১০৭ বাংলাদেশির দাসে পরিণত হওয়ার গল্প
০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মুস্তাফিজুর শাহিন যখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে ভানুয়াতুতে পাড়ি জামিয়েছিলেন, তখন তাকে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
শেকদা সোমন নামক এক কোটিপতি বাংলাদেশী উদ্যোক্তার সাথে কাজ করা পরিবর্তে শাহিন আধুনিক যুগের দাসে পরিণত হয়েছিলেন, যেখানে তাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করা হত এবং এমনকি মৃত্যুর হুমকিও দেয়া হত। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সোমনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ১শ’ এরও বেশি বাংলাদেশী। শেকদা সোমন ‘মিস্টার প্রাইস’ নামের একটি আন্তর্জাতিক চেইন এর মালিক হিসাবে নিজেকে জাহির করেছিলেন এবং তার একটি প্রকল্পের অংশ হিসাবে শতাধিক বাংলাদেশীকে ভানুয়াতুতে আনা হয়েছিল। এভাবেই একটি উন্নত জীবন সন্ধান মানুষকে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অভিবাসন এবং দাসত্ব করতে বাধ্য করছে।
শাহিন বা তার মতো অনেকে সতর্ক থাকা সত্ত্বেও প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তারা জনপ্রিয় দক্ষিণ আফ্রিকান খুচরা ফ্যাশন বিক্রেতা মিস্টার প্রাইস সম্পর্কে ভানুয়াতুর স্থানীয় সংবাদপত্রে লেখা নিবন্ধ দেখেছিলেন, যাতে ঘোষণা করা হয়েছিল যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটিতে ‹মিস্টার প্রাইস আসছেন›। এটি সোমন এবং ভানুয়াতুর প্রভাবশালী মন্ত্রীদের নতুন প্রকল্প সম্পর্কে আশাবাদ তুলে ধরেছিল। এই ঘটনাটি দেখায় যে, অপরাধী নেটওয়ার্কগুলি আপাতদৃষ্টিতে বৈধ বিদেশী নিয়োগ কার্যক্রমের ছদ্মবেশে আসছে, এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলি পাচার কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সোমন কর্তৃপক্ষের সন্দেহ না জাগিয়েই শাহিন এবং আরও কয়েক ডজন বাংলাদেশীকে ভানুয়াতুতে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। অনেককে বলা হয়েছিল যে, সোমনের মিস্টার প্রাইস বুটিকগুলিতে কাজ করার জন্য ততারা অস্ট্রেলিয়া, কিউবা বা নিউ ক্যালেডোনিয়ার ফ্রেঞ্চ প্যাসিফিক অঞ্চলে বৈধভাবে ভ্রমণ করবেন। জাল ব্যবসায়িক নথি এবং লাইসেন্স, সেইসাথে ঘুষ পাচারকারীদের ভানুয়াতুতে শুল্ক এবং অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করে দিত।
শেকদা সোমনের লোকরা শাহিনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার কাছ থেকে ১৪হাজার ডলার আদায় করে। তারা তাকে উল্টো ঝুরিলয়ে নির্যাতন করত এবং সেই রক্তাক্ত ছবি বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠানোর গুমকি দিত। একদিন সকালে, শাহিন এবং অন্য দু›জন সোমনের ডেরা থেকে পালিয়ে যায় এবং পথে একটি ভ্যান পেয়ে থানায় পৌঁছায়।
ভানুয়াতুর আদালত ২০২২ সালে সোমন, তার স্ত্রী নাবিলা বিবি এবং দুই সহযোগীকে মানব পাচার, দাসত্ব, অর্থ পাচার, হত্যার হুমকি, শারিরীক নির্যাতন এবং দেশের কর্মসংস্থান আইন লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। সেসময় ভানুয়াতুর প্রধান বিচারপতি ভিনসেন্ট লুনাবেক লিখেছেন, ‘শেকদাহ সোমন ক্রমাগত বলেছেন যে, তিনি তার শিকারদের সাথে কী করতেন, যেমন তাদের গাড়ি চাপা দেয়া, তাদের কেটে টুকরো টুকরো করা, গাছে ঝুলিয়ে রাখা, জঙ্গলে ফেলে আসা এবং একটি বরফের মধ্যে জমিয়ে মারা, অনেক সময় তাদের লাশের ছবি তুলে নিজ নিজ পরিবারের কাছে পাঠানো হবে বলে হুমকি দিতেন।’
সোমন এখন ভানুয়াতুর কারাগারে ১৪ বছরের সাজা ভোগ করছেন। কিন্তু তার নাবিলা বিবি এবং অন্য দুই সহযোগীকে এই বছরের শুরুতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আদালত চার অপরাধীকে ১শ’ ৭ ক্ষতিগ্রস্তকে মোট ১ লাখ ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল, কিন্তু এই পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়নি।
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের ষষ্ঠ বৃহত্তম উৎস হিসাবে স্থান পেয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যয়বহুল নিয়োগকারী বা দালালের উপর নির্ভর করে, যারা বিদেশে সম্ভাব্য কর্মী এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে। এই পরিস্থিতি প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশিকে এইসব নিয়োগ প্রতিনিধিদের দ্বারা পাচারের ঝুঁকিতে ফেলে, যারা বিদেশে ভালো চাকরি এবং উন্নত জীবনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অভিবাসীদের প্রতারণা করে বা শোষণ করে।
শাহিন ছাড়া নিহতদের সবাই বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। যেহেতু, তিনি এই মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষী তাই তার আশঙ্কা যে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার চেষ্টা করলে সোমন এবং তার সহযোগীরা তার ক্ষতি করতে পারে। তিনি ভানুয়াতুতে থাকা নিরাপদ মনে করেন এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে নিয়ে গেছেন। কিন্তু শাহিনের দুর্দশা এখনো শেষ হয়নি। ভানুয়াতুতে তার অভিবাসন প্রক্রিয়া অচলাবস্থায় রয়েছে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে শরণার্থী মর্যাদা অর্জনের জন্য তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে, শাহিন বলেছেন যে, আপাতত তার মাতৃভূমি বাংলাদেশের চেয়ে ভানুয়াতুই বেশি নিরাপদ। সূত্র: আল জাজিরা
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ