পরিবেশবান্ধব এ গাছ রক্ষা করা জরুরি

প্রকৃতির শোভা বহুবিধ ভেষজ ঔষুধি গুণসম্পন্ন চালতা

Daily Inqilab এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর ) থেকে

২৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম

শেরপুর জেলা উত্তর গারো পাহাড়ের প্রকৃতির শোভা, বহুবিধ ভেষজ ওষুধি গুণসম্পন্ন ফল চালতা হারিয়েই যাচ্ছে! চালতা গ্রামবাংলার অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফল। নানাবিধ ভেষজ ওষুধি গুণে ভরপুর চালতা ফলের দেখা মেলে বর্ষাকালে। তার ফুলও খুব বাহারী, দৃষ্টিনন্দন। প্রস্ফুটিত ফুল গাছের শাখায় ফুটে প্রকৃতির শুদ্ধতার কথা জানান দেয়। বিস্মিত করে সৌন্দর্য পিপাসুদের। ফুলে মৌমাছিসহ কীট পরাগায়নে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। নয়নাভিরাম চালতা ফুল সৌন্দর্যবর্ধক। তবে ফুল নয় কাজে লাগে চালতা ফল। চালতার আচার মেয়েদের অত্যন্ত লোভনীয় মুখরোচক খাবার। কিন্তু এ গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় গারো পাহাড় ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। বহুবিধ ভেষজ ওষুধি গুণে ভরপুর এ ফল পাকে বর্ষার পর। ফল থাকে শীতকাল পর্যন্ত। আষাঢ়-শ্রাবণে ফোটে ফুল। সুগন্ধি ফুলে থাকে ৫টি পাপড়ি। পাপড়িগুলো থেকেই ফল হয়। ফুল সাদা রংয়ের। ফোটার পর ফুলে মৌমাছি বসে। মৌমাছি মধু আহরণে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে। এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে আস্তে আস্তে ফলে পরিণত হয়। অবশ্য ঢাকায় চালতা গাছের দেখা মিলবে কমই। তবে কিছু বাগানে দেখা মেলে। বরিশাল অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, মাদারীপুর, নরসিংদী ও রংপুর-দিনাজপুরে এ গাছ রয়েছে। অনেকের বাগানে দেখা মেলে এ গাছ। বছরে একবার গাছে ফল ধরে। চালতা ফলের ওজন হয় ২০০-৫০০ গ্রাম। এক সময় গ্রামীণ জনপদের রাস্তার পাশে, পুকুরপাড় ও বাড়ির আঙ্গিনায় এবং শেরপুর গারো পাহাড়ের বনে-বাদাড়ে চালতা গাছ দেখা মিলতো। বর্তমানে সে দৃশ্য চোখে পড়ে খুব কমই। চালতা ফুল রাতে ফোটে। ফুল ফোটার ১ দিনেই ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে। ফলে এক দিনেই পরিপূর্ণ ফুল ফুটে ঝরে যায়। গাছটি ওষুধি গুণসম্পন্ন। পরিবেশবান্ধব, বিপন্ন এ গাছকে রক্ষা করা জরুরি। এ গাছ ভারতবর্ষীয়। চালতা ফলে চাটনি ও আচার তৈরি হয়। গাছ দেখতেও চমৎকার তাই শোভাবর্ধক তরু হিসাবে কোনো কোনো উদ্যানে লাগানো হয়। চালতার জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। গাছ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় জন্মে। গাছটি মাঝারি ও চিরহরিৎ জাতীয় উদ্ভিদ। উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়। গায়ে লাল রঙের চকচকে বাকলা থাকে। পাতার কিনারা খাঁজকাটা। শিরা উঁচু সমান্তরাল। ফুল সাদা। দেখতে খুব সুন্দর সুগন্ধযুক্ত। ফুলের ব্যাস ১৫-১৮ সেন্টিমিটার। ফুল ৫টি মোটা পাঁপড়িবেষ্টিত। কেন্দ্রে অনেক হলুদ পুংকেশর থাকে। বৃতিগুলো পাঁপড়ি আঁকড়ে রাখে। মে-জুনে ফুল ফোটে। ফল টক। তাই আচার, চাটনি, টক ডালে অনেকেরই প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে, লবন-মারিচে মেখে ভর্তা অনেকের কাছেই বেশ লোভনীয়। গ্রাম বাংলার ঝোপ-জঙ্গল এবং গারো পাহাড়ে এ গাছ জন্মে। ইতোপূর্বে অনেক বিত্তশালি লোকের বাড়ির উঠোনে দেখা মিলতো এ গাছ। ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির অন্তড়ালে থাকে। ফল বাঁকা নলের মত। ভেতরে আঠার মধ্যে বীজ থাকে। চালতা মূলত.অপ্রকৃত ফল। মাংসল বৃতিই খাওয়ার যোগ্য। বর্ষার পর ফল পাকে। থাকে শীতকাল পর্যন্ত। পাকা ফলের বীজ থেকে চারা হয়। ফল পাকলে না পাড়লে বীজ মাটিতে ঝরে পড়ে। ঝরে পড়া ফল থেকেই গজায় চারা। এজন্য চালতা গাছের নিচেই অনেক চারা মেলে। বীজে করা চারা গাছে ফল ধরতে ৬-৭ বছর লাগে। গাছের আয়ুস্কাল ২৫-৩০ বছর। কলম বা কাটিং করেও চারা তৈরি করা যায়। কলম কাটিং করে তৈরি চারায় তাড়াতাড়ি ফল ধরে। চালতা ঠাÐা জ্বরে ভীষণ উপকারী। রস করে খেতে হয়। এছাড়া বাত ব্যথায় কচি চালতার রস পানিসহ খেলে দ্রæত উপকার হয়। রক্ত আমাশয়েও কচি পাতার রস বেশ উপকারী। সর্দি কফ কাশিতে গাছের ছালের গুঁড়ায় উপকার হয়। মুখের ঘা, চামড়া উঠে গেলে খেলে দ্রæত সেরে ওঠে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে স্বাস্থ্যহানিতেও যথেষ্ট উপকারে আসে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লিটনকে বাদ দেওয়ার যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচক

লিটনকে বাদ দেওয়ার যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচক

টেকনাফ জিবির অভিযানে ২লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

টেকনাফ জিবির অভিযানে ২লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

মোংলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থী নিহত

মোংলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থী নিহত

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি ও পিডিকে অপসারণ সহ ৯ দফা দাবিতে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মানববন্ধন

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি ও পিডিকে অপসারণ সহ ৯ দফা দাবিতে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মানববন্ধন

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা সহজ করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা সহজ করল বাংলাদেশ

ওজন কমাও মাসুদ, না হলে মানুষ মাংস কেটে নেবে!

ওজন কমাও মাসুদ, না হলে মানুষ মাংস কেটে নেবে!

৭৫-এর বীরদের নিয়ে যে বার্তা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন

৭৫-এর বীরদের নিয়ে যে বার্তা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন

সম্মেলন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি সভাপতি নিহত

সম্মেলন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি সভাপতি নিহত

কিশোরগঞ্জে অটোরিকশা চালকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

কিশোরগঞ্জে অটোরিকশা চালকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

জামায়াতের ৫-১৫% বেশি ভোট নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, যা বললেন ফাহাম

জামায়াতের ৫-১৫% বেশি ভোট নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, যা বললেন ফাহাম

বিকাশের দোকানে হামলা করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

বিকাশের দোকানে হামলা করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

ঝালকাঠিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন

ঝালকাঠিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন

মাগুরায় সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণ জনপ্রিয় হচ্ছে

মাগুরায় সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণ জনপ্রিয় হচ্ছে

নগরকান্দায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে দুইজন নিহত

নগরকান্দায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে দুইজন নিহত

হাত বদলে দাম বাড়ে সবজিতে, নিরুপায় ক্রেতা

হাত বদলে দাম বাড়ে সবজিতে, নিরুপায় ক্রেতা

সিরিয়ার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির

সিরিয়ার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির

না ফেরার দেশে সংগীতশিল্পী স্যাম মুর

না ফেরার দেশে সংগীতশিল্পী স্যাম মুর

এবার বাংলাদেশেও এইচএমপিভি শনাক্ত

এবার বাংলাদেশেও এইচএমপিভি শনাক্ত

৫ আগস্ট থেকে মর্গে কাবিলের লাশ, পরনের কাপড় দেখে শনাক্ত করলেন স্ত্রী

৫ আগস্ট থেকে মর্গে কাবিলের লাশ, পরনের কাপড় দেখে শনাক্ত করলেন স্ত্রী

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি বেসিসের

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি বেসিসের