‘দেশকে সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা বানানো হচ্ছে’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কেউ আর বিশ্বাস করে না। দুই দলের অনড় অবস্থান দেশকে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংলাপ-সমঝোতার পথ একেবারে রুদ্ধ হয়নি। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দুই পক্ষের দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসা প্রয়োজন। গতকাল রোববার ‘সমঝোতা নাকি সহিংসতা : কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনলাইনে এই সভার আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বক্তারা আরো বলেন, সব পক্ষ ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য বিভোর। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলেই চিন্তিত। দেশ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির না, সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা হয়ে গেছে।
সূচনা বক্তব্যে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ এর মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সবার চাওয়া এই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অনুকূল না। তিনি আরো বলেন, সুজর যে প্রস্তাবনা দিয়েছে এই বিষয়গুলো প্রাথমিক বিষয় হিসেবে ধরে নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও স্বাক্ষর করা সম্ভব হলে রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হবে। তবে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হবে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার।
সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন, তারা ভাবছেন রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বেশি বেশি টাকাপয়সা কামানো যায়। উত্তরোত্তর ধনী হওয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের মিষ্টি কথায় সরানো যাবে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট আছে, যেটার সমাধান দেখছি না। তবে বিশ্বাস করি, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সময় কম থাকায় তাড়াহুড়ো আছে। সব না হলেও কিছুটা সমাধান করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানে কী করতে হবে, সেগুলো নিয়ে অতীতেও আলোচনা হয়েছে। দুটি বড় রাজনৈতিক দলের ভোট প্রায় সমান সমান। সমাজের একটা বড় অংশকে বাদ দিয়ে দেশ এগোতে পারে না। সমঝোতার বিষয়টি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অলীক চিন্তাভাবনা মন্তব্য করে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সব পক্ষ ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য বিভোর। তারা বিকল্প চিন্তা করতে পারে না। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলেই চিন্তিত। দেশ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির না, সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিলে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ভোটার তালিকা করতে হবে। এটি একটি সিরিয়াস ধারা। পুরোপুরি সংবিধান পরিপন্থী এটি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে বড় রকমের গন্ডগোল হবে। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯১(ক) ধারায় সংশোধনী এনে নির্বাচনের ওপর কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করা হয়েছে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক সেকান্দার খান বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সাধারণ মানুষকে নিয়ে তারা চিন্তা করছে না। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সচেষ্ট হলে নির্বাচন নিয়ে তাদের ভয় থাকত না।
বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন রয়েছে বলে জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে আলোচনা সম্ভব না। সরকার একগুঁয়েমি করলে আন্দোলন করেই অধিকার আদায় করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, যাঁরা ৩১ দফা দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে এই দফা তারা বাস্তবায়ন করবেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুবিধা নিয়ে ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে।
সাংবাদিক সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ১৯৯৬ সালে যে পরিস্থিতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল, গত ২৭ বছরে যে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের লোকজন আরও বেশি দলীয়করণ হয়েছে। আগামী ৩ মাসে সমাধান কঠিন। তবে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একমত হলে অন্তবর্তীকালীন কোনো ব্যবস্থা হতে পারে।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজপথে দাবি আদায় করতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছিল। কেমন নির্বাচন হয়েছে সবাই দেখেছে। তাই আলোচনার ওপর বিশ্বাসও থাকতে হবে।আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সব সমস্যার সমাধান এক বসাতে হয়ে যাবে না। এককভাবে কোনো দলের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবার আগে সমঝোতা চাই, এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতে হবে।
সভায় সুজনের পক্ষ থেকে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ১৭ দফার জাতীয় সনদের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এটি পড়ে শোনান।
জাতীয় সনদে সম্ভাব্য ঐকমত্যের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণের মতো বিষয় রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিরলে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল উদ্ধার
বিএসএফের হাতে আটক যুবক ফেরত আনলো বিজিবি
নিজেকে আ.লীগের চক্রান্তের শিকার দাবি এনবিআরের সেই মতিউরের
হিলিতে দিনব্যাপী ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ
মহিলাদের জন্য সংসদে কোন সংরক্ষিত আসন চাই না : মুফতি ফয়জুল করীম
কারামুক্ত ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী তারুণ্য উৎসব উদযাপন
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
আটঘরিয়ায় মসজিদের মাইক চুরি
রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশন গঠন
শায়খ ফুলতলী আমাদের বেহেশতের পথ দেখিয়েছেন: দামেস্কের শায়খ সাইয়্যিদ ফাদি জু’বা
সৈয়দপুরে নববধূ মুক্তার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
ইভটিজিংয়ের জেরে ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ খ্যাত কিশোরীর আত্মহত্যা
গাজীপুরে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ: ৩ এসআই ক্লোজ, ওসি তদন্ত বদলি