এবার আ.লীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত রিয়াজের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
শিক্ষক যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবিতে এবার মানববন্ধন করেছেন রাজধানীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন নারী শিক্ষকরা। মানবন্ধনে ওই শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, রিয়াজের পক্ষ নিয়ে তদন্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। সেই তদন্তের যৌথ নিপীড়ণের বিষয়ে ‘ভিক্টিমদের’ বক্তব্য শোনা হয় নি। ওই তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষকরা মানেন না জানিয়ে তারা পুণরায় তদন্তের দাবি করেছেন।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় রিয়াজকে। একই সঙ্গে কেন দল থেকে স্থায়ী বহিস্কার করা হবে না সে বিষয়েও জবাব চাওয়া হয়েছিল। রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি, রাজধানীর সুত্রাপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাত করেছেন। গতকাল দুপুরে সেই শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকরা এবার রিয়াজের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবিতে রাস্তায় নামলো।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সিনিয়র শিক্ষক হামিদা আক্তার, সহকারী শিক্ষক- আকলিমা আক্তার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, আলেয়া আক্তার, রেখা মন্ডল দিনা প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ ঐতিহ্যবাহী শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসাবে যোগদান করেন। তিনি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে স্কুলে বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাশীল ব্যক্তির দোহাই দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে একটি ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করেন। তার অনৈতিক আচরণে শিক্ষক ও ছাত্রী প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়েছে। এর ফলে এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা কমে যায়। শারিরীকভাবে হেনস্থা হওয়ার ভয়ে অভিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেন না। নারী শিক্ষকরাও যৌন হয়রানির শিকার হয়। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হতে হতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ তোফায়েল আহমদকে কয়েক দফা মৌখিকভাবে জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ওই শিক্ষকরা আরও বলেন, পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে আমরা স্থানীয় এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে অবগত করি। এর পর রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পদ ছাড়লেও রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ ও তার অনুসারী-সহযোগীরা এখনও আমাদের নিয়মিত ভয়ভীতি এবং হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
মানববন্ধনে নারী শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। মাত্র ২ দিনের মধ্যে ওই তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। ওই তদন্ত রিপোর্টে রিয়াজের বিরুদ্ধে তদন্ত না করে উল্টো ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি দিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়। তদন্তকারী ব্যক্তিরা কোথাও শিক্ষকদের আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেনি। যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কথা শোনেননি। তদন্তে রিয়াজ উদ্দিনকে নির্দোষ প্রমাণ করেছে। আমরা এই তদন্ত প্রত্যাখান করছি। আমরা চাই, দূর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, স্থানীয় এমপির প্রতিনিধির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে পুনরায় তদন্ত করা হোক।
ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা আরো বলেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের অনৈতিক কর্মকান্ডের কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, স্থানীয় কাউন্সিলর, গভর্নিং বডির সদস্য, ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকার লোকজন সবাই অবগত আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতি বিজড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করায় রিয়াজকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে আত্মসাৎ করা প্রতিষ্ঠানের অর্থ ফেরত চাই, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জীবনের নিরাপত্তা চাই এবং রিয়াজ কর্তৃক অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুত করার দাবি জানাচ্ছি।
রিয়াজের যৌন হয়রানীর শিকার এমন এক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, আমি যখন স্কুলে থেকে বাড়ি যাই তিনি (রিয়াজ উদ্দিন) আমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফোন দিতো। ফোন দিয়েই তিনি তার সঙ্গে দেখা করে মেলামেশা করার জন্য চাপ দিতো। দেখা না করলে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতিও দেখিয়েছে। এ ছাড়াও তিনি কূরুচিপূর্ণ ভিডিও ফেইসবুকে পাঠাতো।
রিয়াজের বিরুদ্ধে শুধু যৌন হয়রানী নয় অর্থ আতœসাতের অভিযোগও করে আসছেন ওই বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষকরা। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন ওই মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের বরাবর স্মারকলিপি দেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলায় রিয়াজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ