নির্বাচনে চীনপন্থির জয়

ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের দূরত্ব বাড়বে?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

মালদ্বীপ দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে চীনপন্থী বিরোধী প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছে যা দেশটিকে ঐতিহ্যগত মিত্র ভারত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এ নির্বাচন আসলে পর্যটন হটস্পট হিসাবে পরিচিত ছোট দ্বীপপুঞ্জে প্রভাব বিস্তারে ভারত ও চীনের মধ্যে লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল।

বিরোধী দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) দলের নেতা মোহাম্মদ মুইজ্জু, ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার চালিয়েছিলেন এবং এখন তিনি মালদ্বীপের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের বের করে দেয়ার এবং দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী ১৭ নভেম্বর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ‘আজকের ফলাফলের মাধ্যমে আমরা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। মালদ্বীপের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার শক্তি,’ মুইজ্জু তার বিজয়ের পর এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘এখন সময় আমাদের মতভেদকে দূরে সরিয়ে একত্রিত হওয়ার। আমাদের একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ হতে হবে।’ তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট সোলিহকে সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে কারাগার থেকে গৃহবন্দীতে স্থানান্তর করতেও বলেছেন।

মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিএনসিকে ব্যাপকভাবে চীনপন্থী হিসেবে দেখা হয়। ৪৫ বছর বয়সী মুইজ যুক্তরাজ্যে পুরকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে মালদ্বীপের রাজধানী মালের মেয়র তিনি। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের শাসনামলে অবকাঠামো নির্মাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৮ সালে আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইব্রাহিম সলিহ। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ইয়ামিনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরেন মুইজ্জু।

আবদুল্লাহ ইয়ামিনের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকালে চীনের অর্থায়নে মালদ্বীপে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন মুইজ্জু। এসব প্রকল্পের মধ্যে রাজধানী মালের সঙ্গে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের সংযোগকারী সেতু নির্মাণও রয়েছে। ২০ কোটি ডলার ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। শুধু মন্ত্রী থাকাকালেই চীনের সঙ্গে কাজ করেননি মুইজ্জু। এরপরেও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। গত বছর চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দল ক্ষমতায় এলে আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’

ভারতের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রটির বেশির ভাগ মানুষ পছন্দ করেন না। আর এই সুযোগে ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে সফল হয়েছেন মুইজ্জু। তবে মালদ্বীপের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপে সামরিক অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় সেখানে ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ভারতের প্রভাবের কারণে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ।

ভারত মহাসাগরের মাঝখানে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে মালদ্বীপ। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্য দিয়ে যে জাহাজ চলাচলের রুট বা শিপিং লাইনগুলোর মাঝখানে দেশটির অবস্থান। সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনও ছিলেন চীনঘেঁষা। তিনি মালদ্বীপে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ভারতকে প্রত্যাখ্যান করে চীনের কাছ থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিলেন। ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এখন মালদ্বীপে মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার কারণে ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে। সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
কী আছে তৌফিকার লকারে?
চট্টগ্রামসহ সারা দেশের পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধ করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ