মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার এবং পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া
২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার নিয়ে গত ২৪ আগষ্ট একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হল-
অতি প্রান্তিক স্তরের মানুষ যেনো প্রচলিত ব্যাঙ্কিং সুবিধাগুলো পায় সেজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ, সামাজিক উদ্যোক্তা, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলোর ব্যবহারে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। ফলে বিদেশী দাতা, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বের অনেক দরিদ্র মানুষের কাছে তিনি একজন নায়ক। তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়নে নিজের কাজের জন্য- সবচেয়ে দরিদ্র্যদের ক্ষমতায়নে ২০০৬ সালে ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি যে মডেলটি এগিয়ে নিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়নে অনেক ভ‚মিকা রেখেছিল। তারপর সেটি বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
তবুও ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করে আসা (আগেও একবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কাছে ড. ইউনূস এক আপদ। আগামী জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা প্রচারণামূলক বক্তৃতাগুলোতে তাকে আক্রমণ করেন। তিনি উন্নয়নের নায়ককে গরীবের ‘রক্তচোষা’ বলে অভিহিত করেছেন, কথিত সুদের হারের জন্য তাকে অত্যন্ত খারাপ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য তাকে দায়ী করেন। বঙ্গোপসাগর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইউনূস হয়তো কোনোভাবে আমেরিকাকে সাহায্য করে নিজ দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, এমনও ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন।
ইউনূসের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অনেকদিন ধরেই এসব করছেন। ২০১১ সালে তিনি তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান থেকে অপসারণের জন্য চাপ দেন; পরে সরকার গ্রামীণ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০০৭ সালে সামরিক শাসনের ভয়াবহ সময়কালে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য রাজনীতিতে প্রবেশের কথা ভেবেছিলেন, এটাই হতে পারে তার মূল অপরাধ। কিন্তু সেটা কখনোই খুব সিরিয়াস ছিলেন না জানিয়ে তিনি বেনিয়ানকে (ইকোনমিস্টের এশিয়া বিষয়ক কলামিস্ট) বলেন, ‘রাজনীতি আমার কর্ম নয়।’ বর্তমানে ৮৩ বছর বয়সী ইউনূস স্পষ্টতই শেখ হাসিনার জন্য সরাসরি কোনো হুমকি নন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর শুরু করা নিপীড়ন দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে সেটা আওয়ামী লীগ এবং দেশটির অনুগত পুলিশ ও বিচার বিভাগকে বাধা দিচ্ছে না।
ইউনূসকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের আনা হয়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, তাকে গ্রেফতার করা হবে। কারো কারো মতে এই আক্রমণ দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনকে দখল করার আগের ধাপ, যেটি চালু করতেও তিনি সহায়তা করেছিলেন। কেউ শেখ হাসিনার বিরোধিতা করলে কিংবা তার থেকে বেশি উজ্জ্বল হলে সেটা তার কাছে অসহনীয় বলে মনে হচ্ছে। ৭৫ বছর বয়সী এই নেত্রীর বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি এমনভাবে কথা বলেন যেন তিনি চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে।
জুলাই মাসে বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি প্রচারণা সমাবেশে রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যাকে বিরোধীদের উপর ‘পরিকল্পিত’ হামলা বলে বর্ণনা করেছে। ৮০০ জনেরও বেশি বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দলটির দাবি, ২০০৯ সাল থেকে তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ৪০ লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচকরা আড়ালে বলেন যে, পারলে তিনি ‘টার্মিনেটর’কে অনুকরণ করবেন এবং তার জন্য যারা ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হবে তাদের হত্যার জন্য টাইম ট্রাভেল বা অতীতে ভ্রমণ করবেন।
বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনার অধিকারবোধের মূলে রয়েছে মর্মান্তিক এক ক্ষতি: তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রায় সকল নিকটাত্মীয়কে ১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি তার নিহত পিতার এবং এরপর নিজের জন্য যে ‘পারসোনালিটি কাল্ট’ গড়ে তুলেছেন - সেটা ক্ষতিকারক। যারা এই কাল্টে যোগ দেয়, তারা ক্রোনিজম ও দুর্নীতিতে স্থ‚ল হয়ে পড়া সরকারকে সহায়তা করছে। সরকারকে সমর্থন করার বিনিময়ে, পছন্দের টাইকুনরা ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স এবং অন্যান্য সুবিধা পেয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশের কয়েক বছরের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সকে বিপন্ন বলে মনে হচ্ছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি মাত্র খাত- পোশাক (শিল্প) এবং সেই সাথে প্রবাসী মেহনতি বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
বিষয়টি বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হতে পারে। শেখ হাসিনার জন্যও যা সম্প‚র্ণভাবে অপ্রয়োজনীয়। যদি তিনি একটি অবাধ নির্বাচন করতে দেন, তাহলে সম্ভবত তিনি জিততেন; বিরোধী দল খুবই দুর্বল। তবে তিনি এই পরীক্ষায় যাবেন না, কারণ তিনি তার কর্তৃত্ববাদকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চান। তিনি তার দমন-পীড়নের বিরোধিতা করায় পশ্চিমা দেশগুলোর বিষোদগার করলেও, সত্যি কথা বলতে কি, তার বিরুদ্ধে তাদের সমালোচনা স্তিমিত হয়েছে। কেবল, আমেরিকা (যারা শেখ হাসিনাকে প্ররোচিত করবে বলে চীনের প্রচেষ্টাকে ভয় পায়) সম্প্রতি গণতন্ত্রকেক্ষুণ্নকারী বাংলাদেশিদের ভিসা সীমিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পশ্চিমের কাছে সাধু ব্যক্তিত্ব এবং (শেখ হাসিনার কাছে বিরক্তিকর) সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত বাংলাদেশি ইউনূসের উপর আক্রমণ তার (শেখ হাসিনার) দায়মুক্তির প্রতীক। অশীতিপর এই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে আমেরিকা ও তার মিত্ররা কি শেষ পর্যন্ত তাতে বাধা দেবে? ইউনূসের জন্য সেটাই সবচেয়ে ভালো আশা হতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কসাই থেকে নদীখেকো জাফর
পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল
সামনের বর্ষায় ঘাসে ঢাকা হবে রাজধানীর অনাবৃত সড়ক বিভাজন: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন
পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি : দুদকের মামলায় হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ আসামি
কোকোর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান বড় ভূমিকা ছিল: কাজী রিপন
তারেক রহমান একজন মানবিক মানুষ: কাইয়ুম চৌধুরী
রাবির সাত হলে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস, তদন্ত কমিটি গঠন
ডিসেম্বরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও সউদী আরব থেকে
যশোরে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন
অপরাধী যদি আমার ভাই হয়, তাকেও ছাড় দিবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার
এবার হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে নারী আইনজীবীর মামলা
ব্যবসায়ীকে কোপানোয় শাস্তির হুঁশিয়ারি উপদেষ্টা আসিফের
৩৮ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া
মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটর সাইকেল চালক নিহত
কুষ্টিয়ায় র্যাবের অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
কুষ্টিয়ার আলফা মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড’ নাম দিয়ে চাঁদাবাজি
জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা : বহিস্কার হলেন শাবির ২৯ শিক্ষার্থী