। এখন আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। এই প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে।

নবীন-যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কাজী জাফর চলে গেছেন, মোস্তফা জামাল হায়দার অসুস্থ। এখানে যারা বয়স্ক মানুষ আছি আমিসহ আমাদের সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে। আমরা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াই করছি, সেই লড়াইটা কিন্তু ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থে নয়, সেই লড়াইটা হচ্ছে মানুষের জন্য, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই। কাজী জাফর আহমদ, মোস্তফা জামাল হায়দার তারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, স্বাধীন ভূখন্ড নিয়ে এসেছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন আমাদের জহিরউদ্দিন স্বপনেরা, তাদের জেনারেলশনরা। এখন আজকের তরুনদের দায়িত্ব হচ্ছে যে, এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে গণতন্ত্র ফিরে নিয়ে আসার মহান দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। এটা আমার বিশেষ আবেদন। প্রত্যেকটা সময়-যুগে একেক সময় আসে যখন এই কথাটা বলতে হয়, কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাকিছে ভবিষ্যত। তিনি কাজী জাফরের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাহিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান, মুজিবুর রহমান, মাওলানা রুহুল আমিন, সেলিম মাস্টার, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, কাজী জাফর আহমেদের বড় মেয়ে কাজী জয়া প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার