জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতির ভাইয়ের ‘টর্চার সেল’
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৯ পিএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতির নেতার ছোটো ভাই ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মারধরের পর ভুক্তভোগীর শরীরে মদ ঢেলে মাদকাসক্ত হিসেবে প্রমাণ করারও চেষ্টা করেছেন অভিযুক্তরা। মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে ওই ছাত্রলীগ নেতার পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকিও প্রদান করেন তারা। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা। ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া ইমন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুব, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (৪২তম ব্যাচ) আরাফাত, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৪৫তম ব্যাচ) তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি। এদের মধ্যে, আরমান খান যুব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের আপন ছোটভাই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের ‘র্যাগের রাজা’। এছাড়া কয়েকবছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও তিনি হলের মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছেন।
জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনীর বউবাজার এলাকার ভাড়া বাসার মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় ইমনের। ওই ঘটনার জেরে ইমনকে ফোন দিয়ে আরমান খান যুবর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন বাড়ির মালিকের পূর্বপরিচিত আরাফাত। তার পরিপ্রেক্ষিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের সামনে যেতে বলেন যুব। রাত ১২টার দিকে ইমন সেখানে গেলে, যুব তাকে মোটরসাইকেল হলের ভিতরে রেখে ১২৬ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। এরপর কক্ষে ঢুকতেই ঘুষি মেরে ইমনের নাক ফাটিয়ে দেন যুব। তখন যাতে চিৎকার করতে না পারে, তাই ইমনের মুখ বেঁধে দেন আরাফাত। পরে যুব ও আরাফাতসহ সেখানে উপস্থিত অন্য অভিযুক্তরা ইমনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় ইমন তাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেও কোন প্রতিকার পাননি। তাকে একদফা মারধরের পর ইয়াবা সেবন করেন যুব। পরে আবারও ইমনের উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন তারা। এছাড়া ইমনের শরীরে মদ ঢেলে উল্লাস করতে থাকেন যুব ও তার সহযোগীরা।
এরপর রাত তিনটার দিকে ইমনকে হলের দ্বিতীয় তলার ২২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে তাকে পরিষ্কার-পরিছন্ন হয়ে আসতে বলেন তুষণ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন বলে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেন। এমনকি সেটা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেও রাখেন তুষণ। এরপর তাকে ফের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে ইমনের পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন অভিযুক্তরা। কিছুক্ষণ পর আকতারুজ্জামান সোহেল ওই কক্ষে গিয়ে ইমনকে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও ইমনকে আশ্বাস দেন।
এদিকে হলে যাওয়ার পূর্বেই ভয় পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে আবহিত করেছিলেন ইমন। তার প্রেক্ষিতে মারধরের ঘটনার বিষয়ে জানাতে ১৪ আগস্ট সকালে প্রক্টরের বাসায় যান তিনি। তবে ইমন সেখানে গিয়ে দেখেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল আগে থেকেই প্রক্টরের বাসায় অবস্থান করছেন। এ সময় ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে (গেস্টরুম) গিয়ে বসতে বলেন তিনি। তখন ইমন প্রক্টরের উপর ভরসা না পেয়ে তার বাসা থেকে চলে যান। এরপর তিনি মারধরের বিষয়টি আল নাহিয়ান খান জয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানান।
অন্যদিকে আরমান খান যুবর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সিন্ডিকেট ও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ‘টর্চার সেল’ পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রত্ব শেষ হলেও হলের ওই কক্ষে তিনি অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। এমনকি সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত মাদক সেবন করেন যুব। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী ও বহিরাগতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে টর্চার করেন তিনি। এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর বহিরাগত এক যুবককে ১২৬ নম্বর কক্ষে এনে মারধর করেন যুব। তার মারধরের শিকার হয়ে ওই যুবক ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করতে থাকেন।
এ বিষয়ে জাহিদ হাসান ইমন বলেন, ‘আমাকে মারধর পরবর্তী নানা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উপর আমার ভরসা উঠে যায়। পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেইনি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতাদের জানিয়েছি। তবুও বিচার না পেয়ে কয়েকবার আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি। কারণ ওই রাতের ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরমান খান যুব ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।’
মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, ‘হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি আমি জানি। আমি এ বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা আমি জানিনা।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে ফোন করলে, তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি : দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ
আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ
আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে
পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক
ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব
সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির
মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল
নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার
টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান
অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন
সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স
বিশ্ব ইজতেমার ৭০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন : ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার
আখাউড়া কালন্দি খালে বইবে জলধারা
টঙ্গীতে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেফতার ১৩
৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১ হাজার ৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল
যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
আল-শারা ও শেখ মোহাম্মদের ঐতিহাসিক টেলি-আলোচনা