পদ্মা মেঘনায় কমছে ইলিশ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
# বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার দূষণ নেমে মেঘনার পানির গুণাগুণে অসুবিধা হচ্ছে, এতে ইলিশ বিচরণ কম করছে-গবেষক ড. আনিসুর রহমান
# ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাটে গত বছর এই মৌসুমে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ মণ ইলিশ সরবরাহ হতো, এ বছর ৫০-৬০ মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে
নদীর পানি দূষণ ও নাব্য সঙ্কটের ফলে পদ্মা মেঘনায় কমছে ইলিশের উৎপাদন। গত কয়েক বছর ধরে ভরা মৌসুমেও মিলছে প্রত্যাশিত পরিমাণ ইলিশ। মৎস্য বিভাগ থেকে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাও পূরণ হচ্ছে না। পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণক্ষেত্রে দূষণ বাড়ছে। দিনকে দিন পানির গুণগত মানের অবনতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে ইলিশের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণ। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা বলছেন, এর ফলে ইলিশ উৎপাদনের ওপর একসময় আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দূষণের ফলে ইতিমধ্যেই নদীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাটে গত বছর এই মৌসুমে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ মণ ইলিশ সরবরাহ হতো। কিন্তু এ বছর ৫০-৬০ মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। এ অবস্থায় মাছঘাটে ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়।
সরকারের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর ইলিশের যেসব বিচরণক্ষেত্র আছে, সেসব স্থানে পানির মান দীর্ঘ সময় ধরে দেখে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা প্রতিবছর পানিতে দ্রবীভ‚ত অক্সিজেন (ডিও-ডিসলভ অক্সিজেন), পিএইচ, পানি ও বায়ুর তাপ, হার্ডনেস (ক্ষারত্ব), অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ইত্যাদি দেখেন।
পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরা পড়ে অপেক্ষাকৃত বেশি। সাধারণত মেঘনা নদীর মুন্সিগঞ্জের ষাটনল, চাঁদপুরের আনন্দবাজার সফর মালি, মতলবের লঞ্চঘাট, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ও মেঘনার মিলনস্থলের এলাকার পানির মান দেখা হয়। আর পদ্মার শরীয়তপুরের তারাবুনিয়া, ভোমকারা, কাছিকাটা, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া, পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার মান দেখা হয়।
পানির মান বিচারে অন্যতম নিয়ামক হলো পানিতে দ্রবীভ‚ত অক্সিজেন বা ডিও। যদি ডিওর পরিমাণ প্রতি লিটারে পাঁচ মিলিগ্রামের কম হয়, তবে তা জলজ পরিবেশের জন্য কম উপযোগী বলে বিবেচিত হয়। দেখা গেছে, পদ্মায় গত পাঁচ বছরে ডিওর মান কমেছে। ২০১৮ সালে পানিতে এ নদীতে ডিওর গড় মান ছিল ৮ দশমিক ৭০। এর পর থেকে কমছে প্রায় প্রতিবছর। ২০২২ সালে ডিওর মান ছিল ৫ দশমিক ৪১। মেঘনায় ২০১৮ সালে ডিওর গড় মান ছিল ৮ দশমিক ৪০। এটি ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাসায়নিক যৌগ হলো অ্যামোনিয়া। যে পানির মান ভালো, সেখানে এর শূন্য উপস্থিতি থাকতে হবে। পদ্মায় ২০১৮ সাড়ে পানিতে অ্যামোনিয়ার গড় উপস্থিতি ছিল শূন্য দশমিক ৪ ভাগ। গত বছরও ছিল তা-ই। মেঘনায় পানিতে অ্যামোনিয়ার গড় উপস্থিতি শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। এটি গত বছর হয়েছে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ।
পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, জলজ প্রতিবেশে দূষণ যেকোনো মাছের জন্যই ক্ষতিকর। আর ইলিশতো অন্যান্য মাছের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। দূষণের ফলে প্রতিবেশের সামান্য পরিবর্তন ইলিশ সহ্য করতে পারে না। তাই দূষণের কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করে নেয়। তিনি বলেন, দূষণের ফলে নদী মাছশূন্য হয় এর জলন্ত উদাহরণ আমাদের বুড়িগঙ্গা। মেঘনার সঙ্গে যুক্ত আছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ। এসব নদীর পাড়ে অনেক কারখানা আছে। এ সব নদীর দূষণ মেঘনায় ছড়াচ্ছে। এর ফলে ইলিশের বিচরণ এ নদীতে আগের চেয়ে কমছে। এই দূষণ এখনি রোধ করতে না পারলে অদূরভবিষ্যতে মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যাবে না।
বর্ষায় ইলিশ মূলত দুটি কারণে সাগর ছেড়ে নদীর দিকে আসতে শুরু করে। একটি কারণ হলো খাবার সংগ্রহ, দ্বিতীয়টি প্রজনন। ইলিশের এই আগমনে নদীর পানির গুণাগুণ বড় নিয়ামক ভ‚মিকা রাখে। পানির মান ভালো হলে ইলিশের এই বিচরণ আনন্দের হয়, জেলের জালেও আটকা পড়ে বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, চাঁদপুর অঞ্চলে ইলিশ কম পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ ডুবোচর ও বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার দূষণ নেমে মেঘনার পানির গুণাগুণে অসুবিধা হচ্ছে। এতে ইলিশ বিচরণ কম করছে। ইলিশ মিঠাপানির মাছ। নদীতে দূষণ হওয়ায় ইলিশ অবাধে বিচরণ করতে পারছে না। তবে বৃষ্টিপাত ও পানির প্রবাহ বাড়লে ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়বে।
এ ছাড়া বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলেও নদীতে ইলিশের বিচরণ কমে গেছে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ২০১৮ থেকে ২০২২-এর মধ্যে পদ্মায় পানির তাপমাত্রা প্রায় ২৫ থেকে বেড়ে ৩০ ডিগ্রি হয়েছে। পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা মাছের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে বলে মন্তব্য করেন গবেষক ড. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশের বিচরণক্ষেত্রের ওপরের অংশে পানির দূষণ অপেক্ষাকৃত বেশি। কিন্তু নিচের দিকে কম। মেঘনার পানির দূষণ পদ্মার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি। মেঘনার সঙ্গে যুক্ত আছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ। এসব নদীর পাড়ে অনেক কারখানা আছে। সেই তুলনায় পদ্মাপাড়ে কারখানার সংখ্যা কম। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, পদ্মা ও মেঘনা দুই নদীর ওপরের দিকে দূষণ বেশি। আবার দুই নদীর ওপরের দিকে উৎপাদনও কমেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি
শামি-বুমরাহকে নিয়েই ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল
ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ
ইসলামী আইনজীবী পরিষদের ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন রবিবার
কমলনগরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৩
কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির ১২টি ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা
তারাকান্দায় বাসের ধাক্কায় আহত-৪
কুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল আইডিয়া কেস কম্পিটিশন ‘বিজব্যাটেল’
ভারতের ড্রেসিংরুম চ্যাপেল যুগের মতো বিধ্বস্ত: হরভজন
জুনে জাফর-২ ও পায়া উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান
আন্দোলনের ইমেজ বিশ্বকে জানাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত
দুই যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ৪ সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে- গ্রেপ্তার- ১
হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি শুরু
শুরু হয়েছে 'শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সিজন–২ এর রেজিষ্ট্রেশন; কি থাকবে এবারের পর্বে?
‘২০ বছরের অধিক সাজাখাটা বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন’
বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা
নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৬ জন গ্রেফতার, ড্রেজার জব্দ
ইরানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দুই বিচারক