বাংলাদেশে একদলীয় দুঃশাসনের কালো ছায়া বিরাজমান

গণতন্ত্র দিবস পালিত

বাংলাদেশে একদলীয় দুঃশাসনের কালো ছায়া বিরাজমান

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫২ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

জাতিসংঘ ঘোষিত গণতন্ত্র দিবস যে দিন সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে সেদিনই পিটিআই-এর বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র কেন লাইফ সাপোর্টে। গণতন্ত্র দিবসের আগের দিন জাতীয় সংসদে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে এক ভয়ংকর কালাকানুন পাস হয়েছে। গণতন্ত্র দিবসের দু’দিন আগেও পুলিশ বিরোধী মতের আইনজীবীদের সমাবেশে পুলিশ বেপরোয়া লাঠি চালিয়েছে। এ অবস্থায় গণতন্ত্র দিবসেও বলতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের মানুষ এক স্বৈরশাসকের নিপিড়ন নির্যাতনে শিকার হচ্ছে। একদলীয় দুঃশাসনের কালো ছায়া ঘিরে রেখেছে। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গতকাল গণতন্ত্র দিবস সম্পর্কে এ কথাগুলো বলেন।
১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। জাতিসংঘ ২০০৭ সাল থেকে সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রচলিত একটি বিশেষ দিন পালনের ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে।
গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার আছে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে, গণতন্ত্রের অর্থ জনগণের শাসন।
‘পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষমতায়ন’ এই প্রতিপাদ্যে এবার পালিত হয় গণতন্ত্র দিবস। জাতিসংঘ বলছে, তরুণদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তারা তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পারে। তবে বাংলাদেশের তরুণরা এখন গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। গত দুটি নির্বাচনে তরুণরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অনেকে তাদের মত প্রকাশও করতে পারছে না। নানান ভাবে অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা সুখকর নয়। যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত সর্বশেষ গণতন্ত্র সূচকে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৩তম।
দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বিশ্বে সাধারণ নাগরিকদের অধিকার চর্চার সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র, আইন, শাসন ব্যবস্থা ও মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি গড়ে ওঠে সমৃদ্ধ, সহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা। তেমন সমাজই স্বাধীনতার কা-ারি। এমন সমাজ টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং মানুষের মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় সচেষ্ট।
দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সারা বিশ্বে বহু মত, পথের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহকে ভূলুণ্ঠিত করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এখনও একদলীয় দুঃশাসনের কালো ছায়া বিরাজমান। বর্তমানে বাংলাদেশে নাগরিক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সাম্য হরণ করা হয়েছে। ভিন্নমতের কারণে অনেকেই গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এখনও তিনি পুরোপুরি মুক্ত নন। তিনি বলেন, বর্তমানে এক ভয়াবহ দুর্দিন অতিক্রম করছে পুরো জাতি। বর্তমান দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্রের মুক্তির মাধ্যমে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।

বিভাগ : জাতীয়