নৌ-বন্দরের কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায়
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে, যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়, নারীর মন মর ছুইরা রয় রে’। কুড়িগ্রামের চিলমারি বন্দরকে নিয়ে এই গান গেয়েছিলেন মরমি শিল্পী আব্বাস উদ্দিন।
নৌপথে ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের একমাত্র নৌ রুট হচ্ছে এই চিলমারী নদীবন্দর। এ বন্দরের উন্নয়ন করা হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। কুড়িগ্রামের চিলমারী বহ্মপুত্র নদের রমনা ঘাট থেকে চালু হচ্ছে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফেরি সার্ভিস। ইতোমধ্যে ঘাটে এসেছে ফেরি কুঞ্জলতা। এদিকে চিলমারী বন্দর উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিএ থেকে এতথ্য জানানো হয়েছে। আজ বুধবার চিলমারী বন্দরের রমনা ঘাটে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ও বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এস এম ফেরদৌস আলম। গত শুক্রবার ঘাটে এসেছে ফেরি কুঞ্জলতা। হাজার হাজার উৎসুক জনতা ফেরিটি দেখার জন্য রমনা ঘাটে ভীড় জমাচ্ছেন। চিলমারী- রৌমারী নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চলাচলের মধ্যদিয়ে নদী পথে যোগ হলো যোগাযোগের নতুন মাত্রা। চিলমারীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী পথে যোগাযোগের একমাত্র বাহন হিসেবে স্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা ব্যবহার হয়ে আসত। ফেরি সার্ভিস চালুর ফলে যাত্রি ভাড়ার ব্যয় কম সহ সময় অপচয় কম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নৌ-পথে মালামাল পরিবহনের জন্য ১৯৭২ সালে একটি নৌ-প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা বন্দর থেকে গৌহাটি ও আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত চালু ছিল। কালক্রমে ব্রহ্মপূত্র নদের গভীরতা কমে যাওয়া, অব্যবস্থাপনা এবং নৌপথের উন্নয়ন না হওয়ায ঐতিহ্যবাহি চিলমারী নৌ-বন্দরটি অচল হয়ে পরে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চিলমারী সফরে এসে চিলমারীকে নৌ-বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালিন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে চিলমারীর রমনা ঘাট এলাকায় পল্টুন স্থাপন করে অভ্যন্তরিণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লুউটিআই) এর নদী বন্দর উদ্বোধন করা হয়।
এছাড়াও বন্দর উন্নয়ন কাজে প্রকল্প গ্রহন করা হয়। কিন্তু জায়গা নিয়ে জটিলতায় কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ বন্দরের শ্যালোঘাটসহ নদ-নদীর ঘাট পরিচালনায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে অবগত না করেই বন্দর ঘাটটি ইজারা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের অন্তর্দন্ত গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ফলে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমদু চৌধুরী গত বছরের জুন মাসে চিলমারী নৌবন্দর পরির্দশনকালে সকল সমস্যা ও দ্বন্দ্ব সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু আশ্বাসের ছয় মাসের পরও কাটেনি জটিলতা। শুরু হয়নি বন্দর উন্নয়নের কার্যক্রম। ফলে এলাকার মানুষ দ্রুত বন্দর উন্নয়নের কাজ বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।
নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিলমারী এক সময় একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। এ স্থানটি অনেক আগে থেকেই ‘চিলমারী বন্দর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বন্দর দিয়ে হাজার হাজার মণ পাট, ধান, চাল প্রভৃতি পণ্য নিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা হতে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত ছিল। বন্দরটিকে ঘিরে চিলমারীতে গড়ে উঠেছিল পাট,সরিষা, ধান, গম, বাদাম, তিসির ও ভুট্টার গুদাম ঘর। দেশের নামিদামি পাট কোম্পানিগুলো চিলমারীতে এসে অফিস খুলে পাট ক্রয় করতেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বিভিন্ন ধরনের মালামাল ক্রয় করার জন্য দিনের পর দিন অবস্থান করতেন। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিএ সেখানে পাইলট বিট ও এসএসবি স্টেশন স্থাপন করে। তবে কালের বিবর্তনে এবং নদী ভাঙ্গনসহ নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে চিলমারী বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্দর কেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবির হয়ে পড়ে। চিলমারী নদীবন্দরটি পায়রা সমুদ্র বন্দর হতে নৌপথে ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে আ লিক যোগাযোগের একমাত্র নৌ রুট। চিলমারী নদী বন্দরের উন্নয়ন করা সম্ভব হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। দারিদ্র-পীড়িত কুড়িগ্রামের মানুষ চিলমারী নৌ-বন্দরের কার্যক্রম চালুর অপেক্ষায় এখন প্রহর গুণছেন।
কাজীর আলী, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজলার এনামুল, কাদের, রায়হান, সহ অনেকেই ইনকিলাবকে বলেন, কয়েক বছর পেরিয়ে গেল কিন্তু এখনো বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়নি। আমাদের আশা কাজ শুরু হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষকদের উপকার হবে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু না হওয়ায় আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। বন্দরের মুখ আদৌ দেখব কি?
বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো. ছাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরের উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৩শত কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দ্রুত নদী ড্রেজিং এর কাজ শুরু হবে সাথে নদী বন্দরের কার্যক্রমও শুরু হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কলাগাছ আন্দোলনের মতো এবারও ‘ধানের শীষ’কে উঠিয়ে আনতে হবে ঃ সাবেক এমপি ইন্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা
‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’
অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম
মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ
গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম
মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী
নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?
যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস
মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক
প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম
অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন
ময়মনসিংহে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের লটারি অনুষ্ঠিত