ডালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেই
০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
‘গরীবের গোশত’ খ্যাত মানব দেহের আমিষের চাহিদা পুরনকারী ডাল ফসলের প্রায় ৪৫ ভাগই বরিশাল কৃষি অঞ্চল যোগান দিলেও আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির তেমন উদ্যোগ নেই। এমনকি দেশে উৎপাদিত খেসারি ও মুগ ডালের সিংহ ভাগেরই যোগানদার বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষিভূমি ও উপকূলীয় চরাঞ্চল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র মতে দেশে ২৫ লাখ টনের বেশি চাহিদার বিপরীতে রবি ও গ্রীষ্ম মৌসুম মিলিয়ে ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন ১০ লাখ টনেরও কম। তবে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে খুব শিগগিরই নিবিড় কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
গত বছর রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৬.৬০ লাখ হেক্টরে সাড়ে ৮ লাখ টন ডাল ফসল উৎপাদনের কথা জানিয়েছে ডিএই। যা আবাদে আগের রবি মৌসুমের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ও উৎপাদনে ৩৫ হাজার টন বেশি ছিল।
এরমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ২৯ হাজার টন বিভিন্ন ডাল ফসল উৎপাদন হয়েছিল। তবে আসন্ন রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে ডাল ফসল আবাদ কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৩ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টরে নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬২১ টনে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
কৃষি বিজ্ঞানী ও পুষ্টিবীদদের মতে, গোশতের পরেই ডালে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে তা আমাদের দেশের দরিদ্র ও সল্পোন্নত মানবগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণে একটি সস্তা উৎস হিসেবেও বিবেচিত হয়। ডাল থেকে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তা ডিম, দুধ বা গোশতের মাধ্যমে অর্জন করতে প্রায় তিনগুন অর্থ ব্যয় করতে হয়। এসব কারণে ডালকে ‘গরীবের গোশত’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
কিন্তু এখনো দেশে ডালের চাহিদার বড় অংশই আমদানি নির্ভর। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ভারসাম্যেও বিঘœ ঘটাচ্ছে।
অথচ এক্ষেত্রে যথাযথ মনযোগ প্রদান করলে ডালের উৎপাদন আরো অন্তত ৩০ ভাগ বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষিবিদগণ। যেহেতু ডালের জন্য কৃষি জমি বৃদ্ধির খুব একটা সুযোগ নেই, সে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিনা’ উদ্ভাবিত উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ডালের আবাদের কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন কৃষিবিদগণ। বারি’র বিজ্ঞানীগণ এ পর্যন্ত মসুর ডালের ৭টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন।
এছাড়া খেসারির ৩টি, মুগ ডালের ৬টি, ছোলার ৯টি, মাষকলাই ডালের ৩টি, ফেলন ডালের ১টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে বারি’র বিজ্ঞানীগণ। বিনা’র বিজ্ঞানীগণও মুগ সহ বিভিন্ন ডাল ফসলের উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল একাধিক জাত উদ্ভাবন করেছেন।
বারি ও বিনা উদ্ভাবিত এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের ডালের উৎপাদন হেক্টর প্রতি দেড় টন থেকে ২ টন পর্যন্ত হলেও মাঠ পর্যায়ে তার আবাদ সম্প্রসারণ ঘটছে না। এমনকি উচ্চ ফলনশীল এসব ডালে আমিষের পরিমাণও ২০-৩০ ভাগ। কিন্তু এখনো আমাদের দেশে ‘বারি’ ও ‘বিনা’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল এবং অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ডালের বীজ কৃষকের কাছে যেমনি পৌঁছছে না, তেমনি এসব ডাল-এর আবাদ প্রযুক্তিও মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছেনি।
বারি গবেষণার মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া উপযোগী উচ্চ ফলনশীল ও কৃষকবান্ধব কৃষি পণ্য উদ্ভাবন করে তা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র কাছে হস্তান্তর করে থাকে। ডিএই তার মাঠ পর্যায়ের ব্লক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে এসব উফশী জাত-এর আবাদ ও উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা। এমনকি এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্লকে প্রদর্শনী প্লট করেও কৃষকদের হাতে কলমে অভিজ্ঞতা বিনিময় করার কথা।
কিন্তু ডালসহ অনেক ফসলের ক্ষেত্রেই তা এখনো কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছেনি। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, ‘দেশে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আর এ লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে’ বলে জানান হয়েছে। মহলটির মতে, ‘গত এক দশকে দেশে ডালের উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। তা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিএই’র প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’ বলে জানান কর্মকর্তাগণ।
গত বছর রবি মৌসুমে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ২০ হাজার ৪৪৩ টন মসুর ডাল উৎপাদন হয়। এছাড়া ২ লাখ ৭ হাজার ৯১৩ হেক্টরে ২ লাখ ৬০ হাজার ৪৯১ টন খেসারী ডাল উৎপাদন হলেও এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টরে ১ লাখ ১৪ হাজার টন খেসারী ডাল উৎপাদন হয়েছে।
এছাড়া গত রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার হেক্টরে উৎপাদিত দু লাখ ৬১ হাজার টন মুগ ডালের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টরে ২ লাখ ৫৩ হাজার টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই’র পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি গত বছর দেশে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টরে ৪৬ হাজার টন ফেলন ডাল, ১০ হাজার হেক্টরে প্রায় ১৪ হাজার টন মটর ডাল ছাড়াও অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ মাসকলাই ডালের আবাদ ও উৎপাদন ছিল যথাক্রমে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর ও ৩৪ হাজার টন। এসব ডাল ফসলেরও একটি বড় অংশই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সারা দেশে গত রবি মৌসুমে ছোলা ডালের আবাদ ও উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ১০৫ হেক্টরে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টনে মত। অথচ দেশে এ ডালের চাহিদা প্রায় ১ লাখ টনের মত।
তবে বিগত রবি মৌসুমে সারা দেশে মাত্র ৩৮০ হেক্টর জমিতে ৪৩৬ টন অড়হড় ডাল উৎপাদন হলেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে তার আবাদ ছিল ১০ হেক্টরেরও কম। অথচ বরিশালসহ সারা দেশেই অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ডালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগণ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ